ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তারাকান্দায় মুজিব কোটের জন্য স্কুলে চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৬ মার্চ ২০২০

 তারাকান্দায় মুজিব কোটের জন্য  স্কুলে চাঁদাবাজি

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ তারাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মুজিব কোটের জন্য চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। আসন্ন মুজিববর্ষের বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের জন্য মুজিব কোট তৈরির কাজে এই চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক নামধারী স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (টিইও) ও উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার (এটিইও) চাঁদার এই টাকা আদায় করছেন। প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আদায় করা চাঁদার এই অঙ্ক ১৫ হাজার ৫০০ টাকা। তারাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নীলুফার হাকীম গত ১০ মার্চ শিক্ষকদের এক সমন্বয় সভায় মুজিব কোটের জন্য চাঁদা আদায়ের নির্দেশনার কথা স্বীকার করে জানান, পরে শিক্ষকরা ঐক্যমত না হওয়ায় চাঁদার এই টাকা আদায় করা যায়নি। ময়মনসিংহের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সফিউল হক এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, মুজিববর্ষের র‌্যালির জন্য মুজিব কোট তৈরির কোন নির্দেশনা নেই। স্থানীয় সূত্র জানায়, তারাকান্দা উপজেলার ফজলুল হক চৌধুরী মহিলা কলেজ মিলনায়তনে গত ১০ মার্চ স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নীলুফার হাকীম আসন্ন মুজিববর্ষের র‌্যালিকে বর্ণাঢ্য করতে শিক্ষার্থীদের মুজিব কোট পরে র‌্যালিতে অংশগ্রহণের নির্দেশনা দেন। এজন্য প্রত্যেক স্কুল প্রধানকে মুজিব কোট তৈরি বাবদ স্কুল লেবেল ইমপ্লিমেন্টেশন প্রজেক্ট-স্লিপ তহবিল থেকে আগাম ১৫ হাজার ৫০০ টাকা হারে চাঁদা দেয়ার নির্দেশ দেন। এরই আলোকে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার সঞ্জয় কুমার বণিক শিক্ষক নামধারী স্থানীয় দালাল দুগাছি স্কুলের এমদাদ, ঢাকুয়া স্কুলের নিজাম, বালিয়াজানা স্কুলের ওবায়দুল হক, রামপুর স্কুলের আনির উদ্দিনসহ ১০-১২ জন শিক্ষক বিভিন্ন স্কুল প্রধানের কাছ থেকে এই চাঁদা আদায় শুরু করেছেন। আগামী ১৫ মার্চের মধ্যে এই চাঁদা জমা দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ১৪২ স্কুলের মধ্যে প্রায় অর্ধশত স্কুল প্রধান বাধ্য হয়ে এই চাঁদা জমা দিয়েছেন। নাম প্রকাশ করা হবে না শর্তে প্রধান শিক্ষকের একটি সূত্র জানান, গত ১৪ মার্চ ডৌহাতলী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক সাব ক্লাস্টার প্রশিক্ষণকালীন সহকারী শিক্ষা অফিসার সঞ্জয় কুমার বণিকের উপস্থিতিতে বালিজানি স্কুলের ওয়বায়দুল হকের কাছে নগদ ১৫ হাজার ৫০০ টাকার চাঁদা জমা দেন গাবরগাতী স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল্লাহ। এর আগে উপজেলা শিক্ষা অফিসার নীলুফার হাকীমের কাছে একই দিনে সরাসরি এই টাকা জমা দেন দুগাছি স্কুলের শিক্ষক এমদাদুল ইসলাম ও বাঁশতলা সরকারী স্কুলের শিক্ষক আরজুদা নাছিম বানু। একই সময়ে ঢাকুয়া স্কুলের শিক্ষক নিজাম উদ্দিনের কাছে ৩ জনের টাকা জমা দেন কেন্দুয়া স্কুলের এক শিক্ষক। কেন্দুয়া স্কুলের ওই শিক্ষক টাকা জমা দিতে গড়িমসি করায় সহকারী শিক্ষা অফিসার গালমন্দসহ হয়রানির হুমকি দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। টাকা লেনদেনের কথা অভিযোগ করলেও মোবাইল ফোনে কথোপকথনের রেকর্ড ছাড়া কোন শিক্ষকের আর কোন প্রমাণ দিতে পারেননি। তারাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল কবীর জানান, সমন্বয় সভায় টিইও মুজিব কোটের জন্য চাঁদার কথা বললেও কোন সাড়া মেলেনি। তারাকান্দা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নীলুফার হাকীম ত্রিশাল উপজেলাতেও চাঁদার টাকায় শিক্ষার্থীদের জন্য মুজিব কোট হচ্ছে উদাহরণ দিয়ে জানান, তারাকান্দায় শিক্ষকদের কোন্দলের কারণেই মুজিব কোটের চাঁদা নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। এ নিয়ে প্রশ্ন উঠায় চাঁদা তুলতে নিষেধ করার কথাও জানান এই শিক্ষা কর্মকর্তা।
×