ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালি ফেরতরা আশকোনা ও পূবাইলে

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১৬ মার্চ ২০২০

 ইতালি ফেরতরা আশকোনা ও পূবাইলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইতালি থেকে রবিবারও দেশে ফিরেছেন ১৫২ প্রবাসী বাংলাদেশী। সকাল ৮টা ২০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসব বাংলাদেশী পৌঁছান। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাদের আশকোনার হজক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এনিয়ে দু’দিনেই শুধু ইতালি থেকেই ফিরেছেন ৪১১ যাত্রী। তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলক থাকতে হচ্ছে আশকোনা হজক্যাম্প ও পূবাইলে নবনির্মিত কোয়ারেন্টাইন হাউজে। এদিকে রবিবার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইনে থাকা বাহরাইন ফেরত এক যাত্রী পালিয়ে গেছেন। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না সেই পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের প্রস্তুতির মধ্যে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেছেন এক রোগী। বাহরাইন প্রবাসী ওই ব্যক্তি জ্বর, সর্দি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়েছিলেন বলে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ উত্তম কুমার বড়ুয়া জানিয়েছেন। রবিবার সকালে তার বিষয়ে করণীয় নিয়ে চিকিৎসকদের বৈঠকের মধ্যেই ৭ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি পালিয়ে যান। শাহজালাল বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন তৌহিদ উল আহসান বলেন, ইতালি ফেরত ১৫২ জনকে সরাসরি আশকোনা হজক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে। এর আগে শনিবার সকালে প্রথমে ১৪২ জন, পরে বিকেলে ৫৯ জন ইতালি থেকে আসেন। এরপর মধ্যরাতে আসেন ৫৮ জন। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরও জানিয়েছে, বিদেশ থেকে আসাদের প্রথমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পর করোনাভাইরাসের লক্ষণ ও উপসর্গ না থাকলে বিদেশ ফেরত যাত্রীরা বাড়ি যেতে পারবেন। তবে বাড়িতে পৌঁছে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতেই হবে। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, দেশে ফেরার পর প্রথমে থার্মাল স্ক্যানারের মাধ্যমে তাদের দেহের তাপমাত্রা দেখা হয়। পরে ইমিগ্রেশন কাউন্টারে তাদের হেলথ কার্ড দেখে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করা হয়। এরপর বিআরটিসির চারটি বাসে করে তাদের নেয়া হয় হজক্যাম্পে। রবিরার রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত হজক্যাম্পেই তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছিল। এদিকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল থেকে পালিয়ে সম্পর্কে ডাঃ উত্তম কুমার সাংবাদিকদের বলেন, আমরা তার বিষয়টি নিয়ে মিটিং করছিলাম। আমরা ডিজি মহোদয় (স্বাস্থ্য অধিদফতর) ও আইইডিসিআরের পরিচালক মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আইইডিসিআরের ডিরেক্টর তার টিম পাঠাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ওই রোগী পালিয়ে গেছে। এখন তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে যখন বুঝতে পেরেছে, তাকে আমরা ওই দিকে পাঠাব- এটা বুঝতে পেরে সে পালিয়ে গেছে। সঙ্গে তার স্ত্রী ছিল। করোনাভাইরাসের পরীক্ষা করানোর সিদ্ধান্ত নিলেও এই রোগে তার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তেমন নেই। কেননা ওই ব্যক্তি ১৮ জানুয়ারি বাহরাইন থেকে দেশে আসেন। তার সেখানে নোভেল করোনাভাইরাস পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে ৬ ফেব্রুয়ারি। সে এখন শ্বাসকষ্টের কথা বলছে। হয়ত নিউমোনিয়ায় ভুগছে। এর আগে গত ১০ মার্চ করোনাভাইরাস আক্রান্ত কি না পরীক্ষা করতে বলায় সিলেটে একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে সৌদি আরব প্রবাসী এক নারী পালিয়েছিলেন। তবে পরে খোঁজ নিয়ে সিভিল সার্জন অফিসের লোকজন ওই নারীর বাসায় গিয়ে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অনুরোধ করলেও তিনি রাজি হননি। রবিবারই নোভেল করোনাভাইরাসের লক্ষণ রয়েছে সন্দেহে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকে একজনকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, ইতালি থেকে যারা ফিরেছেন তাদের সবাইকে প্রাথমিকভাবে হিট ডিটেক্টর দিয়ে সবার তাপমাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর দেয়া হবে হেলথ কার্ড। সেখানে তারা কোথায় ভ্রমণ করেছেন এবং কোন ধরনের শারীরিক সমস্যা আছে কি-না সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেবেন। পরে প্রাথমিকভাবে তাদের আশকোনা হজক্যাম্পে অস্থায়ী কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। তারপর পর্যায়ক্রমে পাঠানো হবে হোম কোয়ারেন্টাইন ও স্পেশাল কোয়ারেন্টাইন। এদিকে গতকাল বিমানবন্দরে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তৌহিদ উল আহসান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে ফ্লাইট সংখ্যা দিনে গড়ে ৩০টি কমেছে। আগে যেখানে গড়ে প্রতিদিন ৮০টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাংলাদেশে আসত, এখন ৫০টি ফ্লাইট আসছে। সেটা আরও কমে আসতে পারে।
×