ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা নিয়ে সার্ক উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১৬ মার্চ ২০২০

করোনা নিয়ে সার্ক উদ্যোগ

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটায় এই রোগ এখন আর কোন নির্দিষ্ট দেশের সমস্যা নয়। এটি হয়ে উঠেছে মানবজাতির সুস্থতার ওপরে বড় হুমকিস্বরূপ। করোনাভাইরাসের বিস্তারকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এই ভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে। এটি শুধু স্বাস্থ্যগত সঙ্কট হিসেবে বিবেচনা করলে ভুল হবে। এর বৈশ্বিক নেতিবাচক প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। অর্থনৈতিক মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রে গমনের সুযোগ স্থগিত রয়েছে। চিকিৎসার জন্য প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষকে সীমান্ত পেরুতে হয়। এখন সেটি আর সম্ভব নয়। দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে জনবহুল দেশের সংখ্যা একাধিক। ফলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার বড় আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে মহামারী সামাল দেয়া বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে উঠবে। এমন একটি বাস্তবতায় করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থার (সার্ক) আওতাধীন দেশগুলোকে এক হয়ে শক্তিশালী যৌথ উদ্যোগ নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার একাধিক টুইটে মোদি বলেন, ‘সার্কভুক্ত দেশগুলোর প্রতি প্রস্তাব রাখছি, যাতে তারা করোনা মোকাবেলায় যৌথভাবে শক্তিশালী উদ্যোগ গ্রহণ করে। আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা চালাতে পারি। একজোট হয়ে আমরা বিশ্বের জন্য উদাহরণ তৈরি করতে পারি। স্বাস্থ্যসম্মত বিশ্ব গড়ায় ভূমিকাও রাখতে পারি। ’ সার্কভুক্ত রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে তার প্রস্তাবটিতে সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার যে প্রতিফলন ঘটেছে এতে কোন সন্দেহ নেই। বাংলাদেশে ভারতের হাইকমিশনার শুক্রবার সন্ধ্যায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তার বাসভবনে সাক্ষাত করে নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেন। ফলে এ বিষয়ে ইতিবাচক অগ্রগতি আশা করা যায়। নরেন্দ্র মোদির প্রস্তাবে পাকিস্তানও রাজি হয়েছে। বিশ্বনেতারা প্রয়োজন অনুযায়ী পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী তার দেশে আসা প্রত্যেককে নিজ ঘরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার আবশ্যকতার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন শনিবার। আমরা জানি আলোচিত ভাইরাসটি দেশের সীমানার বাইরে থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তাই বিদেশফেরতদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজ ঘরে একা অর্থাৎ সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা যদি বিদেশফেরত ব্যক্তি ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে আসেন তবে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই রোগের লক্ষণ ফুটে উঠবে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি ঢালাওভাবে মেলামেশা করেন তবে তার সংস্পর্শে থাকা অন্যরাও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকবেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী পরিবারের একজন শুভানুধ্যায়ী স্বজনের মতোই সহজ-সরল ভাষায় মোক্ষম কথাগুলো বলেছেন। আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘যারা বিদেশ থেকে আসবেন তারা অন্তত বাইরের কারও সঙ্গে মিশবেন না এবং কিছুদিন অপেক্ষা করে দেখবেন এ ধরনের রোগের কোনরকম লক্ষণ দেখা যায় কিনা। প্রয়োজনে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন।’ দুঃখজনক হলো ইতালিফেরত প্রবাসী বাঙালীদের হজ ক্যাম্পে নিলে অব্যবস্থাপনার জন্য তারা বিক্ষোভ করেন। এটি প্রত্যাশিত ছিল না। দক্ষিণ এশিয়ার সার্কভুক্ত দেশসমূহ আমাদের নিকট প্রতিবেশী। আমরা যদি ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের বিয়টিকে মর্যাদা দিই তবে প্রতিটি দেশের জনসাধারণের কল্যাণে পদক্ষেপ নিতে হবে। তার সূচনা বার্তা সার্কভুক্ত একটি দেশের নেতা সামনে তুলে ধরেছেন। বাকি নেতারাও বিষয়টিকে সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন এবং নিজ নিজ দেশের মানুষের করোনা থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করা দরকার তা করবেনÑ এটিই প্রত্যাশা।
×