ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার উদ্যোগ

পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে বিদ্যুত খাতের কর্মপরিকল্পনা

প্রকাশিত: ১১:২০, ১৬ মার্চ ২০২০

  পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে বিদ্যুত খাতের কর্মপরিকল্পনা

রশিদ মামুন ॥ করোনার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বিদ্যুত খাতের কর্মপরিকল্পনা পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। কেন্দ্র, সাবস্টেশন কিংবা লাইন নির্মাণে যেসব কাজ বাংলাদেশের শ্রমিকরা করতে পারবেন সেগুলো এগিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া যেসব কাজে দেশের বাইরের বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন সেগুলো আপাতত রেখে দেয়া হচ্ছে। এভাবে করোনায় ক্ষতি সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখা যাবে বলে মনে করছে বিদ্যুত বিভাগ। বিদ্যুত বিভাগের সচিব ড. সুলতান আহমেদ বলেন, করোনার কারণে দেশের বাইরের প্রকৌশলীদের কেউ কেউ বাংলাদেশে আসতে পারছেন না। তবে যারা রয়েছেন তারা কাজ করছেন। এখন পর্যন্ত আমরা মনে করছি না কোন প্রকল্পের সময় বৃদ্ধি করতে হবে। এজন্য প্রকল্পগুলোর কাজ পুনর্বিন্যাস করা হচ্ছে। অর্থাৎ যেসব কাজ আমরা পারছি সেগুলো করে রাখা হচ্ছে। আর যেসব কাজ বিদেশী প্রকৌশলীদের ছাড়া সম্ভব নয় সেগুলো রেখে দেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, চীনের অনেক প্রকৌশলী আমাদের এখানে কাজ করছেন। চীন করোনা নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। আমরা আশা করছি অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণসহ অন্যান্য কাজে এখন চীনা সাড়ে সাত হাজারের মতো প্রকৌশলী এবং দক্ষ জনবল কাজ করছেন। গত চীনা নববর্ষের সময় এদের অর্ধেকের বেশি চীনা নাগরিক দেশে ছুটি কাটাতে যান। ফেব্রুয়ারির শুরুতে তাদের ফিরে আসার কথা ছিল। করোনার কারণে চীন ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নববর্ষের ছুটি বৃদ্ধি করে। এরমধ্যে বিশ^ব্যাপী নোভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি নাজুক আকার ধারণ করে। সরকার অনএ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দেয়। এর পাশাপাশি চীনা নাগরিকদের বাংলাদেশে প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করে বিদ্যুত বিভাগ। ফলে অনেক চীনা প্রকৌশলী আর বাংলাদেশ ফিরতে পারেননি। বিদ্যুত জ্বালানি এবং খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ সম্প্রতি জানান, সব মিলিয়ে বিদ্যুত জ¦ালানিতে সাড়ে সাত হাজার চীনা নাগরিক কাজ করছেন। ঝুঁকি মোকাবেলা করতে আমরা চীনা নাগরিকদের দেশে আগমনের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেছি। তবে তিনি মনে করেন অচিরেই এই সমস্যার সমাধান হবে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, দেশের সব থেকে বড় বিদ্যুত কেন্দ্র পায়রা-এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের পরীক্ষণ চলছিল। কিন্তু পরীক্ষণের সমর যেসব প্রকৌশলীদের প্রয়োজন ছিল তাদের একটি অংশ চীনে আটকে গেছে। ফলে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। জানতে চাইলে বিদ্যুত সচিব বলেন, পায়রায় ৩০/৩৫ জনের ভিসা প্রয়োজন। যাদের সকলে চীনে রয়েছেন। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি চীন থেকে নরিনকো পাওয়ারের দুইজন কর্মী বাংলাদেশে আসেন। এই কর্মীরা বিমান বন্দর থেকে বাঁধাহীনভাবে পটুয়াখালী চলে যান। বিদ্যুত কেন্দ্রটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠার আরপিসিএল এ সম্পর্কে কিছুই জানতো না। পরে তারা কাজে যোগ দিলে খবরটি প্রকাশ পায়। এরপর তাদের পৃথক করে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। পটুয়াখালীতে আরপিসিএলও একটি এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণসহ বিদ্যুতের সঞ্চালন এবং বিতরণে বড় প্রকল্প রয়েছে চীনাদের হাতে। এরমধ্যে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডিপিডিসি) এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এ চীনা বিনিয়োগে বড় প্রকল্প রয়েছে। এই প্রকল্পগুলোও করোনাতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই বাড়তি সুবিধা চাইছেন। যেসব কেন্দ্র নির্মাণে খুব বেশি অগ্রগতি নেই তারাও করোনার দোহাই দিয়ে সময় বৃদ্ধির আবেদন নিয়ে আসছেন। এমন দেশ এই আবেদন করছেন যেখানে করোনার প্রকোপ ভয়াবহ নয়। ওই কর্মকর্তা বলেন, আমরা কাদের কাছে জানতে চেয়েছি কেন এমন আবেদন করছেন। তারা আমাদের বলেছে করোনার কারণে তাদের শ্রমিক আসতে পারছে না। এর ফলে একটি মহল যাদের কর্মদক্ষতায় ঘাটতি ছিল তারাও সময় বৃদ্ধির আবেদন করছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে জরিমানা গুনতে হয়। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই কাজে বিঘœ ঘটছে বলে কেউ কেউ বাড়তি সময় চাইছেন। তবে যেসব কোম্পানিতে করোনা কোন প্রভাব ফেলবে না তাদের সময় বৃদ্ধি করা যৌক্তিক নয় বলে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান। বিদ্যুতের বাইরে জ্বালানি খাতে সাগর থেকে পাইপ লাইনে তেল পরিবহনে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি এবং মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পে চীনা শ্রমিকরা কাজ করছেন।
×