ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তানভির আহমেদ

তারুণ্যের ভাবনায় স্বাধীনতা

প্রকাশিত: ০৭:০৯, ১৬ মার্চ ২০২০

 তারুণ্যের ভাবনায় স্বাধীনতা

স্বাধীনতার মাস মার্চ। আমাদের কাছে এই রক্তঝরা মার্চ মাসের রয়েছে এক অন্যরকম আবেদন। এটি অগ্নিঝরা ইতিহাসের মাস, বিষাদ ও বেদনার মাস। এই মাসের ২৫ তারিখ থেকে লেখা শুরু হয়েছিল এক অমর মহাকাব্য; যার নাম বাংলাদেশ। বাঙালীর জীবনে ভাষা আন্দোলনের স্মারক মাস ফেব্রুয়ারির পর মার্চের গুরুত্ব অপরিসীম। আমাদের স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত লড়াই শুরু হয় এই মার্চেই। একাত্তরের গোটা মার্চ মাসই ছিল অত্যন্ত ঘটনাবহুল। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের পর এ দেশ যে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে এগোচ্ছিল তা স্পষ্ট হয়ে যায় এই মার্চেই। ১৯৭১-এর ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেন। এই ভাষণেই বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ভাষা আন্দোলনের সূত্র ধরেই স্বাধিকার আন্দোলন শুরু হয়। তাই আমাদের ভাষা ও স্বাধীনতা যেন একই সুতোয় গাঁথা। ভাষার মাস শেষ হতে না হতেই এলো আগুন ঝরানো মার্চ। ভাষার মাস শেষ হতেই এলো সেই স্বাধীনতার মাস আগুন ঝরানো মার্চ। অধিকার আদায় করে নিতে জেগে উঠেছিল এ দেশের মুক্তিকামী কোটি জনতা। একাত্তরের মার্চ ছিল মুক্তিকামী জনতার আন্দোলনে উত্তাল। বাংলা ছিল অগ্নিগর্ভ। উত্তাল এই মাসের প্রতিটি দিনই বাঙালী জাতির জন্য অনুপ্রেরণা আর শক্তির উৎস। ১৯৭১ সালের এই মাসের ২৫ তারিখে বর্বর পাকবাহিনী গণহত্যা শুরু করলে গ্রেফতার হওয়ার আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। আলো আসবেই আমরা স্বাধীন। এই স্বাধীনতা এমনি এমনি আসেনি। অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার ফলস্বরূপ এই স্বাধীনতা। আমাদের দেশের বর্তমানে তরুণদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বর্তমান প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার সেই আন্দোলন এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য যে উদ্দেশ্য ছিল তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করার সময়। কারণ স্বাধীনতা সংগ্রামের কারণে আমরা একটি স্বাধীন দেশ পেয়েছি কিন্তু আমরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে স্বাধীন হতে পারিনি। স্বাধীনতার মূলমন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে দেশের প্রতিটি জিনিস নিয়ে ভাবতে হবে। এবং একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব কর্তব্য এবং অধিকার সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরী। যখন প্রত্যেকেই তার অধিকার, কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হবে ঠিক তখনই দেশ বদলানো সহজ। তখনই দেশ, জাতি, সমাজ তথা প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। আর এই কাজটি করতে হবে তরুণদের। বিপুলসংখ্যক তরুণ যখন সোচ্চার হবে দেশ তখন পাল্টাতে সময় লাগবে না। স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বাস্তব রূপ ধারণ করবে। স্বাধীনতার সংগ্রামের মতো করে উদ্দীপিত হয়ে আবার জেগে উঠুক তরুণ সমাজ। আলো আসবেই। আমরা কী সত্যিকার অর্থে বিজয়ী হতে পেরেছি! আমরা বর্তমান প্রজন্ম নিজের চোখে মুক্তিযুদ্ধ দেখিনি। মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হওয়া সৌভাগ্য অর্জন করেছি। চোখে অদেখা ছিল সাধারণ বাঙালীর ওপর পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর দমন, পীড়ন, শোষন, নির্যাতন। শত প্রাণের বলিদান, হাজারো অসহায় মা-বোনের সম্ভ্রমহানি, শত আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত শরীরের বিনিময়ে পেয়েছি একটি পতাকা, একটি রাষ্ট্র, একটি ভূখন্ড। আমাদের শিক্ষাঙ্গন আজ কলুষিত কুরাজনীতি, সন্ত্রাসী, দখলবাজি, চাঁদাবাজি ও নানা রকম অপরাধের কালো থাবায়। শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থী নিরাপদ নয়, চিকিৎসকের কাছে রোগী সঠিক চিকিৎসা পায় না, রাজনীতি যেন আজ সুস্থ মস্তিষ্কের নয়। ভেতরে অগণিত প্রশ্ন! তারপরেও আমি বাংলাদেশী, জন্মস্থান বাংলাদেশ। এই দেশের প্রতিটি মাটির কণা আমার শরীরে লেগে আছে, এই মাটির ওপর ভর করে আমি হাঁটতে শিখেছি। তৃষ্ণায় পিপাসার্ত হলে দেশের জল পান করেছি এবং করছি। আমার এই প্রাণপ্রিয় দেশটাকে যতই বহিরাগতরা ভর্ৎসনা করুক, ঘৃণা করুক, তলাবিহীন ঝুড়ি বলুক, আমরা থেমে যাব না তাদের কটুবাক্যে। এগিয়ে যাব দৃঢ় পদক্ষেপে প্রতিটা বলুকণা রক্ষা করার প্রত্যয়ে। আমি আশাবাদী ভীষণ রকম আশাবাদী। গ্রেনেড নয়, বোমা নয়, আমদের হাতে ন্যায়নীতি আর সততার অস্ত্র তুলে দিন, যা দিয়ে দেশটাকে বিশুদ্ধ করতে চাই। পৃথিবীর বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আমার বাংলাদেশ হবে বসবাসযোগ্য আবাসভূমি। পরবর্তী প্রজন্ম যেন বলতে পারে, সার্থক জন্ম আমার জন্মেছি এই দেশে। এই দেশ আমার, আপনার, সকলের। তাই এখনি এগিয়ে আসুন হাতে হাত রেখে দেশটাকে শুদ্ধতার সঙ্গে উন্নতির শিখরে নিয়ে যাই। স্বাধীনতা কেবল তরুণদের জন্য নয়, সকলের স্বাধীনতা কেবল তরুণদের জন্য নয়, সকলের। তবে স্বাধীনতা শব্দটির সঙ্গে একটি বাক্যবহুল প্রচলিত- স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন। সেই নির্মম বাস্তবতা আজও দেখা যায়। যখন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হয় কিংবা নারীদের প্রতি শ্লীলতাহানির খবর দৈনন্দিন পত্রিকায় খুঁজে পাওয়া যায়। সাম্প্রতিক ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে নাগরিকদের বিমুখ হয়ে যাওয়াও রাজনৈতিক অধিকার ও স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। তবে এর মাঝেও আশার দিক হলো বৈষম্য কমছে, নারী পুরুষ সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। যা প্রমাণ করে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে প্রাপ্য স্বাধীনতাটুকু পেতে শুরু করেছে দেশের নারীসমাজ। সকল শ্রেণীর মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে প্রাপ্য স্বাধীনতা রাষ্ট্র তার প্রত্যেক নাগরিককে প্রদান করবে। এটাই প্রত্যাশা।
×