ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ ৮৮তম জন্মদিন

সুর ও সংস্কৃতির শক্তিতে অসুরের বিরুদ্ধে লড়েছেন ওয়াহিদুল হক

প্রকাশিত: ১১:১৮, ১৬ মার্চ ২০২০

 সুর ও সংস্কৃতির শক্তিতে অসুরের বিরুদ্ধে লড়েছেন ওয়াহিদুল হক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমৃত্যু সংস্কৃতির শাণিত হাতিয়ারকে সঙ্গী করে পথ চলেছিলেন ওয়াহিদুল হক। সুর ও সংস্কৃতির শক্তিতে ভর করে লড়েছেন অশুরের বিরুদ্ধে। স্বপ্ন দেখেছেন অসাম্প্রদায়িক চেতনায় ঋদ্ধ সম্প্রীতিময় ও কল্যাণকামী বাংলাদেশের। সেই লক্ষ্যে কাজ করেছেন সৃজনশীল ও মননশীল সমাজ গড়ার আকাক্সক্ষায়। এই বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিক ও সংগঠকের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী ও ৮৮তম জন্মদিন আজ সোমবার। ১৯৩৩ সালের ১৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন এই কীর্তিমান মানুষটি। দেশের সংস্কৃতিচর্চার পথ নির্মাণের অগ্রপথিক ছিলেন ওয়াহিদুল। সাংবাদিকতা পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তার সবচেয়ে বড় অবদান সংস্কৃতির ক্ষেত্র প্রস্তুত করা। বাঙালিত্বের গর্ব নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জন্য আজীবন মানুষ গড়েছেন, সংঘবদ্ধ করেছেন, পথ দেখিয়েছেন ওয়াহিদুল হক। তিনি ছিলেন বাংলার মানুষের শিক্ষা-সংস্কৃতি ও মননের আজীবন সঙ্গী। ষাটের দশকের গোড়াতে ছায়ানট আন্দোলন ও একে স্থায়ী প্রতিষ্ঠানে রূপদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ১৯৬১ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং ১৯৯৯ থেকে আমৃত্যু সহ-সভাপতি ছিলেন। এছাড়াও আবৃত্তি প্রতিষ্ঠান ‘কণ্ঠশীলন’, মৃত্যুর কিছুদিন আগে গড়ে তোলা ‘নালন্দা’ প্রতিষ্ঠা এবং তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর ওপর প্রতিষ্ঠা করা ওয়াহিদুল হকের অনন্য কীর্তি। এর পাশাপাশি তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ গঠন করে সারাদেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চায় মানুষকে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটান তিনি। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্রতচারী সমিতির সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ আবৃত্তি ফেডারেশনের (পরে আবৃত্তি সমন্বয় পরিষদ) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং একাত্তরে স্বাধীন বাংলা শিল্পী সংস্থার অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন। আবৃত্তি সংগঠন কণ্ঠশীলনের সঙ্গে তিনি আমৃত্যু যুক্ত ছিলেন। সঙ্গীতে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৮ সালে ওয়াহিদুল হককে মরণোত্তর একুশে পদক প্রদান করা হয়। শিল্পকলায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে প্রদান করা হয় স্বাধীনতা পুরস্কার। ওয়াহিদুল হক কর্মজীবনে অবজারভারের শিফট-ইন-চার্জ, ডেইলি স্টারের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। দি পিপল পত্রিকায় সম্পদনা বিভাগে কাজ করেছেন। নিউ ন্যাশন ও মর্নিং নিউজেও তিনি কাজ করেন। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের খ-কালীন শিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন। জীবনের শেষ দিকে ‘অভয় বাজে হৃদয় মাঝে’ ও ‘এখনও গেল না আঁধার’ শিরোনামে নিয়মিত কলাম লিখেছেন দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের কাগজ পত্রিকায়। ওয়াহিদুল হকের পুরো নাম আবুল ফারাহ মোহাম্মদ ওয়াহিদুল হক। ১৯৩৩ সালের ১৬ মার্চ ঢাকার কেরানীগঞ্জের তারানগর ইউনিয়নের ভাওয়াল মনোহরীয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবু তৈয়ব মাজহারুল হক ও মা মেওয়া বেগম। ১৯৫০ সালে তিনি আরমানিটোলা গবর্নমেন্ট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। পরে ঢাকা কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৫৬ সালে রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী, সঙ্গীতজ্ঞ ও বর্তমানে ছায়ানটের সভাপতি সন্জীদা খাতুনকে বিয়ে করেন। তাদের সন্তানরা হলেন অপালা, রুচিরা ও পার্থ। পরবর্তীকালে তিনি সঙ্গীতশিল্পী ফ্লোরা আহমেদকে বিয়ে করেন। এ পক্ষের ছেলের নাম এষণ। ২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ওয়াহিদুল হক।
×