ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনায় একের পর এক বন্ধ হচ্ছে খেলা

প্রকাশিত: ১১:৫৯, ১৫ মার্চ ২০২০

করোনায় একের পর এক বন্ধ হচ্ছে খেলা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গন প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। একের পর এক স্থগিত হয়ে যাচ্ছে সব আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। আড়াই মাসে মহামারীর রূপ নেয়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব বিশ্বের ১২৩টি দেশ ও অঞ্চলে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে পাঁচ হাজারের মতো। চীনের পর ইতালিতে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে এই রোগ। ইউরোপ ও আমেরিকায় এর সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত। করোনার প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে ইউরোপের ফুটবল লীগগুলোয়। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে মহাদেশটির শীর্ষ পাঁচটি লীগই। শুরু সিরি’এ দিয়ে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত সবধরনের খেলা স্থগিত করা হয়েছে ইতালিতে। আক্রান্ত হয়েছেন যুভেন্টাসের সেন্টারব্যাক দানিয়েলে রুগানি। এরপর ক্লাবটির সব খেলোয়াড়কে রাখা হয়েছে কোয়ারেন্টাইনে। দলটির সেরা তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডো স্বেচ্ছায় পর্তুগালে নিজ বাড়িতে অন্যদের থেকে নিজেকে আলাদা করে রেখেছেন। গত বৃহস্পতিবার মাদ্রিদে একজন বাস্কেটবল খেলোয়াড়ের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়ার পর ক্লাবটির সব অনুশীলন বাতিল করা হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে আছে তাদের সব খেলোয়াড়। পরে সেদিনই স্পেনের লা লিগা কর্তৃপক্ষ তাদের সব ম্যাচ আগামী দুই সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে। আর শুক্রবার পরবর্তী ঘোষণা না দেয়া পর্যন্ত ফ্রান্সের লীগ ওয়ান স্থগিতের ঘোষণা আসে। এরপর আসে ইংলিশ ফুটবল বন্ধের ঘোষণা। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগসহ সবধরনের ফুটবল নিষিদ্ধ করে ইংল্যান্ড। পরিস্থিতি বুঝে আগামী ৪ এপ্রিল পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে বিবৃতিতে জানানো হয়। সংক্রমিত হয়েছেন আর্সেনালের কোচ মিকেল আর্তেতা। আক্রান্ত হয়েছেন চেলসির উইঙ্গার ক্যালাম হাডসন-ওডোই। আর উপসর্গ দেখা দেয়ায় লিচেস্টার সিটির তিন ফুটবলার স্বেচ্ছায় অন্যদের থেকে নিজেদের আলাদা করে রেখেছেন বলে জানান দলটির কোচ ব্রেন্ডন রজার্স। সর্বশেষ শুক্রবার রাতে এ সপ্তাহের জার্মান বুন্দেসলিগা ও বুন্দেসলিগা-২-এর সব ম্যাচ স্থগিতের ঘোষণা আসে। আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত লীগের সব ম্যাচ স্থগিতের সুপারিশ করেছে জার্মান ফুটবল লীগ কর্তৃপক্ষ। সোমবার সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে। আগামী ১৭ ও ১৮ মার্চ চ্যাম্পিয়ন্স লীগ ও ১৯ মার্চ ইউরোপা লীগের যেসব ম্যাচ হওয়ার কথা ছিল সবগুলো স্থগিত করা হয়েছে। চলতি মাসের বাকি সময়ে সবধরনের ফুটবল স্থগিত করেছে নেদারল্যান্ডস। বিরূপ প্রভাব পড়েছে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বেও। এ মাসের শেষ সপ্তাহে মাঠে গড়ানোর কথা ছিল লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের কাতার বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচ। কিন্তু তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করেছে ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা। দেরিতে হলেও ক্রিকেট দুনিয়ায় এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। শুক্রবার স্থগিত ঘোষণা করা হয় ইংল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ। একই দিনে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজও স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দেয়া হয়েছে আইপিএল। ২৯ মার্চ শুরু হওয়ার কথা ছিল প্রতিযোগিতাটির ত্রয়োদশ আসর। পিএসএলের করাচীর ম্যাচগুলো দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তাতে পাকিস্তানে বাংলাদেশের তৃতীয় দফার সফর নিয়ে আগে থেকেই থাকা শঙ্কা বেড়ে গেছে আরও। আগামী ৩ এপ্রিল করাচীতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা পাকিস্তান-বাংলাদেশের একমাত্র ওয়ানডে। টেস্ট ম্যাচটি শুরু হওয়ার কথা ৫ এপ্রিল। টেনিসের দুনিয়াতেও আঘাত এনেছে করোনাভাইরাস। এটিপি ট্যুর ও এটিপি চ্যালেঞ্জ ট্যুরের সব টুর্নামেন্ট ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার এই ঘোষণা আসার আগেই স্থগিত হয়েছিল ফেডকাপ ফাইনালস, ইন্ডিয়ান ওয়েলস ও মায়ামি ওপেন। ডব্লিউটিএ নিয়ে অবশ্য এখনও কোন ঘোষণা আসেনি। তবে এপ্রিলের শেষের আগে টেনিসের মেয়েদের কোন ট্যুর হবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনেও পড়েছে করোনাভাইরাসের প্রভাব। বাংলাদেশ গেমস স্থগিত করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন (বিওএ)। ২০টি ভেন্যুতে ৩১টি ডিসিপ্লিনে প্রায় ১২ হাজার এ্যাথলেট নিয়ে আগামী ১ এপ্রিল শুরু হওয়ার কথা ছিল এবারের আসরের। আগামী জুন-জুলাইয়ে মাঠে গড়ানোর কথা ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ-২০২০। তবে এই প্রতিযোগিতা নিয়েও জেগেছে শঙ্কা। আগামী মঙ্গলবার এ নিয়ে জরুরী সভা ডেকেছে উয়েফা। টুর্নামেন্টটি এক বছর পিছিয়ে নেয়া হতে পারে বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের খবরে এসেছে। একই সময়ে মাঠে গড়ানোর কথা আছে লাতিন আমেরিকার ফুটবলের সর্বোচ্চ প্রতিযোগিতা কোপা আমেরিকার। আর জুলাই-অগাস্টে হওয়ার কথা টোকিও অলিম্পিকের আসর। এই দুই প্রতিযোগিতা নিয়ে অবশ্য এখনও কোন শঙ্কার খবর আসেনি। যদিও আয়োজন নিয়ে চাপে বা চিন্তায় আছে জাপান সরকার। তবে চূড়ান্ত কিছু এখনও জানায়নি তারা। তবে নির্ধারিত সময়ে অলিম্পিক শুরু না হওয়ার সম্ভবনাই বেশি। আর আগামী অক্টোবর-নবেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় বসবে এ বছরের টি-২০ ক্রিকেট বিশ্বকাপ। এর ভবিষ্যত সময়ই ভাল বলতে পারবে।
×