ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

একসঙ্গে মহামারী মোকাবেলা করতে হবে ॥ শেখ হাসিনা;###;তহবিল গঠনের প্রস্তাব মোদির

সার্কে একাট্টা হোন ॥ করোনা মোকাবেলা

প্রকাশিত: ১০:৪৮, ১৬ মার্চ ২০২০

সার্কে একাট্টা হোন ॥ করোনা মোকাবেলা

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আতঙ্কিত না হয়ে একাট্টা হয়ে আঞ্চলিকভাবে উদ্যোগ নেয়ার বিষয়ে একমত পোষণ হয়েছেন সার্কভুক্ত দেশগুলোর সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা। তারা বলেছেন, সব দেশ একসঙ্গে কাজ করলে তবেই এই ভাইরাস সফলভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব হবে। বিশ্বব্যাপী মহামারীর আকার নেয়া করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এক হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি মোকাবেলায় ও নাগরিকদের রক্ষা করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ‘শক্তিশালী কৌশল’ তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বানও জানান। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রাণসংহারক নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ভারত এক কোটি ডলার দিয়ে এই তহবিলের শুরুটা করতে পারে। এই তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলেও প্রস্তাব দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী। সার্কভুক্ত অন্য দেশের নেতারাও এক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর জোর দেন এবং এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে দ্রুত উপায় খোঁজার তাগিদ দেন সার্কভুক্ত দেশগুলোকে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় নির্ধারণে রবিবার সার্কভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের এক ভিডিও কনফারেন্সে একসঙ্গে এই ভাইরাস মোকাবেলার ব্যাপারেও একমত পোষণ করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনুষ্ঠিত এই ভিডিও কনফারেন্সে তারা এ বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে নিজেদের অভিমত তুলে ধরেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উদ্যোগে আয়োজিত এই ভিডিও কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও যোগ দেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী লোটে শেরিং, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ, শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসে, আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা জাফর মির্জা। একটি শক্তিশালী কৌশল তৈরি করুন- শেখ হাসিনা ॥ গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সার্কভুক্ত দেশগুলোকে এই অঞ্চলের মারাত্মক করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য একটি ‘শক্তিশালী কৌশল’ তৈরি এবং নিবিড়ভাবে পারস্পরিক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এই জনস্বাস্থ্যের হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য সার্কের ব্যাপক কৌশল অবলম্বন করা দরকার। তিনি বলেন, এই মহামারী মোকাবেলার জন্য সকল সার্কভুক্ত দেশকে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা এবং সহায়তা করা দরকার। আমাদের সম্মিলিত সক্ষমতা, দক্ষতা এবং সম্পদের সাহায্যে এই সহযোগিতা তৈরি করতে হবে। সম্মিলিতভাবে করোনা মহামারী মোকাবেলা করে সার্কভুক্ত দেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এ মহামারী মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশগুলোকে সহযোগিতা ও সমন্বিত হয়ে কাজ করতে হবে। সমন্বয় করতে হবে আমাদের সম্মিলিত সামর্থ্য, অভিজ্ঞতা ও সম্পদ। লজিস্টিক সাপোর্টসহ সক্ষমতা, অভিজ্ঞতা এবং কার্যক্রম সার্কভুক্ত দেশগুলোর সঙ্গে শেয়ার করতে বাংলাদেশ প্রস্তুত। তিনি বলেন, আমাদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে, বর্তমান বিশ্বে আমরা সবাই সবার সঙ্গে সংযুক্ত। তাই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো সমস্যাগুলো মোকাবেলায় আমাদের নিবিড়ভাবে সম্মিলিত হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবেলায় সার্কভুক্ত দেশের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে কার্যকর ভিডিও কনফারেন্স আয়োজনের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদও জানান। প্রধানমন্ত্রী সার্ক দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিবদের নিয়ে এমন একটি ভিডিও কনফারেন্সের প্রস্তাব দেন, যাতে সবাই অভিজ্ঞতা বিনিময় করতে পারেন। জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি প্রতিরোধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো যেন একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সেজন্য একটি ইনস্টিটিউট গড়ে তোলারও প্রস্তাব দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেন ভবিষ্যতে কোন সমস্যা দেখা দিয়ে আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারি। বাংলাদেশ এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে পারে, যদি আপনারা একমত হন। আর একটি ফোরাম গঠন করা যেতে পারে। আমরা আমাদের বিশেষজ্ঞদের শেয়ার করতে প্রস্তুত আছি। লজিস্টিক সাপোর্ট দেব, যদি প্রয়োজন হয়। প্রধানমন্ত্রী সার্কভুক্ত সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের উদ্দেশ্য করে আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের সঙ্গে যোগাযোগের অপেক্ষায় আছি, সম্মানিত মহোদয়গণ, যেমনটি প্রয়োজন এবং আশাকরি সম্মিলিতভাবেই আমরা এই মহামারী পরিস্থিতিতে আমাদের জনগণের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।’ এ ধরনের সংলাপ কারিগরি পর্যায়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী, স্বাস্থ্য সচিব এবং প্রাসঙ্গিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও এই জাতীয় ভিডিও কনফারেন্সের সাহায্যে সহযোগিতার নির্দিষ্ট ক্ষেত্রগুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারেন। ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালককে এই ভিডিও কনফারেন্সে আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় (পৃথক অবস্থায়) ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে চীনের উহান থেকে ২৩ জন বাংলাদেশী শিক্ষার্থীকে আনার এবং হোস্টিংয়ের জন্য ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। তিনি করোনা বিস্তাররোধে তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশ সমস্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, সমুদ্র বন্দর ও স্থলবন্দরগুলোতে শক্তিশালী নজরদারি ও কঠোর চেক-আপের মাধ্যমে ভাইরাসটির প্রবেশ সফলতার সঙ্গে বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে মাত্র ৩টি কোভিড-১৯ আসার ঘটনা রয়েছে (বিদেশ থেকে আক্রান্ত হয়ে আসা)। তারা ইতোমধ্যেই সেরে উঠেছেন। ইউরোপ থেকে আরও দুটি আক্রান্ত ব্যক্তির আগমনের (করোনা ভাইরাস আক্রান্ত) ঘটনা ঘটেছে। আমাদের এখানে কোন কোভিড-১৯ সংক্রমণ স্থানীয় বা সম্প্রদায় পর্যায়ে ঘটেনি। তিনি বলেন, তার সরকার সকল স্তরের সকল মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা প্রদানের জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াসহ সকল মিডিয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশের সর্বত্র ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচার চালাচ্ছি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, তার দলের কর্মীরা সকল স্তরে সচেতনতা বাড়াতে সক্রিয়, অন্যদিকে স্থানীয় সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রয়োজনে হোম কোয়ারেনটাইন (পৃথক ব্যবস্থা) প্রয়োগ করতে সচেতন। সরকার ঢাকায় কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালসহ নবনির্মিত চারটি হাসপাতাল প্রস্তুত রেখেছে। এরসঙ্গে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতেও একটি হাসপাতাল রয়েছে। এছাড়াও আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় আমরা সকল জেলা হাসপাতালগুলোতে পৃথক শয্যার ব্যবস্থা রেখেছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এমন কিছু ফাঁকা ভবন চিহ্নিত করা হয়েছে যেখানে প্রয়োজনে সাময়িক হাসপাতাল তৈরি করেও চিকিৎসা চলতে পারে। আমরা উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং স্কুলের ছেলে-মেয়েদেরও প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধির প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। সরকারের কাছে টেস্টিং কিট, ইনফ্রারেড থার্মোমিটার, বিচ্ছিন্নতা গাউন এবং মুখোশের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সের সময় গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তহবিল গঠনের প্রস্তাব মোদির ॥ ভিডিও কনফারেন্সে নভেল করোনাভাইরাস মোকাবেলায় সার্ক তহবিল গঠনের প্রস্তাব দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি চীন থেকে প্রতিবেশী বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনার কথাও বলেন। মোদি ‘কোভিড-১৯ ইমারজেন্সি ফান্ড’ গঠনের প্রস্তাব দিয়ে বলেন, প্রাথমিকভাবে ভারত ১ কোটি ডলার দিয়ে এই তহবিলের শুরুটা করতে পারে। এই তহবিলের অর্থ ব্যয় সমন্বয়ের কাজটি ভারতের দূতাবাসগুলো করতে পারে বলেও প্রস্তাব দেন মোদি। নরেন্দ্র মোদি বলেন, আমরা চিকিৎসক এবং বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি র‌্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন, পরীক্ষা সামগ্রী এবং অন্যান্য সরঞ্জাম সংগ্রহ করছি। তারা সব সময় প্রস্তুত থাকবেন; আপনাদের প্রয়োজন হলে ভারত থেকে তাদের পাঠানো হবে। তিনি বলেন, আমাদের একটি সাধারণ গবেষণা প্লাটফর্মও গঠন করার বিষয়ে ভাবা উচিত। এ ধরনের কাজের সমন্বয়ে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর মেডিক্যাল রিসার্চ সহায়তা করতে পারে। এছাড়া অর্থনীতির ওপর কোভিড-১৯ এর দীর্ঘমেয়াদে প্রভাবের বিষয়েও বিশেষজ্ঞরা আমাদের সহায়তা করতে পারেন। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়নে সদস্য দেশগুলোকে সমন্বয় করে কাজের তাগিদ দিয়ে মোদি বলেন, এই মহামারী প্রথম নয়; এমনকি শেষও নয়। মোদি বলেন, করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় আমাদের দৃশ্যমান তৎপরতা প্রয়োজন। সার্কভুক্ত দেশগুলোতে আক্রান্তের ঘটনা ১৫০টিরও কম। আমাদের একসঙ্গে প্রস্তুতি নিয়ে কাজ করে সফল হতে হবে। আতঙ্ক দূর করতে হবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালাতে হবে। হাসপাতালের প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ভারতীয়দের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। আমাদের পদক্ষেপগুলো বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করেছি। বিশ্বের আক্রান্ত দেশগুলোর মতো একই অজানা পরিস্থিতি মোকাবেলা করছি। করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় জন্য সার্ক দেশগুলোর সম্মিলিত আঞ্চলিক প্রচেষ্টার পক্ষে মোদি অভিমত প্রদান করে বলেন, ‘আমাদের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক প্রাচীন এবং আমাদের সমাজ গভীরভাবে জড়িত। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই একত্রে প্রস্তুতি নিতে হবে, আমাদের অবশ্যই একত্রে কাজ করতে হবে এবং সফল হতে হবে।’ ভাইরাস ছড়ানোর বিরুদ্ধে ভারত আধুনিক প্রক্রিয়াসহ সক্রিয় পদক্ষেপ নিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা ভারতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্ক্রীনিং শুরু করেছি। পর্যায়ক্রমে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে বিধি-নিষেধ বাড়িয়েছি। আমরা টিভি, প্রিন্ট এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমাদের জনসচেতনতামূলক প্রচারকে বাড়িয়েছি, ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ মোদি আরও বলেন, তারা সারাদেশে তাদের চিকিৎসা কর্মীদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশীয় প্রক্রিয়ায় দ্রুত দক্ষতা বাড়ানোর বিষয়ে সচেতন। তিনি বলেন, তারা সম্ভাব্য ভাইরাস বহনকারী এবং যাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছেন তাদের আরও ভালভাবে শনাক্ত করার জন্য একটি সমন্বিত রোগ নজরদারি পোর্টাল স্থাপন করেছেন। নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমরা এখন আমাদের প্রোটোকল তৈরি করেছি। বিদেশে মোবাইল টিম মোতায়েন করে পরীক্ষা চালানো হচ্ছে। আমরা জানি যে অন্যান্য দেশগুলোও তাদের ভারতে থাকা নাগরিকদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। সুতরাং আমরা যে পদক্ষেপ নিচ্ছি সে সম্পর্কে বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের অবহিত করছি’। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ বলেন, করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় আমরা ঐক্যবদ্ধ। পর্যটন আমাদের দেশের জিডিপিতে এক চতুর্থাংশ (চার ভাগের একভাগ) ভূমিকা রাখে। চীন ও ইতালি থেকে বেশি পর্যটক আসতো। দেশ দু’টি করেনায় আক্রান্ত। এতে আমাদের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি নিয়মিত হতে পারে। শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবে রাজাপাকসে বলেন, শ্রীলঙ্কায় হামলার পরে আমাদের অর্থনীতি ও পর্যটন ব্যবসা ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। করোনাভাইরাসের কারণে তা আবার বিপর্যস্ত। আমাদের অর্থনীতি ও পর্যটনে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ করা হয়েছে ২-৬ সপ্তাহের জন্য। সব দেশের অনএ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করা হয়েছে। নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি, আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ করোনাভাইরাস মোকাবেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আমরা প্লেন চলাচল, অনাবাসী ও বিদেশীদের ভিসা বন্ধ করেছি। তৃতীয় দেশের যাত্রীদের নেপাল (ট্রানজিট) হয়ে যাওয়া বন্ধ করেছি। করোনার প্রভাবে আমদের পর্যটন হুমকির মুখে। আমাদের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবেলা করা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। আমাদের দেশে বৃদ্ধদের বেশি আক্রান্ত করছে কোভিড-১৯। এ ধরনের একটি ভিডিও কনফারেন্সের আয়োজন করার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ। আমি আনন্দিত। আজকের এ কনফারেন্সের মাধ্যমে করোনাভাইরাস মোকাবেলায় তথ্য আদান-প্রদানের অপার সম্ভাবনা তৈরি হলো। বক্তব্যের শুরুতেই ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশত বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানান। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা জাফর মির্জা বলেন, আমরা আতঙ্কিত না হওয়ার জোরালো পরামর্শ দিচ্ছি। চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি। আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন ব্যবস্থা করেছি। আক্রান্ত হলে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য ও রোগ পদ্ধতি জাতীয় ও তৃণমূল পর্যায়ের কাজ করছে। আমাদের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, স্বাস্থ্য তথ্য সরবরাহ করতে সার্কভুক্ত দেশগুলোর স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা যেতে পারে। সার্কদেশের মধ্যে করোনাভাইরাসের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার চীনের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় করা যেতে পারে। আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট গনি সাংহাই করপোরেশনে গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে ভারতের থাকার বিষয়টি তুলে ধরে পরিস্থিতি মোকাবেলায় চীনের অভিজ্ঞতা গ্রহণের পরামর্শ দেন। টেলিমেডিসিন সেবার একটি অভিন্ন রূপরেখা প্রণয়নের জন্য সার্ক নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান আফগান প্রেসিডেন্ট।
×