ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তৈরি পোশাকশিল্পে করোনা সংশয়

প্রকাশিত: ০৭:৪৭, ১৬ মার্চ ২০২০

 তৈরি পোশাকশিল্পে করোনা সংশয়

নোভেল করোনাভাইরাস ইতোমধ্যে গোটা বিশ্বে ভয়ঙ্কর আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। ভয়ে কাঁপছে আজ সারা দুনিয়া। প্রথম দিকে এর আবির্ভাব চীন দেশে হলেও দিনে দিনে এই মরণব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। ইতোমধ্যেই এশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও আফ্রিকার প্রায় ৬০টি দেশে-এর প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। বর্তমানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮ লাখ ৮০০০ যাদের মধ্যে মৃতের সংখ্যা আনুমানিক ৩ হাজার ৫০০ এবং প্রতিদিন এর সংক্রমণ ও আক্রান্তের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের দেশেও পাঁচজন শনাক্ত হয়েছে। মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে বিশ^ব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস বড় ধরনের আঘাত হানছে অর্থনীতিতেও। ফলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পৃথিবীব্যাপী জরুরী অবস্থা জারি করেছে। অর্থনীতি বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, করোনাভাইরাসের মহামারী ২০০৮ সালে শুরু হওয়া বিশ^মন্দাকেও হার মানাতে পারে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারের ব্যাপক দরপতন হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, কেবল গত সপ্তাহেই বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ৬ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার। কমে গেছে জ্বালানি তেলের দাম (৪৬.১৯ইউএসডি/ব্যারেল) যা গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। করোনাভাইরাসের প্রভাব ধীরে ধীরে হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হলেও বাস্তবে ঘটছে এর উল্টোটা। বিশ্বব্যাপী মহামারীর রূপ নিয়েছে অপ্রতিরোধ্য এই ভাইরাস। ফলে এর ভয়াবহ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে সারা বিশ্বে যার প্রভাবে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে বিশ্ববাজার ও অর্থনীতিতে। উদ্বেগ বাড়ছে বাংলাদেশেও। চীন থেকে পণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ছে আমাদের দেশে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পে এর প্রভাব পড়ছে খুব বেশি। প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, ফিনিশ্ড গুড্স ও এক্সেসরিজের সঙ্কটজনিত কারণে ইতোমধ্যেই তাদের দাম অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে উদ্যোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ দিন দিন বাড়ছে। এককভাবে চীন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৭৯ কোটি মার্কিন ডলার। বর্তমানে চীন থেকে পণ্য আমদানি ব্যাহত হওয়ায় সমূহ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। দেশের বিভিন্ন ব্যবসা ও বাণিজ্য সংগঠন তাদের আসন্ন ক্ষয়ক্ষতির তীব্র আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। নিঃসন্দেহে করোনাভাইরাস বর্তমান বিশ্বে এক জরুরী সমস্যা। যদিও বাংলাদেশের ডাইং সেক্টরে এর প্রভাব কিছুটা কম। কারণ ডাইং ফ্যাক্টরিগুলোর কাঁচামাল আমদানি একটি চলমান প্রক্রিয়া। তাই তারা চায়না হলিডে’র বিষয়টি মাথায় রেখে তাদের চাহিদা অনুযায়ী কিছু কাঁচামাল ও অন্যান্য পণ্যসামগ্রী চায়না হলিডে’র পূর্বেই আমদানি করতে সমর্থ হয়েছে এবং কিছু মালামাল প্রস্তুত রয়েছে যা তাদের ফ্যাক্টরি খোলার সঙ্গে সঙ্গেই জাহাজীকরণ সম্ভব হবে। তাছাড়া করোনাভাইরসের সংক্রমণ ও এর আপদকালীন সঙ্কটের বিকল্প হিসেবে তারা তাদের কাঁচামাল আমদানির বিকল্প উৎস্যও খুঁজে পাবে এবং ইতোমধ্যেই সকল কাঁচামাল আমদানির বিকল্প উৎস হিসেবে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ইন্ডিয়া ও নেপালকে বিবেচনায় নিয়েছে। ফলে ডাইড ইয়ার্নের মূল্য পাউন্ড প্রতি ১০ থেকে ১৫ টাকা বাড়লেও মূল প্রভাবটা পড়বে তৈরি পোশাকশিল্পে। সত্যিই যদি ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরসের মহামারী ব্যাপক আকারে শুরু হয় এবং খুব তাড়াতাড়ি যদি এর প্রতিরোধ সম্ভব না হয়, আর সে কারণে যদি ইতালির মতো অন্যরাও তাদের রিটেইল শপগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেয়, তবে বাংলাদেশে ব্যাপকহারে তাদের কাজের অর্ডার কমে যাবে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। বাংলাদেশ চীন থেকে বছরে গার্মেন্টসের কাঁচামাল আমদানি করে ৫০২ কোটি মার্কিন ডলারের। যার মধ্যে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস এক্সেসরিজের সরবরাহ থাকে ৪০ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে তাদের এই সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বেশ কিছু কাঁচামাল ও এক্সেসরিজের দাম ইতোমধ্যেই বেড়ে গেছে। ফলে অনেক উদ্যোক্তা তাদের এলসিকৃত পণ্য উৎপাদনে হিমসিম খাচ্ছেন এবং যথাসময়ে তারা তাদের উৎপাদিত পণ্য ডেলিভারি দিতেও ব্যর্থ হচ্ছে। যা হোক, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চীনের পণ্য সরবরাহ প্রক্রিয়া স্বাভাবিক না হলে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের ব্যবসায়ীরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে। লেখক : সিআইপি, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ডাইড ইয়ার্ন এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন ডিরেক্টর, এফবিসিসিআই চেয়ারম্যান, লাবিব গ্রুপ
×