ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি

শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ ॥ সাত বছরে সর্বনিম্ন সূচক

প্রকাশিত: ১০:০৯, ১৬ মার্চ ২০২০

শেয়ারবাজারে রক্তক্ষরণ ॥ সাত বছরে সর্বনিম্ন সূচক

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ করোনার প্রভাবে বড় দরপতন দিয়ে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রবিবার পার করেছে দেশের শেয়ারবাজার। এদিন লেনদেনের শুরুতেই একের পর এক প্রতিষ্ঠানের দর পড়তে থাকে। শেয়ার দামের ওঠানামার ক্ষেত্রে একের পর এক লালচিহ্ন ভেসে ওঠায় শেয়ারবাজার বিনিয়োগকারীদের রক্তক্ষরণের কারণে অনেকটাই ‘রক্তনদী’তে পরিণত হয়েছিল। সেখানে দর বাড়া কোম্পানির সংখ্যা ছিল খুবই কম। এই রক্তক্ষরণে সার্বিক সূচকটি সাত বছরের সর্বনিম্নে অবস্থান করছে। আর তাই বিনিয়োগকারীরা আগামী দুই সপ্তাহ লেনদেন বন্ধের দাবি জানিয়েছে। শেয়ার বিক্রির চাপে হু হু করে দাম কমে প্রায় দেড় শ’ প্রতিষ্ঠান সার্কিট ব্রেকারের (দাম কমার সর্বোচ্চ) সীমার কাছে চলে আসে। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ রূপ নেয় আতঙ্ক আর পুঁজি হারানোর শঙ্কায় বিনিয়োগকারীদের একটি দল লেনদেন বন্ধ করার দাবি নিয়ে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ছুটে যায়। যদিও ডিএসই কর্তৃপক্ষ তাদের সেই দাবি নাকচ করে দিয়েছে। আতঙ্কে দিনটিতে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) লেনদেনে অংশ নেয়া প্রায় ৯৫ শতাংশ শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে মূল্য সূচকেও। এদিন ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ডিএসইএক্স ১৬০ পয়েন্ট বা ৩ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে অবস্থান করছে। যা গত ৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর ডিএসইএক্স সূচকের অবস্থান ছিল ৩ হাজার ৯৯৩.৩৩ পয়েন্ট। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএসইএক্স সূচকটি ৩১ দশমিক ৩৭ পয়েন্ট কমে। এদিন শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরুর মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যেই ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ১০০ পয়েন্টের ওপরে পড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা। ফলে একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৩৪ পয়েন্ট পড়ে যায়। তবে শেষদিকে এসে পতনের মাত্রা কিছুটা কমে। এরপরও ধসের হাত থেকে রক্ষা পায়নি শেয়ারবাজার। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১৬০ পয়েন্ট কমে তিন হাজার ৯৬৯ পয়েন্টে নেমে এসেছে। এর মাধ্যমে পাঁচ বছর পর সূচকটি চার হাজার পয়েন্টের নিচে নামল। ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে মহাধসের পর ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারি ডিএসইর সূচকে পরিবর্তন আনা হয়। বাজারটিতে প্রধান মূল্য সূচক হিসেবে চালু করা হয় ডিএসইএক্স। শুরুর দিন সূচকটির ভিত্তি পয়েন্ট ছিল চার হাজার ৫৫ পয়েন্ট। এরপর কিছুদিন সূচকটি পতন হলে চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। তবে ২০১৩ সালের ১০ জুন আবার চার হাজার পয়েন্ট অতিক্রম করে সূচকটি। এরপর ২০১৫ সালে আবার পতন দেখা দিলে ৪ মে সূচকটি আবার চার হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে আসে। অবশ্য পরের কার্যদিবসেই তা চার হাজার পয়েন্ট ছাড়িয়ে যায়। এরপর আর চার হাজার পয়েন্টের নিচে নামেনি ডিএসইএক্স। তবে বড় পতনের কবলে পড়ে রোববার আবার সূচকটি চার হাজার পয়েন্টের নিচে চলে এলো। এই পতনের কবলে পড়ে এদিন ডিএসইতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩৮টির। আর সাতটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এতে পতন হয়েছে প্রধান সূচকের সঙ্গে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৪৮ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৩৩ পয়েন্টে নেমে গেছে। আর ডিএসইর শরিয়াহ্ ৩১ পয়েন্ট কমে ৯২৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এদিকে লেনদেন শুরুর দুই ঘণ্টার মধ্যে ডিএসইর প্রধান মূল্য সূচক ২৩৪ পয়েন্ট পড়ে গেলে বিনিয়োগকারীদের একটি প্রতিনিধিদল লেনদেন বন্ধ করার দাবি নিয়ে ডিএসইর নিকুঞ্জের অফিসে যান। সেখানে ডিএসইর এমডি, সিওও এবং সিএফওর সঙ্গে বৈঠক করেন তারা। বৈঠক শেষে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমরা ডিএসইর কাছে দুই সপ্তাহ লেনদেন বন্ধ রাখার দাবি জানিয়েছিলাম। তবে ডিএসইর এমডি আমাদের বলেছেন- সোমবার থেকে শেয়ারবাজার ভাল হয়ে যাবে। তার কথার ওপর ভিত্তি করে আমরা দুইদিন বাজার পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এই দুই দিনের মধ্যে বাজার ভাল না হলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। আর সংগঠনটির সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন, কারসাজি চক্র পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটাচ্ছে। এই দরপতন ঘটাতে তারা করোনাভাইরাসকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। করোনাভাইরাস আতঙ্কে আমাদের শেয়ারবাজারে দরতপন হওয়ার কোন কারণ নেই। তাই আমাদের দাবি এই কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। সেইসঙ্গে কিছুদিনের জন্য শেয়ারবাজারে লেনদেন বন্ধ রাখতে হবে। সেইসঙ্গে নিয়ম করতে হবে প্রতিদিন প্রতিটি ব্রোকারেজ হাউসকে কমপক্ষে দুই কোটি টাকার লেনদেন করতে হবে। দরপতনের বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়া যাবে না। তাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আতঙ্কে পেনিক সেল না দিয়ে, শেয়ার ধরে রাখতে হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সবাই বাজার ভাল করতে চেষ্টা করছে। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি এই বাজার ভাল হবে। এদিকে দরপতনের সঙ্গে ডিএসইতে দেখা দেয় লেনদেন খরা। দিনভার বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৭৩ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। আগেরদিন লেনদেন হয় ৪০৯ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসের তুলনায় লেনদেন কমেছে ৩৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অপর শেয়ারবাজর চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই ৪৮৯ পয়েন্ট কমে ১২ হাজার ১৫৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ২৪ কোটি ৭১ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৫০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৩৪টির এবং চারটির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
×