ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাড়িতে মাদক পাওয়া গেছে- ডিসি ॥ ডিইউজের উদ্বেগ

কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে ধরে এনে জেল ॥ তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৫ মার্চ ২০২০

কুড়িগ্রামে সাংবাদিককে ধরে এনে জেল ॥ তদন্ত শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এক বছরের কারাদন্ড দেয়ার ঘটনা তদন্তে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। শনিবার দুপুরে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (জেলা ও মাঠপ্রশাসন অনুবিভাগ) আ. গাফ্ফার খান এ তথ্য জানান। এদিকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোছা. সুলতানা পারভীন বলেছেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আরিফুলের বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা শুনেছি। সংশ্লিষ্ট (রংপুরের) বিভাগীয় কমিশনার প্রাথমিক তদন্ত করে রবিবারের মধ্যে আমাদের জানাবেন। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজনে বিস্তারিত খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সবকিছু নির্ভর করছে প্রাথমিক তদন্তের উপরে।’ বর্তমানে রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন অতিরিক্ত সচিব কে এম তারিকুল ইসলাম। তদন্তের বিষয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে তদন্তের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা ইতোমধ্যে কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আবু তাহের মোঃ মাসুদ রানা কুড়িগ্রামের উদ্দেশে চলে গেছেন। আশা করি আজ-কালের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠিয়ে দিতে পারব। সাংবাদিক আরিফুলের পরিবার দাবি করেছে, শুক্রবার দিবাগত মধ্যরাতে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের দুই-তিন জন ম্যাজিস্ট্রেট ১৫-১৬ আনসার সদস্যকে নিয়ে দরজা ভেঙ্গে তার বাসায় ঢোকেন। তবে তারা কোন তল্লাশি চালাননি বাসায়। পরে ডিসি অফিসে নেয়ার পর তারা দাবি করেন, আরিফুলের বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড় শ’ গ্রাম গাঁজা পাওয়া গেছে। এরপর ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাকে কারাদ- দিয়ে জেলে পাঠানো হয়। আরিফুলের পরিবারের দাবি, বর্তমানে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) হিসেবে রয়েছেন মোছা. সুলতানা পারভীন। তিনি একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল এ বিষয়ে নিউজ করার পর থেকেই তার ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন ডিসি। এদিকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক জনকণ্ঠকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে সাংবাদিক আরিফের বাড়িতে টাক্সফোর্স অভিযান চালায়। তার বাড়ি থেকে মাদক উদ্ধার করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এক বছর আগে তিনি একটি মিথ্যা রিপোর্ট করেছিলেন। সেখানে একটি পুকুর সংস্কার করা হয়েছে। তার নাম ‘নিউটন পার্ট’ পুকুর। এটি এখনও উদ্বোধন করা হয়নি। আর এটি কারও ব্যক্তিগত নামে নামকরণের কোন সুযোগ নেই। ডিসি আরও বলেন, ওই পুকুরের পাড়ে মদকের আখড়া ছিল। পুকুরটি সংস্কার করার পর সেখানে সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। সংবাদিক ইউনিয়নের বিবৃতি ॥ সম্প্রতি দেশব্যাপী সাংবাদিক সমাজের ওপর অব্যাহত হামলা-মামলা ও হয়রানি-নির্যাতনে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে)। সংগঠন দুটি বলেছে, কুড়িগ্রামের সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে মধ্যরাতে বাসভবন থেকে একটি মহল তুলে নিয়ে যাওয়ায় সাংবাদিকদের মধ্যে চরম নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। শনিবার বিএফইউজে সভাপতি মোল্লা জালাল, মহাসচিব শাবান মাহমুদ, ডিইউজে সভাপতি কুদ্দুস আফ্রাদ ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদ আলম খান তপু এক যৌথ বিবৃতিতে এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। বিবৃতিতে বিএফইউজে ও ডিইউজের নেতারা বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী ও রিপোর্টার আল-আমীনের মামলা সাংবাদিক সমাজের কাছে কখনই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রকাশিত রিপোর্টে কারও নাম না থাকলেও মানবজমিন সম্পাদক ও রিপোর্টারের বিরুদ্ধে মামলা বাক-স্বাধীনতা তথা সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপের শামিল। এছাড়া বেশ কয়েকদিন যাবত সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল নিখোঁজ থাকলেও তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন বক্তব্য না পাওয়ায় নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সাংবাদিক সমাজ।
×