ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

পুড়েছে ৫০ ঘর

শিয়ালবাড়ির আগুন না নিভতেই মিরপুরের ঝুটপট্টিতে অগ্নিকাণ্ড

প্রকাশিত: ১১:০৭, ১৫ মার্চ ২০২০

শিয়ালবাড়ির আগুন না নিভতেই মিরপুরের ঝুটপট্টিতে অগ্নিকাণ্ড

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মিরপুরের শিয়ালবাড়ি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই মিরপুরের ঝুটপট্টিতে বড় ধরনের অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। যদিও আগুনে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে ঝুটপট্টির অন্তত ৫০ ঘর পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঝুটপট্টির আশপাশের অন্তত আরও ৫০ নিম্ন আয়ের মানুষের বাড়িঘর। এসব বাড়ি অনেকটাই বস্তির মতো ঘর তুলে গড়ে তোলা হয়েছে। অগ্নিকা-ের কারণে আশপাশের এলাকার সব রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কোন কোন রাস্তায় স্বাভাবিক কারণেই যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তিন ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে পুরো এলাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। শনিবার বেলা দেড়টার দিকে ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বর এলাকার ঝুটপট্টিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট ঘটনাস্থলে হাজির হয়। টানা দুই ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ শেষ হয় বিকেল পাঁচটায়। অগ্নিকা-ের কারণে আশপাশের রাস্তায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি সাময়িকভাবে মেট্রোরেলের কাজ করতেও অসুবিধা হয়েছে কর্মরতদের। স্থানীয়রা জানান, বহু বছর ধরে মিরপুরের এই ঝুটপট্টি গড়ে উঠেছে। কমপক্ষে শতাধিক ঝুটের গুদাম বা দোকান গড়ে উঠেছে সেখানে। এখানে মিরপুর এলাকার সব গার্মেন্টসের ঝুট নামে। সেখানে ঝুট বাছাইয়ের কাজ চলে। আর ঝুট বাছাইয়ের কাজটি করে থাকেন নিম্ন আয়ের মানুষরা। যাদের মধ্যে নারী ও কম বয়সী শিশু-কিশোরদের সংখ্যাই বেশি। তারা খুবই কম টাকায় কাজটি করেন। এজন্য তারা বাসায় যাতায়াতের খরচ বাঁচাতে ঝুটপট্টির পাশেই ছোট ছোট বস্তি ঘর তুলে বসবাস করেন। এমন ঘরের সংখ্যা কম করে হলেও দুই শ’। বিশেষ করে ঝুটপট্টির কাছের করবস্থানসহ আশপাশের এলাকায় বস্তির মতো ছোট ছোট ঘর গড়ে উঠেছে সবচেয়ে বেশি। এসব ঘরে বসবাস করছেন ঝুটের কাজের সঙ্গে জড়িত নিম্ন আয়ের মানুষরা। শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে ঝুটপট্টির মাঝামাঝি জায়গা থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় আর ঝুটি খুবই দাহ্য হওয়ায় আগুন দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বিশেষ করে প্রচ- তাপের কারণে এমনটিতেই ঝুটি শুষ্ক ছিল, তার মধ্যে বড় ধরনের আগুন লাগার কারণে তা বারুদের মতো জ্বলতে থাকে। মুহূর্তেই পুড়তে থাকে ঝুটপট্টি ও আশপাশে থাকা বস্তি ঘরগুলো। এ সময় মানুষ ঝুটের গুদাম থেকে বেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য ছুটতে থাকেন। অনেক নারীর কোলে ছোট শিশু সন্তানও ছিল। আগুনে অন্তত ৫০টি ঝুটের গুদাম পুড়ে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে কয়েক কোটি টাকা। আর ঝুটের গুদামের সঙ্গে থাকা অন্তত ৫০টি ছোট বস্তির মতো ঘরও পুড়ে গেছে। এতে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন শতাধিক মানুষ। যদিও তারা আশপাশের অন্য ঘরে ও বস্তির ঘরগুলোই সাময়িকভাবে আশ্রয় নিয়েছেন। ফায়ার সার্ভিসের তৎপরতার কারণে আগুন আশপাশের বাড়িঘরে ছড়াতে পারেনি। এমনকি হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি। ফায়ার সার্ভিস সদর দফতরের টেলিফোন অপারেটর আইরিন পারভীন জনকণ্ঠকে জানান, বেলা দেড়টার দিকে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট দুই ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা সাড়ে তিনটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। অগ্নিকা-ে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। বিকেল পাঁচটার দিকে অগ্নিনির্বাপণ সম্পূর্ণভাবে শেষ হয়। প্রসঙ্গত, গত ১১ মার্চ সকাল প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকার রূপনগরের শিয়ালবাড়ি বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকা-ে অন্তত সাত হাজার ঘর পুড়ে যায়। গৃহহীন হয়ে পড়েন প্রায় ত্রিশ হাজার বস্তিবাসী। যদিও কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। নিকট অতীতে এতবড় অগ্নিকা-ের ঘটনা আর ঘটেনি। ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত তদন্ত কমিটি কাজ করছে।
×