ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমিনারে খাদ্যমন্ত্রী

বিবেক জাগ্রত না হলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে না

প্রকাশিত: ১১:৫০, ১৫ মার্চ ২০২০

বিবেক জাগ্রত না হলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে না

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতে এবং খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। তিনি বলেন, কেউ যাতে খাদ্যে ভেজাল দিতে না পারে সে জন্য ঐক্যবদ্ধ হয়ে গ্রাম থেকে ইউনিয়ন ও জেলা পর্যায়ে মানুষকে সচেতন করে তুলতে হবে। পাশাপাশি একে অপরের দোষারোপ না করে প্রত্যেকের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। তাহলে সম্ভব হবে ভেজালমুক্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা। যার যার অবস্থান থেকেও ভেজালের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান। শনিবার রাজধানীর ফার্মগেটে অবস্থিত কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে নিরাপদ খাদ্য নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই আহ্বান জানান। ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ফোরাম এই ‘সেইফ ফুড ফর অল: কমিটমেন্ট টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে মন্ত্রী আরও বলেন, সরকার ভেজালের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে। নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের জনবল বাড়ানো হচ্ছে। এখন থেকে খাদ্য কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সারাদেশে ভেজালের বিরুদ্ধে মনিটরিং করা হবে। প্রত্যেক জেলায় অফিস করা হয়েছে। জনবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। খাদ্য নিরাপদ কিনা তা পরীক্ষার জন্য আট বিভাগীয় শহরে আধুনিক মানের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হবে। এছাড়া জেলা শহরের ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলে তৃণমূল পর্যায়ে থেকেই ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রাইমারী স্কুলসহ সব স্কুলে ক্লাস লেকচারের আগে দুমিনিট ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে ভেজাল ও মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তুলতে এবং নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে পাঠ্য বইয়ে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এছাড়াও বাজার মনিটরিং করা ও রেস্টুরেন্টগুলোতে গ্রেডিংয়ের কাজ চলছে। তিনি বলেন একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে না। এজন্য সবার বিবেক জাগ্রত করতে হবে। মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। এ্যাগ্রোবেস প্রতিষ্ঠানগুলোতে এ বিষয়ে আরও দায়িত্ববান হতে হবে। কারণ ফুড প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রেই বেশি ভেজাল হয়। ফলের জুস তৈরিতে প্রিজারভেটিভ দেয়া হয়। প্রিজারভেটি দেয়া দোষের নয়। কিন্তু এর সীমা-পরিসীমা সম্পর্কে জ্ঞান থাকতে হবে। কম শিক্ষিত লোক নিয়োগ করে খাবার প্রসেস করলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে না। এ কারলে উচ্চ শিক্ষিত এবং অভিজ্ঞ লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। বিদেশের বেশি দামের জুস কিনে খাবেন আর নিজের উৎপাদনের জুসে কোন ভরসা নেই তা হবে না। যারা এই খাদ্য প্রসেসের সঙ্গে জড়িত তাদের খাদ্যের মান নিশ্চিতে ওয়াদা থাকতে হবে। এ সময় তিনি একটি মিষ্টি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ টেনে বলেন দেশের সেরা মিষ্টি হিসেবে খ্যাত হলেও মানের দিক দিয়ে ওই মিষ্টি কোন গ্রেডেই পড়ে না। যে পরিবেশে মিষ্টি তৈরি হয় তা কেউ একবার দেখলে একনম্বর মিষ্টি খেতে চাইবে না। একবার খোঁজ নিয়ে দেখা গেল সাভারের একটি কারখানায় নোংরা পরিবেশে মিষ্টি উৎপাদন করা হয়। ওই এক নম্বর মিষ্টির কারখানা খুঁজে বের করতেও বেগ পেতে হয়েছে। সাভারে অনেক ভেতরে উৎপাদন করে। নোংরা পরিবেশে উৎপাদনের কারণে জরিমানা করা হয়েছিল। জানি না তাদের অবস্থার কোন পরিবর্তন হয়েছে কিনা। নিজেদের বিবেক জাগ্রত না হলে ভেজাল প্রতিরোধ করা যাবে না। তিনি বলেন, বাজারে আজ কত জাতের চাল বিক্রি করা হয়। এগুলোর আবার দামও চড়া। কিন্তু সত্যিকারের এই নামে কোন ধান বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না। বাজারে নাজিরশাইল, মিনিকেট কত কি চাল বিক্রি হয়। এই নাজিরশাইল বা মিটিকেট নামে কোন ধান নেই। এগুলো ব্যবসায়ীদের কারসাজি। জিরাশাইল থেকেই নাজিরশাইল করা হচ্ছে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, খাদ্যে ভেজাল প্রতিরোধে বিএসটিআইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। এছাড়া যারা নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করেন তাদের ঘন ঘন সেমিনার সিম্পোজিয়াম করতে হবে। রাজধানী কেন্দ্রিক সেমিনার সিম্পোজিয়ামে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। এ ধরনের সেমিনার সারাদেশে জেলা উপজেলা পর্যায়ে করতে হবে। তাহলে লোকে ভেজালের বিরুদ্ধে সচেতন হবে। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস নিয়ে যতটা হুলুস্থুল তৈরি করছি এবং সচেতনতা তৈরির জন্য যে প্রচার চালাচ্ছি, নিরাপদ খাদ্যের ক্ষেত্রে অনুরূপ হুলুস্থুল করলে নিরাপদ খাদ্য পাওয়া সম্ভব হবে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, যারা খাদ্যে ভেজাল দেবে তাদের শাস্তি নিশ্চিত মৃত্যুদ-। আজ এত বছর পর এসে মানুষকে শিক্ষা দিতে হয় যে, ভেজাল খাওয়া যাবে না। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যে কৃষক ফসল ফলায় সে কি অপরাধ করেন?
×