ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সময় চাইলেন ‘অধিনায়ক’ তামিম

প্রকাশিত: ১২:০০, ১৫ মার্চ ২০২০

সময় চাইলেন ‘অধিনায়ক’ তামিম

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আপাতত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরতি পড়েছে। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়রা আজ থেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়বেন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগে (ডিপিএল)। এবার প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের হয়ে মাঠে নামবেন বাঁহাতি ওপেনার তামিম ইকবাল। সোমবার তাদের প্রথম ম্যাচ গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের বিরুদ্ধে। এই ম্যাচে নামার আগে শনিবার দুপুরে তামিমের ওয়ানডে নেতৃত্ব নিয়েই যত আলোচনা হয়েছে। ওয়ানডে দলের স্থায়ী অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মর্তুজার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তিনি। অনুশীলনে নামার আগে তামিম জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলকে সাফল্য এনে দিতে সময় ও ধৈর্যের প্রয়োজন। সে কারণেই লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়ক হওয়া জরুরী। এবার সেই সুযোগ আসাতেই নেতৃত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাঁহাতি এ ওপেনার দাবি করেছেন, দ্রুতই বড় কোন ম্যাচ জিততে পারলে দলগত পারফর্মেন্সে সহায়ক হবে। এরপরও অধিনায়ক মাশরাফির মতো সাফল্য দলকে পাইয়ে দিতে সময়ের প্রয়োজন বলে দাবি করেন তামিম। সেক্ষেত্রে মাঠের বাইরের নানা ইস্যু ঠিক করার দিকে বেশি মনোযোগী হবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। কিন্তু সার্বিক চেষ্টাতেও দেড় বছরের মধ্যে দলের জন্য কিছু করতে না পারলে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন তামিম। বাংলাদেশের ক্রিকেটে ‘অধিনায়ক’ মাশরাফির অভিযান থেমে গেছে। এবার সফরকারী জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজেই শেষবারের মতো নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। ৮৮ ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫০ জয় এনে দেয়া এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একমাত্র শিরোপা জয়ে নেতৃত্ব দিয়ে সফলতম অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হয়েছেন মাশরাফি। বিশ্বকাপ কিংবা আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে এখন পর্যন্ত টাইগারদের সেরা সাফল্য এসেছে মাশরাফির অধিনায়কত্বে। শক্তিশালী অনেক দলগুলোর বিরুদ্ধেই অবিস্মরণীয় জয় এসেছে তার হাত ধরে। এবার তার স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন তামিম। কিন্তু অধিনায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তেমন অভিজ্ঞতা নেই এ বাঁহাতি ওপেনারের। ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন সময় অধিনায়কত্ব করলেও গত বছর জুলাইয়ে মাশরাফির অনুপস্থিতিতে শ্রীলঙ্কা সফরে দলকে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে এর ওজনটা বুঝে গেছেন তিনি। তাই অধিনায়ক হিসেবে তামিম নিজেকে মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘আমি খুব অভিজ্ঞ অধিনায়ক না। নিজেও জানি না আজ থেকে ৬ মাস বা ১ বছর পর কিভাবে পারফর্মেন্স করব। আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সময়। আপনাদেরও একটু ধৈর্য রাখতে হবে। আমাদের দর্শক যারা আছেন তাদেরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমার এটাই কাজ থাকবে যে দলের সবচেয়ে ভাল কিছুর জন্য যা যা আমি তাই করার চেষ্টা করব। আমি সফল হব কি হব না এটা আমি জানি না। কিন্তু আমি চেষ্টা করব সবকিছু সঠিক করার। যে কোন কিছু এক সিরিজ, পাঁচ-ছয় ম্যাচ দিয়ে বিচার করা কঠিন। বিশেষ করে নেতৃত্ব একেবারে ভিন্ন একটা ব্যাপার। আর আমি এমন একজন ব্যক্তির কাছ থেকে নিচ্ছি যে এটা খুব কঠিন সোজাসুজি ওনার পর্যায়ে চলে যাওয়া। তিনি এত বছর ধরে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার অধীনে আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। সোজাসুজি ওনার পর্যায়ে চলে যেতে পারলে ভাল। আর যদি যেতে না পারি আমাকে আপনাদের কিছু সময় দিতে হবে। একদিক থেকে আমি খুব ভাগ্যবান। উনার সঙ্গে আমার খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কাছ থেকে অনেক কিছু দেখেছি। একটু হলেও তার চিন্তা সম্পর্কে জানি। আমার আশা যদি কখনও বিপদে পড়ি প্রথমেই তার কাছ থেকে পরামর্শ নেয়ার চেষ্টা করব।’ তামিম জানিয়েছেন মাঠের নেতৃত্বে সবসময় আক্রমণাত্মক ধারাতে থাকাটাই পছন্দনীয় তার। কিন্তু নিজের মতো করে সবকিছুর প্রয়োগ করতে হলে সময়ের প্রয়োজন। আর বিষয়টি দ্রুততর হতে পারে যদি দ্রুতই তার নেতৃত্বে দল বড় কিছু ম্যাচ জিততে পারে। তামিম বলেন, ‘আপনারা অধৈর্য হবেন না, দর্শকদের অনুরোধ করব আপনারা অধৈর্য হবেন না। যদি ছয় মাস, ১ বছর কিংবা দেড় বছর হোক আমি যদি দলের জন্য কিছু করতে না পারি তাহলে অবশ্যই এই দায়িত্ব ছেড়ে দেব। এক সিরিজ, দুই সিরিজ, কিংবা ৫ ম্যাচে ব্যাটিংয়ে বাজে অবস্থা হতেই পারে। আশাকরি হবে না।’ আর যেহেতু সবকিছু গুছিয়ে নেয়া সময়সাপেক্ষ ব্যাপার, তাই তামিম চেয়েছিলেন যেন দীর্ঘ সময়ের জন্যই অধিনায়ক করা হয় তাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) শুরুতে স্বল্প মেয়াদের জন্য নেতৃত্ব দিতে চেয়েছে কোন একজনের ওপরে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তামিমকে লম্বা সময়ের জন্য অধিনায়ক হওয়ার প্রস্তাব দেয়াতেই তিনি রাজি হয়েছেন। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘নেতৃত্বের ব্যাপারটা যেটা জানেন যে এটা একটা সম্মিলিত প্রক্রিয়া। অধিনায়কত্ব নেয়ার পেছনে আমার একটা কারণ ছিল। বোর্ডের সিদ্ধান্ত থাকে। আমি হই বা অন্য কেউ, আমরা এখন এমন পর্যায়ে ধরুন একটা, দুইটা বা তিনটা সিরিজে খুব কঠিন অধিনায়কের জন্য কোন কিছু পরিকল্পনা করা। আমি চাচ্ছিলাম লম্বা সময়ের জন্য। লম্বা সময় পেলে দলে আপনি একটা ব্যবধান গড়তে পারেন। আর দল হিসেবে যেটা আমাদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বা আমার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, আপনি যদি দেখেন ২০১৫ সালে যখন আমরা পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম সিরিজ জিতেছি তখন মাশরাফী ভাইয়ের অধীনে আমাদের যে গ্রুপটা ছিল সেটার মধ্যে এই বিশ্বাস জন্মালো যে ‘না, ঠিক আছে। আমরা হারাতে জানি। আমার মনে হয় ওয়ানডে দল হিসেবে আমাদের একটা বড় ম্যাচ জেতা খুব জরুরী। তা এই বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে যে আমরা আবার জিনিসগুলো ভাল করতে পারি। এটাই আমাদের লক্ষ্য থাকবে। যত দ্রুত আমরা একটা বড় ম্যাচ জিততে পারি তা দলের জন্য ভাল হবে।’ লম্বা সময়ের প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করতে চান তামিম। নিজের পারফর্মেন্সের দিকেও মনোযোগী থাকতে চান এ সময়। আর দলের সতীর্থদের কাছ থেকে পারফর্মেন্স বের করে আনার জন্যও ফর্মুলা জানিয়েছেন তামিম। তিনি বলেন, ‘আমরা যদি আরও কঠোর পরিশ্রম করি, আমরা যে ভুলগুলো প্র্যাকটিসে করছি তা যতটা কমাতে পারি। একটা কথা যে কষ্টের ফল কোন এক সময় পাওয়া যায়। যখন আমি ভাবি যে কিভাবে এই দলটাকে সামনে এগিয়ে নেব তখন প্রথম জিনিসই আমার মাথায় আসে যে অফ দ্য ফিল্ডের বিষয়গুলো সবার আগে আমাকে ঠিক করতে হবে। আমরা আরও ভাল কিভাবে করতে পারি। আমি মনে করি আমরা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম একটা সুশৃঙ্খল দল। তবে আমরা আরও ভাল হতে পারি। আমার কাছে মনে হয় অন দ্য ফিল্ড অনেক কিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। পারফর্মেন্স বলেন। কিন্তু কিছু কিছু জিনিস আমাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকে যেটা হলো ‘দ্য টিম কালচার’। আমরা মাঠের বাইরে কিভাবে চিন্তা করছি বা কতটা পেশাদার আমরা। আমার কাছে মনে হয়, ওই জায়গায় কিভাবে আমরা আরও উন্নতি করতে পারি সেটাই হবে আমার প্রথম কাজ। শুধু জুনিয়র নয়, সিনিয়র খেলোয়াড়দেরও উন্নতি করার অনেক জায়গা আছে। এখন যারা তরুণ খেলোয়াড় আছে, তাদের ক্রিকেটের প্রতি অনেক ইতিবাচক চিন্তা করতে হবে, তারা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারে। এই উন্নতির দরকার আছে। যত তাড়াতাড়ি আমরা এগুলো আরও ভালর কাছাকাছি নিয়ে যেতে পারব তাহলে আমাদের দলের উন্নতি আরও ভাল হবে।’
×