ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ শুরু আজ

প্রকাশিত: ১১:৫৭, ১৫ মার্চ ২০২০

বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ শুরু আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ করোনাভাইরাসের এমন আতঙ্কের মধ্যেও লীগ হবে। সবার মধ্যেই বিস্ময়। আছে প্রশ্নও। বিশ্বে করোনাভাইরাস শুধু ছড়িয়েই পড়েনি, তার প্রভাবও ভালভাবেই দেখা যাচ্ছে। ক্রীড়াঙ্গনেও এর ছোঁয়া লেগেছে। আর তাই ইভেন্ট, লীগ, সিরিজ; এক এক করে সব বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ (ডিপিডিসিএল) ঠিকই চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই সতর্কতা অবলম্বন করে এ লীগ আজ শুরু হচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ক্রীড়াঙ্গনের সব আয়োজনই বঙ্গবন্ধুর নামে নামকরণ করা হয়েছে। ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগও বঙ্গবন্ধুর নামে এবার হবে। লীগের নামকরণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ। যে লীগ আজ থেকে শুরু হবে। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আবাহনী লিমিটেড ও পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাব, বিকেএসপি ৪ নম্বর মাঠে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ও ওল্ড ডিওএইচএস স্পোর্টস ক্লাব এবং ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে প্রাইম দোলেশ্বর স্পোর্টিং ক্লাব ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন মুখোমুখি হবে। ম্যাচগুলো সকাল ৯টায় শুরু হবে। এ লীগের স্পন্সর আবারও হয়েছে ওয়ালটন গ্রুপ। টানা নবমবারের মতো তারা স্পন্সর হয়েছে। কিন্তু লীগ নিয়ে যখন শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন হলো তখন সম্মেলনজুড়ে থাকল করোনাভাইরাস প্রসঙ্গ। থাকারই কথা। আতঙ্ক যে আছে। লীগে দেড় শ’র ওপরে ক্রিকেটার খেলবেন। আবার আছেন কোচ, কর্মকর্তা। সবমিলিয়ে দুই শ’ ছাড়াবে। ম্যাচ যখন চলবে তখন ক্রিকেটাররা একসঙ্গে থাকবেন। কোনভাবে যদি একজনের করোনাভাইরাস থাকে তাহলে সবার মধ্যেই তা মুহূর্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। তা নিজের হয়ে পরিবার, পরিবার হয়ে আত্মীয়স্বজন, আত্মীয়স্বজন হয়ে বড় আকারে ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না। এই আতঙ্ক তো এখন আর চাইলেই দূর করা যাবে না। এরমধ্যে লীগ হওয়াটা কতটা যৌক্তিক তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। বিসিবির প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরী সুজন সাবধানতা অবলম্বন করার দিকেই জোর দিয়েছেন। বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসকে বিবেচনায় রেখে সরকার যে সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে ও চিকিৎসা পরামর্শ দিয়েছে সেগুলো আমরা অনুসরণ করব। কোন খেলোয়াড় বা অফিসিয়াল একটু অসুস্থ হলে বা কোন উপসর্গ ধরা পড়লে তখনই যেন তারা বিসিবির মেডিক্যাল টিম ও ক্লাবকে জানায়। ক্লাব যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে, আমরা সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘হ্যান্ডশেকের যে রীতি আছে সেটা কিভাবে কমানো যায় সেটা নিয়ে আমরা ভাবব। আমরা এটাতে অভ্যন্ত হয়ে গেছি। কিন্তু এখন আমরা নিরুৎসাহিত করছি হ্যান্ডশেক না করতে। আমরা আন্তর্জাতিক ম্যাচে দর্শক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ঢাকা লীগের ম্যাচে হয়তো দর্শকদের জন্য বিধিনিষেধের প্রয়োজন হবে না। তারপরও আমরা বিষয়টিকে গুরুত্ব সহকারে দেখব। ’ লীগ যদি শেষ পর্যন্ত সাময়িক স্থগিত না হয় তাহলে আজ শুরু হয়ে শেষ হবে ৮ মে। রাউন্ড রবীন লীগ পদ্ধতিতে খেলা হবে। বরাবরের মতো ১২ দল অংশ নেবে। আবাহনী, রূপগঞ্জ, দোলেশ্বর, শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব, প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাব, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড, শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব, গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স, খেলাঘর সমাজকল্যাণ সমিতি, ব্রাদার্স ইউনিয়ন, ওল্ড ডিওএইচএস ও পারটেক্স অংশ নেবে। লীগপর্বে প্রতিটি দল পরস্পরের বিরুদ্ধে একবার করে লড়াই করবে। লীগপর্বের লড়াই শেষে পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকা ছয়টি দল খেলবে সুপার লীগ। সুপার লীগে ছয় দলের লড়াইয়ে যে দল শেষ পর্যন্ত পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষে থাকবে তারাই চ্যাম্পিয়ন হবে। লীগপর্ব শেষে পয়েন্ট তালিকায় যে তিনটি দল নিচের সারিতে থাকবে, তারা রেলিগেশন লীগ খেলবে। লীগপর্ব ২৭ এপ্রিল শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর ৩০ এপ্রিল সুপার লীগ শুরু হয়ে ৮ মে শেষ হওয়ার কথা। এরমধ্যে লীগও শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। রেলিগেশন লীগ ৩ মে শুরু হয়ে ৭ মে শেষ হয়ে যাওয়ার সূচী রয়েছে। প্রতিদিন তিনটি করে ম্যাচ হবে। লীগে মোট ৮৪টি ম্যাচ হবে। এর মধ্যে লীগপর্বে ৬৬টি, সুপার লীগে ১৫টি ও রেলিগেশন লীগে ৩টি ম্যাচ হবে। রেলিগেশন লীগে যে দল পয়েন্ট তালিকায় সবার নিচে থাকবে তারা প্রথম বিভাগে নেমে যাবে। লীগের ম্যাচগুলো প্রথমে তিন রাউন্ড কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের ১ ও ২ নম্বর মাঠে, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হওয়ার কথা ছিল। এরপর মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে, নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে, সাভারের বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩ ও ৪ নম্বর মাঠে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রভাবে এশিয়া ও বিশ^ একাদশের ম্যাচ স্থগিত হয়েছে। তাই ঢাকাতেই শুরু থেকে খেলা হবে। লীগের ওয়ানডে ফরমেটের খেলা শেষে যে ছয়টি দল সুপার লীগে খেলেছে, তারা একটি টি২০ লীগও খেলবে। সেই লীগের নামকরণও বঙ্গবন্ধুর নামে করা হয়েছে। দেখতে দেখতে ৪৬ বছর হয়ে গেছে লীগের। শুরুটা হয়েছিল ১৯৭৪ সালে। সেই থেকে ২০১৩-১৪ মৌসুমের আগ পর্যন্ত ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ লিস্ট এ ক্রিকেটের মর্যাদা পায়নি। এখন এই মর্যাদা নিয়েই খেলা হচ্ছে। এবার লীগে আবার দলবদলের পুরনো নিয়মে চলে গেছে। ক্রিকেটাররা স্বাধীনভাবে উন্মুক্তভাবে দল নির্বাচন করতে পেরেছেন। আগের মতো ‘প্লেয়ার্স ড্রাফট’ রাখা হয়নি। যেখানে দলগুলো পছন্দমতো ক্রিকেটার দলে ভেড়াবে। নির্দিষ্ট করে পারিশ্রমিকও থাকবে। এবার ক্রিকেটাররা নিজেদের পারিশ্রমিক নিজেরাই নির্ধারণ করতে পেরেছেন। দলও নিজেদের পছন্দমতো বাছাই করতে পেরেছেন। এবার আরেকটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে। প্রথমবারের মতো লীগে কোন বিদেশী ক্রিকেটার না খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দেশের ক্রিকেটের এবং ক্রিকেটারদের উন্নতির জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। যেন দেশের ক্রিকেটাররাই লীগে ভালভাবে খেলতে পারেন। ১৯৮০ সাল থেকে ঢাকা লীগে ওয়াসিম আকরাম, সনথ জয়সুরিয়া, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, নেইল ফেয়ারব্রাদারের পর রমন লাম্বা, অশোক মালহোত্রা, অরুণ লাল, আথুলা সামারাসেকারা, ওয়াসিম জাফর, আকাশ চোপড়া, উন্মুক্ত চান্দ, জালাজ সাক্সেনাদের মতো ক্রিকেটারদের সঙ্গে ইংল্যান্ড, আফগানিস্তান, জিম্বাবুইয়ের ক্রিকেটাররা নিয়মিত খেলেছেন, সেই পথ বন্ধ হয়ে গেছে এবার। কোন বিদেশী ক্রিকেটার লীগে খেলতে পারবেন না। আর তাই দেশী ক্রিকেটারদের ওপরই দলগুলোকে ভরসা করতে হচ্ছে। বিদেশী ক্রিকেটাররা না খেলায় ভালই হয়েছে। মাঝপথে লীগ ছেড়ে দেশে চলে যাওয়ার ঝামেলা নেই। কিন্তু দেশী ক্রিকেটারদেরও এ মুহূর্তে লীগে খেলতে দেয়া কী ঠিক হচ্ছে? এমন প্রশ্ন উঠছে। জাতীয় দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ও প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল উদ্বিগ্ন। তিনি বলেছেন, ‘আমরা সবাই এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে পুরো বিশ্ব যত দ্রুত বেরিয়ে আসতে পারে সেটাই মঙ্গল। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনে একটা একটা করে খেলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। যারা দায়িত্বে আছেন তারা নিশ্চয়ই অনেক চিন্তা-ভাবনা করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আপাতত আমাদের বলা হয়েছে খেলতে। আমরা খেলার জন্য প্রস্তুত। সামনে যে সিদ্ধান্তই আসবে, আমরা সেটি মেনে চলব।’ আবাহনীর অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম অবশ্য বলেছেন, ‘অন্য অনেক দেশে খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়েছে, আমাদের দেশেও কয়েকজন শনাক্ত হয়েছে, আমার কাছে মনে হয় যতটা সতর্কতা অবলম্বন করা যায়। আমরা খেলোয়াড়, যদি না খেলি তাহলে পেট চলবে কিভাবে? সবাই যদি নিজ নিজ কর্তব্য পালন করে, সেটা শুধু নিজের নয়, অন্যরা উপকৃত হবে। অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। আপনারা দেখেছেন কোথাও কোথাও খেলা চলছে, গ্যালারি খালি করে হলেও। আমরা যদি সবাই একসঙ্গে কাজ করতে পারি, তাহলে ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে। সবার আগে জীবন।’ মুশফিক শেষ পর্যন্ত সবার আগে জীবনকেই বেছে নিয়েছেন। তা করারই কথা। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই যে লীগ হবে, ঝুঁকি নিয়েই কী তা হচ্ছে না? সেই প্রশ্ন থাকছেই।
×