ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে আইসিবি

প্রকাশিত: ০৯:১০, ১৭ মার্চ ২০২০

পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে উদ্যোগ নিচ্ছে আইসিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ টানা পতনে থাকা পুঁজিবাজারকে সাপোর্ট দিতে বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ- আইসিবি। এজন্য নিজেদের গৃহীত মেয়াদী আমানতের (টার্ম ডিপোজিট) সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারী মালিকানাধীন বিনিয়োগ কোম্পানিটি। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ আসাদুল ইসলামের কাছে সুদহার নামিয়ে আনার প্রস্তাব-সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন আইসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবুল হোসেন। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে আইসিবিতে ১০ হাজার ৬৭১ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মেয়াদী আমানত রয়েছে। সাধারণত সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকারী ও বেসরকারী ব্যাংক আইসিবিতে মেয়াদী আমানত রাখে। এসব মেয়াদী আমানতের বিপরীতে আইসিবিকে বর্তমানে ৮ থেকে ১২ শতাংশ হারে সুদ দিতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ১ এপ্রিল থেকে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের সুদহার, সরকারী ব্যাংকে সাড়ে ৫ শতাংশ এবং বেসরকারী ব্যাংকে ৬ শতাংশ বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। তবে আইসিবির আমানতে এটি কার্যকরের কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই সরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইসিবিও আমানতে সুদহার সাড়ে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায়। আইসিবি থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবের নিকট পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এবং বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে ১৯৯৮ সালের ১২ জানুয়ারি সম্পাদিত দ্য ক্যাপিটাল মার্কেট ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম লোন এগ্রিমেন্ট (সিএমডিপিএল) চুক্তির ফলে স্টক ব্রোকারেজ, মিউচুয়াল ফান্ড অপারেশনস এবং মার্চেন্ট ব্যাংকিং সংক্রান্ত আইসিবির নতুন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ফলে, সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সঞ্চয় সংগ্রহ করে মার্কেট সাপোর্ট দেয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ব্যবসা পরিচালনার জন্য অন্যান্য প্রতিষ্ঠান হতে গৃহীত মেয়াদী আমানতের (টার্ম ডিপোজিট) ওপর আইসিবিকে নির্ভরশীল হতে হয়। চিঠিতে আরও বলা হয়, দেশের পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ ও ২০১০ সালে বড় ধরনের বিপর্যয় সংঘটিত হয়েছিল। ফলশ্রুতিতে, মার্কেট সাপোর্ট দেয়ার জন্য আইসিবিকে সময় সময় উচ্চ সুদহারে মেয়াদী আমানত (টার্ম ডিপোজিট) সংগ্রহ করতে হয়। বিশেষত ২০১০ সালের উত্থান-পতন পরবর্তী সময়ে ধারাবাহিকভাবে মার্কেট সাপোর্ট এবং বাজার নিম্নমুখী ধারায় শেয়ার বিক্রি করতে না পারায় উচ্চ সুদহারের মেয়াদী আমানতের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্দেশনা ও আইসিবির ন্যায় বৃহৎ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান না থাকায় বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী আইসিবি সিকিউরিটিজ বিক্রি করতে পারেনি। গত ২০০১-০২ অর্থবছরে আইসিবির মেয়াদী আমানত ছিল মাত্র ৪২৪ কোটি টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরের জানুয়ারি শেষে তা দাঁড়িয়েছে ১০ হাজার ৬৭১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। এছাড়া ২০১৭ সালের নবেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক আইসিবিকে সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিট বা একক গ্রাহক ঋণসীমায় অন্তর্ভুক্ত করে। ফলে আইসিবি ব্যাংক হতে নতুন মেয়াদী আমানত (টার্ম ডিপোজিট) সংগ্রহ করতে পারেনি, অধিকন্তু সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিটের অতিরিক্ত মেয়াদী আমানতের কিছু অংশ ফেরত দেয়। তাই আইসিবির মার্কেট সাপোর্ট দেয়ার সক্ষমতা সঙ্কুচিত হয়ে যায় এবং ক্ষেত্র বিশেষ উচ্চ সুদহারে মেয়াদী আমানত নবায়ন করতে হয়। আইসিবি বলছে, ২০১৮ সালের ১৮ জুন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর বরাবর আইসিবিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিঙ্গেল বোরোয়ার এক্সপোজার লিমিট হতে অব্যাহতির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য চিঠি দেন। কিন্তু সেটি আর কার্যকর হয়নি।
×