ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোয়ারেন্টাইনই রক্ষাকবচ

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৬ মার্চ ২০২০

 কোয়ারেন্টাইনই রক্ষাকবচ

নিখিল মানখিন ॥ বাংলাদেশকে করোনা থেকে রক্ষা করার একমাত্র রক্ষাকবচ যথাযথ কোয়ারেন্টাইন। ইউরোপসহ করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে আগত যাত্রীদের শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করাই সরকারের সামনে প্রধান চ্যালেঞ্জ। নানা উদ্যোগ থাকলেও এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেশ কিছু ঘাটতির খবর পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে হোম কোয়ারেন্টাইনের শর্ত শতভাগ পালিত হচ্ছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। আক্রান্ত দেশগুলো থেকে আগত কোয়ারেন্টাইনে থাকা যাত্রীদের সার্বক্ষণিক নজরদারির বিষয়টি খুব একটা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে না পারলে এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার আর কোন উপায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টিতে জোর দেয়া হচ্ছে। রবিবার সরকারের পক্ষ থেকে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, পারিবারিক কোয়ারেন্টাইন না মানলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করাতে বাধ্য করা হবে। রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা তার নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আক্রান্তদের পেছনে বিদেশ ফেরত মানুষ বাহক হিসেবে ভূমিকা রাখছে। বিদেশ ফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার বিষয়ে কোন আপোস নেই। কোয়ারেন্টাইন যত বেশি নিশ্চিত করা যাবে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি হ্রাস পাবে। সরকারী হিসাব অনুযায়ী সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মোট ২৩১৪ জন। বেসরকারী হিসাব মতে আক্রান্ত দেশগুলো থেকে গত সাত দিনে ফিরেছেন আরও বেশি মানুষ। তাদের কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা না গেলে ঝুঁকি থেকেই যাবে। বর্তমানে বিদেশফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে প্রথমে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ বা ‘প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে’ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। দেশে আগত যাত্রীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর না করে সরকারী প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে যাত্রীদের নাম-ঠিকানা অনুযায়ী পাঠিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এতে আগত যাত্রীদের ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকছে না। তবে বিদেশফেরত মানুষকে আন্তরিকতা এবং এলাকার মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না বলে মনে করেন অধ্যাপক ফ্লোরা নিজেও। বিশ্বে করোনা ছড়িয়েছে একমাত্র সীমান্ত অতিক্রমকারী যাত্রীদের মাধ্যমে। প্রথমে চীন তার পর ইতালি, ইরান, দক্ষিণ কোরিয়াসহ সারাবিশ্বে। বাংলাদেশেও এ পর্যন্ত পাওয়া গেছে পাঁচজন যাদের ইতিহাস ইউরোপ থেকে আগত যাত্রী। এই বাস্তবতায় বিশ্বের সকল দেশ বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ সরকার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যারা এখন পর্যন্ত দেশে পৌঁছে গেছেন তাদের কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে সার্বক্ষণিক নজরদারি এখন করোনা ঠেকানোর প্রধান শর্ত। এর বাইরেও পাবলিক সমাবেশ নিরুৎসাহিত করা, নিজ নিজ পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দেয়ায় জন্য মানুষকে সচেতন করা ইত্যাদি কাজ অনেকটাই সফলভাবে চলছে। গত কয়েক দিনে ইতালি থেকে ফিরেছেন বেশ কিছু বাংলাদেশী নাগরিক। ইতালির বিভিন্ন শহরে সেলফ কোয়ারেন্টাইনে আটকে আছেন অনেক বাংলাদেশী। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইতালির আজকের এই দুর্যোগের মূল কারণ চীন থেকে আগত যাত্রী। চীনের সঙ্গে ইতালির ব্যবসা বাণিজ্যের সম্পর্ক বেশ বিস্তৃত। প্রচুর ইতালিয়ান নাগরিক চীন ভ্রমণ করেন। করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরও ব্যবসা বাণিজ্যের কারণে তারা চীন সফর করেছেন। অনেকে দীর্ঘদিন ধরে চীনে অবস্থান করে করোনার প্রাদুর্ভাব হওয়ার পর ইতালি ফিরেছেন। প্রথম দিকে চীন ফেরত নাগরিকদের কোয়ারেন্টাইনের বিষয়টি খুব একটা গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়নি। যার পরিণতি আজকের এই বিপর্যয়। ইরান, স্পেন এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় করোনা ছড়িয়েছে একই কারণে। বাংলাদেশে শুরু হয়েছে এই কারণেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। যারা করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে ফিরেছেন এমন প্রত্যেকটি নাগরিককে চিহ্নিত করে যথাযথভাবে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। সেব্রিনা ফ্লোরার ব্রিফিং পারিবারিক কোয়ারেন্টাইন না মানলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন করাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে বলে বিদেশফেরত প্রত্যেকজনকে সতর্ক করে দিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি বলেন, বিদেশফেরত প্রত্যেকের জন্য হোম কেয়ারেন্টাইন বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত আক্রান্তদের পেছনে বিদেশফেরত মানুষ বাহক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। তাই বিদেশফেরতদের কোয়ারেন্টাইনে যাওয়ার বিষয়ে কোন আপোস নেই। বর্তমানে বিদেশফেরত প্রত্যেক যাত্রীকে প্রথমে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ বা ‘প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন’ এ রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে। দেশে আগত যাত্রীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর না করে সরকারী প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে যাত্রীদের নাম-ঠিকানা অনুযায়ী পাঠিয়ে দিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ করে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা হচ্ছে। এতে আগত যাত্রীদের ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকছে না। তবে বিদেশফেরত মানুষের আন্তরিকতা এবং এলাকার মানুষের অংশগ্রহণ না থাকলে শতভাগ কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে না। হোম কোয়ারেন্টাইন যত বেশি নিশ্চিত করা যাবে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা তত বেশি হ্রাস পাবে। ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, সারাদেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন মোট ২৩১৪ জন। এখানে দেশের ৮টি বিভাগের সব ক’টি জেলার মানুষ রয়েছে। তারা সবাই বিদেশে থেকে এসেছেন। তাছাড়া আজকে ইতালিসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেকে এসেছেন। তারা এখন হাজী ক্যাম্পে আছেন। গতকাল রাতে আসা প্রবাসীদের মধ্যে গাজীপুরে আছেন ৪৮ জন। হাজী ক্যাম্পে ৭২ জন ছিলেন। তাদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রশাসনের মাধ্যমে বাড়িতে পাঠানো হয়েছে। তারা যেন হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করতে পারে। রবিবার সকালে আসা বিদেশফেরত ১৫২ জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য হাজী ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। নেগেটিভ কিছু পাওয়া না গেলে প্রশাসনের মাধ্যমে তাদেরও হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেয়া হবে। অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা আরও জানান, ২৪ ঘণ্টায় ২০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। সর্বমোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ২৩১ জনের। এদের মধ্যে দুইজন করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) শনাক্ত হয়েছে। তারা হাসপাতালে আইসোলেশনে আছে। আক্রান্ত দুইজনই পুরুষ। তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৩০ বছর । অন্য একজনের বয়স ৪০ বছরের বেশি। এক ব্যক্তির ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ রয়েছে। বর্তমানে তারা ভাল আছেন। এখন পর্যন্ত ১০ জন হসপিটালের আইসোলেশনে আছে। এছাড়া ৪ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছে। কোয়ারেন্টাইন কি করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন এমন সন্দেহে থাকা ব্যক্তিদের আলাদা করে রাখার নামই কোয়ারেন্টাইন। এ সম্পর্কে একটি নির্দেশনা রয়েছে আইইডিসিআরের। এতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (আইএইচআর-২০০৫) এর আর্টিকেল ৩২ অনুসারে, যে সব দেশে কোভিড-১৯ এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে সে সব দেশ থেকে যে সব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশী-বিদেশী যে কোন নাগরিক), দেশে শনাক্তকৃত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাদের কোন শারীরিক উপসর্গ নেই, তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছায় গৃহ কোয়ারেন্টাইন পালন করার জন্য নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলো মেনে চলতে হবে। আলো বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকতে হবে এবং অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। তা সম্ভব না হলে, অন্যদের থেকে অন্তত ১ মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকতে হবে। ঘুমানোর জন্য ব্যবহার করতে হবে পৃথক বিছানা। যদি সম্ভব হয় তাহলে ব্যবহার করতে হবে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট। সম্ভব না হলে, অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমিয়ে ও ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে তবে শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে এবং ভালভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। কারো সঙ্গে কোন পশু-পাখি রাখা চলবে না। আইইডিসিআর আরও জানায়, অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থকতে হবে। মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ব্যবহার করতে হবে নতুন মাস্ক। মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলতে হবে এবং সাবান পানি দিয়ে ভালভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে। সাবান ও পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে (বিশেষ করে যদি হাত দেখতে নোংরা লাগে সাবান-পানি ব্যবহার করতে হবে)। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে। অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা যাবে না। সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলতে হবে। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে/গামছা ব্যবহার করতে হবে এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলতে হবে। মেনে চলতে হবে কাশি শিষ্টাচার। হাঁচি কাশির সময় টিস্যু পেপার/ মেডিক্যাল মাস্ক/ কাপড়ের মাস্ক/বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখতে হবে এবং ওপরের নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করতে হবে। টিস্যু পেপার ও মেডিক্যাল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলা জরুরী। খাওয়ার বাসনপত্র- থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারো সাথে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করা যাবে না। এ সকল জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। কখন কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোয়ারেন্টাইন শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্ত মতে একজন হতে অন্যজনের কোয়ারেন্টাইনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন। কোয়ারেন্টাইন পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্দেশাবলী বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং যার দীর্ঘমেয়াদী রোগসমূহ (যেমন- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, এ্যাজমা প্রভৃতি) নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে আছেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোন অতিথিকে দেখা করতে দেবেন না। আর কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে, খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাবার আগে, টয়লেট ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে, যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হয় তখন পরিচর্যাকারী ওপরের নিয়মে দুই হাত পরিষ্কার করতে হবে। খালি হাতে ওই ঘরের কোন কিছু স্পর্শ করবেন না। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এ সকল আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন। ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সকল পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন। পরিষ্কারের জন্য ১ লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন ও ওই দ্রবণ দিয়ে উক্ত সকল স্থান ভালভাবে মুছে ফেলুন। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান/কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং পরে ভালভাবে শুকিয়ে ফেলুন। নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মল-মূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন। কোয়ারেন্টাইনে থাকা ব্যক্তির জন্য বিশেষ নির্দেশনা যদি কোয়ারেন্টাইনে থাকাকালীন কোন উপসর্গ দেখা দেয় (১০০ ডিগ্রী ফারেনহাইট/৩৮ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রা, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) তবে অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বরে (০১৫৫০০৬৪৯০১-৫, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯৩৭-১১০০১১, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯২৭-৭১১৭৮৪, ০১৯২৭-৭১১৭৮৫) অবশ্যই যোগাযোগ করুন এবং পরবর্তী করণীয় জেনে নিন। সারা দেশের চিত্র বিশ্বের করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে আসা সকল যাত্রীর জন্য হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যবাধকতা করা হয়েছে। ফলে বেড়েই চলেছে হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া বিদেশফেরত মানুষের সংখ্যা। রবিবার দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদনেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় কোয়ারেন্টাইনে থাকার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। রাজশাহীতে হোম কোয়ারেন্টাইনে ৯৫ জন রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় রবিবার পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে ৯৫ জনকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তারা সবাই বিদেশ ফেরত। তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রাজশাহী বিভাগের পরিচালক ডাঃ গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য। মানিকগঞ্জে ২৪৭ জন নতুন করে ২৬ জনসহ মানিকগঞ্জে ২৪৭ জন বিদেশফেরতকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। রবিবার হোম কোয়ারেন্টাইন শেষে ২১ জনকে মুক্ত করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে বলা হয়েছে। হোম কোয়ারেন্টাইন থাকার নির্দেশ অমান্য করলে তাদের প্রাতিষ্ঠনিক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দফতরের সম্বয়ে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে বলে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সদস্যসচিব সিভিল সার্জন আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান। নীলফামারীতে ৬ জন চীন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া থেকে নীলফামারী জেলায় ফেরত আসা আরও ৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারীর ডোমার উপজেলায় ৫ জন ও সৈয়দপুর উপজেলায় ১ জন রয়েছেন। গোপালগঞ্জে ১১ জন করোনা সন্দেহে গোপালগঞ্জে ১১ প্রবাসীকে হোম-কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা প্রত্যেকে সুস্থ আছেন। এখনও পর্যন্ত কারও কোন সমস্যা পাওয়া যায়নি বলে রবিবার সকালে জেলার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নিয়াজ মোহম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। বগুড়ায় ২৪ জন বগুড়ায় রবিবার পর্যন্ত বিদেশ থেকে আসা ২৪ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তারা ইতালি, কুয়েত, ওমান, সৌদি আরব, মালোয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও দিল্লী থেকে এসেছেন। চাঁদপুরে ৬৪৮ জন করোনাভাইরাসের শঙ্কায় বিদেশফেরত ৬৪৮ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে চাঁদপুর জেলা ও উপজেলা প্রশাসন। জেলা সদর ও উপজেলা পর্যায়ে ১শ’ বেডের আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এছাড়াও অতিরিক্ত হিসেবে প্রত্যেক উপজেলায় একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক হোটেল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ময়মনসিংহে ৮ জন ময়মনসিংহে বিদেশফেরত আট জন হোম কোয়ারেন্টাইনে। এদের মধ্যে ময়মনসিংহ সদরে ইতালিফেরত চারজন, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় সৌদি আরবফেরত দুইজন ও গফরগাঁওয়ে কোরিয়া ফেরত দুইজন। ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন ডাঃ এবিএম মশিউল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করে জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ময়মনসিংহে ১০০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ভোলায় ১ জন ভোলায় ইতালিফেরত এক যুবককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর আগে ইতালিফেরত আরেক যুবক কোয়ারেন্টাইন শেষ করে মুক্ত হয়েছেন বলে ভোলা সিভিল সার্জন ডাঃ রতন কুমার ঢালী জানিয়েছেন। করোনা মোকাবেলায় ভোলা সদর হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি পৃথক করোনা আইসোলেশন ইউনিটে এখন পর্যন্ত সন্দেহজনক কোন রোগী নেই বলে জানান, ভোলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সিরাজ উদ্দিন । ফেনীতে ৬৬ জন ফেনীতে গত ২ দিনে আগত ১৪ প্রবাসীসহ তাদের সংস্পর্শে আসা ৬৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ সাজ্জাদ হোসেন। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ৩০ বেড, ফেনী অব্যবহৃত ট্রমা সেন্টারে ৩০ বেড, সোনাগাজীর মঙ্গলকান্দি ২০ শয্যা স্বাস্থ্য কমúেøক্সে ২০ বেডসহ ৫টি উপজেলা স্বস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ বেড করে ২৫ বেড আইসোলেশন ওয়ার্ডের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে। মাদারীপুরে ১৭৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ইতালি ফেরত মাদারীপুরের একজন ঢাকার আইসোলেশনে চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। এছাড়া বিভিন্ন দেশ থেকে আসা প্রবাসীদের মধ্যে রবিবার দুপুর পর্যন্ত ১৭৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শফিকুল ইসলাম।
×