ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মাণ প্রকল্প উদ্বোধন

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম যাচ্ছে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায়

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৫ মার্চ ২০২০

পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম যাচ্ছে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায়

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজধানীবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। নিমতলী বা চুড়িহাট্টায় অগ্নিকা-ের সেই ভয়াবহতা থেকে মুক্তি দিতে পুরান ঢাকার রাসায়নিক গুদাম নিয়ে যাওয়া হচ্ছে টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায়। সেখানে নির্মাণ করা হচ্ছে অস্থায়ী কেমিক্যাল গুদাম। শনিবার টঙ্গীর কাঁঠালদিয়ায় রাসায়নিক গুদাম নির্মাণ প্রকল্পের উদ্বোধন করা হয়। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল মিলে এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুল হালিমের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন (বিএসইসি)’র চেয়ারম্যান রইছ উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক মনিরুজ্জামান খান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে গাজীপুর জেলায় টঙ্গীর কাঁঠালদিয়া মৌজায় বিএসইসির নিজস্ব ৬ একর জায়গার ওপর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ৯১ কোটি ৭৪ লাখ ৪৬ হাজার। তারমধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরে পরিকল্পনা কমিশন বিশেষ থোক বরাদ্দ থেকে প্রকল্পের অনুকূলে ১৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডকইয়ার্ড এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেড প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই অস্থায়ী রাসায়নিক গুদাম চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। কেমিক্যাল গুদাম স্থানান্তরের জন্য ৫৩টি শেড নির্মাণ করা হবে। প্রত্যেক শেড হবে ৩৫ ফুট চওড়া ও লম্বা। উচ্চতা হবে ১৫ ফুট। এ ছাড়া আলাদা দুটি ভবনে প্রত্যেক গুদামের জন্য অফিস থাকবে। বিএসইসির ব্যবহারের জন্য একটি অফিস ভবন থাকবে। এক লাখ গ্যালন পানির ধারণ ক্ষমতার ওভারহেড পানির ট্যাঙ্ক ও এক লাখ গ্যালন ধারণ ক্ষমতার আন্ডারগ্রাউন্ড পানির ট্যাঙ্ক থাকবে। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, ট্রান্সফরমার, জেনারেটর, ফায়ার হাইড্র্যানন্টসহ স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা স্থাপন করা হবে। সংযোগ রাস্তার আরসিসি ড্রেন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণসহ আনুষঙ্গিক কাজ করা হবে। থাকবে সিসি ক্যামেরা, অনলাইন মনিটরিং পদ্ধতি, স্বয়ংক্রিয় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, ড্রেন, রাস্তা ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হবে। অনুষ্ঠানে শিল্পমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার সাময়িকভাবে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য মুন্সীগঞ্জে বিসিক কেমিক্যাল শিল্পনগরী গড়ে তোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, এ শিল্পনগরী স্থাপনের পরপরই অস্থায়ী গুদাম থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের ব্যবসায়ীদের স্থায়ীভাবে সরিয়ে মুন্সীগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন কাঁঠালদিয়ার এই অস্থায়ী গুদাম ও স্থাপনা বিএসইসির অঙ্গ প্রতিষ্ঠান ঢাকা স্টিল ওয়ার্কস লিমিটেড ব্যবহার করবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে পুরান ঢাকার জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকায় রাসায়নিক কেমিক্যাল গুদাম আমাদের অনেক মানুষের জীবন বিপন্ন করেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ঢাকা থেকে কেমিক্যাল গুদাম অপেক্ষাকৃত কম ঘনবসতি এলাকায় সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণ করা হবে। যেহেতু মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান এলাকার কেমিক্যাল পল্লীর কাজ শেষ হতে অনেক সময় লাগবে। তাই আপাতত আর যাতে নিমতলীর ঘটনা না ঘটে সেজন্য এই প্রকল্প নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই শেষ হবে। এরপর পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গুদাম টঙ্গিতে চলে আসবে। এখানে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে কেমিক্যাল গুদাম নির্মাণ করা হবে। এই প্রকল্প এলাকায় কোন রকম অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনার ঘটার সম্ভাবনা নেই। চারদিকে উঁচু দেওয়াল দেয়া হবে। যেন এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। প্রতিমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকারী কাজের একটা বদনাম আছে কোন প্রকল্প শুরু করলে ধীরগতিতে আগায়। তাই নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বলব কোনভাবেই যেন ডিসেম্বর অতিক্রম না করে। প্রকল্প এলাকার ক্ষতিগ্রস্তদের যৌক্তিক ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে বলে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, অবশ্যই যতটুকু সম্ভভ ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে। বস্তিবাসীদের উদ্দেশে বলেন, আপনারা যারা যে এলাকা থেকে আসছেন এলাকায় চলে যান, মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না। আপনাদের প্রত্যেকের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামমুখী হবে তাদের বাড়ি নির্মাণ করে দেয়া হবে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি আকর্ষণ করে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী রাসেল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় এই প্রকল্পটি এখানে হচ্ছে। আমি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বলব যেহেতু একটি রাসায়নিক গুদাম, তাই সবার আগে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রকল্প যেন কোনভাবেই ঝুঁকির কারণ না হয়। এখানে যেন অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে গুদাম নির্মাণ হয়। নিজ নির্বাচনী এলাকায় নির্মাণ হতে যাওয়া প্রকল্প নিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুরান ঢাকার মানুষ যেমন দীর্ঘদিনের ঝুঁকি থেকে মুক্ত হবে তেমনি এই এলাকার মানুষের কথা চিন্তা করে এখানেও নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চকবাজারে এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন প্রাণ হারান। এ দুর্ঘটনায় গঠিত বিভিন্ন তদন্ত কমিটি বলেছে, একটি কেমিক্যাল গোডাউন থেকে আগুনের সূত্রপাত। সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠক করে ওই বছরের ২৫ ফেব্রুয়ারি ছয় মাসের মধ্যে গোডাউন সরানোর ঘোষণা দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়। পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি শিল্প সচিব মোহাম্মদ আবদুল হালিম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে ঝুঁকিপূর্ণ কেমিক্যাল অস্থায়ীভাবে স্থানান্তরের জন্য শ্যামপুর ও টঙ্গীতে শেড নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় শিল্প মন্ত্রণালয়।
×