ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

৩১ মার্চ পর্যন্ত ইউরোপ ও করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে কেউ আসতে পারবে না;###;বিদেশীদের পাশাপাশি বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর;###;বাংলাদেশে সব ধরনের অন-এ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ;###;আজ রাত ১২টা ১মিনিট থেকে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হবে ॥ পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ইউরোপ থেকে ঢাকা আসা বন্ধ ॥ ব্যতিক্রম ব্রিটেন, পণ্যবাহী কার্গো বিমান চলবে

প্রকাশিত: ১০:৫৩, ১৫ মার্চ ২০২০

ইউরোপ থেকে ঢাকা আসা বন্ধ ॥ ব্যতিক্রম ব্রিটেন, পণ্যবাহী কার্গো বিমান চলবে

নিখিল মানখিন ॥ বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় এবং বিভিন্ন দেশে মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত ইউরোপ ও করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে বাংলাদেশে কেউ আসতে পারবেন না। বিদেশীদের পাশাপাশি বাংলাদেশীদের ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। এ সকল দেশ থেকে বাংলাদেশে আসা সকল ফ্লাইট বন্ধ করেছে সরকার। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ সব ধরনের অন-এ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ করে দিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানান, দেশে নতুন করে আরও দুইজন করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়ায় সরকার এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এ ব্যাপারে মোট চারটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম সিদ্ধান্ত হচ্ছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ যে সব দেশ করোনায় বিপর্যস্ত অবস্থায় রয়েছে সে সব দেশের সঙ্গে আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিমান যোগাযোগ বন্ধ থাকবে। এ সময় সে সব দেশের লোকদের দেশে আসা বন্ধ থাকবে, একমাত্র ইংল্যান্ড ছাড়া। আজ রবিবার রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। তবে পণ্যবাহী কার্গো বিমান চলাচল অব্যাহত থাকবে। দ্বিতীয়ত যে সব দেশ ইতোমধ্যে বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সে সব দেশের নাগরিকদেরও বাংলাদেশে প্রবেশের ক্ষেত্রে ৩১ মার্চ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা থাকবে। ভারত, নেপাল, সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত প্রভৃতি দেশের নাগরিকদের ক্ষেত্রেও এ সিদ্ধান্ত প্রযোজ্য হবে। কারণ ভারতেও বাংলাদেশী নাগরিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। তৃতীয় সিদ্ধান্ত হলো আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশ্বের সব দেশের নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে প্রবেশে অন-এ্যারাইভাল ভিসা বন্ধ থাকবে। চতুর্থ সিদ্ধান্ত করোনাভাইরাস উপদ্রুত দেশ থেকে যে সকল বাংলাদেশী দেশে আসবেন তাদের বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, দেশের জনগণের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আরও অনেক দেশও করোনা মোকাবেলায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশও এই পরিস্থিতিকে অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন আরও বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করোনা মোকাবেলায় যে প্রস্তাব করেছেন, উপমহাদেশের সব রাষ্ট্র যৌথভাবে তা ফেস করবে, আমরাও এ বিষয়ে সম্মত হয়েছি। সার্কের রাষ্ট্রপ্রধানদের নিয়ে এ বিষয়ে একটি ভিডিও কনফারেন্স হবে। আজ রবিবার বিকেল ৫টায় (নয়াদিল্লীর সময় অনুযায়ী) এটি অনুষ্ঠিত হবে। সাতটি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ভিডিও কনফারেন্সে মিলিত হবেন। বাংলাদেশে নতুন করে আরও দুজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় সরকার এসব জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। নতুন আক্রান্তদের একজন ইতালি ফেরত, আরেক জন জার্মানি ফেরত। তাদের হাসপাতালে রাখা হয়েছে। ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ খুবই দরকার ॥ দেশের হাসপাতালগুলোর বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ‘হোম কোয়ারেন্টাইন’ খুবই দরকার বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডাঃ জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার সময় পজিটিভ উপসর্গ না পেলে আশকোনা হজ ক্যাম্পে রাখা ইতালি ফেরত ১৪২ জন বাংলাদেশীকে সরকারী তত্ত্বাবধানে নিজ নিজ বাসায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। আরও শতাধিক ইতালি ফেরত বাংলাদেশী আজ রবিবার বাংলাদেশে আসতে পারেন। দেশে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে ইতোমধ্যে দু’জন সুস্থ হয়েছেন এবং আক্রান্ত তৃতীয় জনের সর্বশেষ পরীক্ষায় ভাইরাস পাওয়া যায়নি। আরেকটি পরীক্ষায় নেগেটিভ পাওয়া গেলে তাকেও সুস্থ (করোনাভাইরাসমুক্ত) বলে ঘোষণা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। অনেক বিদেশ ফেরত মানুষ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা মানছে না বলে অভিযোগ তুলেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। পাশাপাশি অনেক বিদেশ ফেরত মানুষ কোয়ারেন্টাইনে না গিয়ে শহরে আত্মগোপন করে বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আজ রবিবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, পররাষ্ট্র, বিমানসহ কয়েকটি মন্ত্রণালয়কে নিয়ে বিশেষ সভার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যেখানে করোনাভাইরাসে বিশ্বের শতাধিক দেশ আক্রান্ত এবং বর্তমান অবস্থাকে মহামারী ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, সেখানে বাংলাদেশও ঝুঁকির বাইরে থাকতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, চীনে আক্রান্ত হওয়ার প্রাথমিক সময় থেকেই বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াসভাবে গ্রহণ করে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে বাংলাদেশ। আক্রান্ত দেশগুলো এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্দেশিত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অনুযায়ী ধাপে ধাপে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে। পূর্ব প্রস্তুতি থাকার কারণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে আক্রান্তের সংখ্যা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশ মোট তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে দুজন আগেই সুস্থ হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে গেছেন। আরেকজন সুস্থ হলেও হাসপাতাল ছেড়ে যাননি। অপরজন, অর্থাৎ সর্বশেষ যে ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন তার প্রথম রক্ত পরীক্ষায় নেগেটিভ এসেছে। এখন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) প্রটোকল অনুযায়ী তার দ্বিতীয়বার পরীক্ষা করা হবে। এতে নেগেটিভ এলে তাকে করোনামুক্ত ঘোষণা করা হবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এদিকে, অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিদিন শত শত যাত্রী স্থল, জল, রেল ও বিমানযোগে বাংলাদেশে প্রবেশ করছেন। থার্মাল স্ক্যানারে স্বাভাবিক অবস্থার বেশি তাপমাত্রা ধরা পড়ার পর সংশ্লিষ্ট যাত্রীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে পারে না থার্মাল স্ক্যানার। প্রতিদিন শত শত বিদেশ ফেরতদের বন্দরসমূহে হোম কোয়ারেন্টাইন করার পরামর্শসহ স্বাস্থ্য কার্ড দিয়ে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। এসব যাত্রীর বড় অংশ স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টাইনে যেতে চায় না এবং তাদের অনেকে কোয়ারেন্টাইনের ভয়ে গ্রামে না গিয়ে শহরে শহরে অনেকটা স্বাধীনভাবে বসবাস ও অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফলে তারা কোয়ারেন্টাইনের বাইরে রয়ে যাচ্ছে, যা দেশের জন্য ঝুঁকি বলে অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিদেশ ফেরতদের কারণেই দেশে প্রথম তিনজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ বিষয়ে দেশের জনগণ এখন অনেক সচেতন। বিদেশ থেকে কেউ ঢুকলে প্রতিবেশীরাই তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে গঠিত জেলা-উপজেলার করোনাভাইরাস কমিটিগুলো খুব তৎপর। বিদেশ থেকে যারা আসছে তাদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। কেউ গোপন করলে তথ্য গোপনের যে আইন, তা প্রয়োগ হবে। সেখানে জেল-জরিমানার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বিদেশ থেকে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার কথা বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের লোক বাইরে অনেক। সবাই আসতে শুরু করলে আমাদের জন্য নিয়ন্ত্রণ করা কষ্টকর হবে। বিদেশ থেকে আসা সবাইকে ঢাকায় রাখার সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে প্রশাসনের তৎপরতায় কোন ঘাটতি নেই দাবি করে তিনি বলেন, কোন জেলায় কতজন কোয়ারেন্টাইন হচ্ছে, কিভাবে তারা আছে, প্রতিটি নিউজ আমাদের কাছে আছে। বর্তমানে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ ইতালি ফেরত বাংলাদেশীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, ইতালি থেকে ফেরত আসা ১৪২ বাংলাদেশীকে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশকোনা হজ ক্যাম্পে রাখা হয়েছে। এই ১৪২ জনের সবাই শনিবার সকালেই বাংলাদেশে ফিরেছেন। এখানে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। করোনা শনাক্ত না হলে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশ দেয়া হতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ওপর। প্রাথমিক পরীক্ষায় ইতালি ফেরত এই ব্যক্তিদের মধ্যে কোভিড-১৯ রোগের কোন লক্ষণ দেখা যায়নি। পরীক্ষা শেষে তাদের মধ্যে করোনা পাওয়া না গেলে তাদের পুলিশ এস্কট করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হবে এবং হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হবে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে সচেতন হয়ে নিজ নিজ অবস্থান থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী চললে আমরা আরও বেশি আশঙ্কামুক্ত থাকতে পারি বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানেই করোনাভাইরাস রোগী নন। দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সন্দেহজনক ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের(আইইডিসিআর) অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। করোনাভাইরাসের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রবিবার তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সন্দেহে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়েছে। কিন্তু তাদের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। এ পর্যন্ত ২১১টি নমুনার পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমাদের কাছে ৩৭০৬টি কল এসেছে, সেগুলোর মধ্যে ৩৬৭১টি কলই করোনাভাইরাস সংক্রান্ত। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছেন এমন সন্দেহে বিভিন্ন হাসপাতালে অন্তত ল্যাবরেটরি পরীক্ষা পর্যন্ত আইসোলেশনে আছেন ১০ জন। সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি ও সৌদি আরবের প্রবাসী বাংলাদেশী কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন। সিঙ্গাপুরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশী রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়নি বলে জানান অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা। এদিকে, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি কাজ করছে। কমিটি এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যা বেড়েছে। মানিকগঞ্জে হোম কোয়ারেন্টাইনে ২২১ জন ॥ মানিকগঞ্জে প্রতিদিনই হোম কোয়ারেন্টাইনে যাওয়া বিদেশ ফেরত ব্যক্তিদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। শনিবার নতুন করে বিদেশ ফেরত ৫২ জনকে পর্যবেক্ষণের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে মানিকগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় বিদেশ ফেরত ২২১ ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ না থাকলেও বিদেশ ফেরত হওয়ার কারণে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল আমিন আখন্দ। তিনি জানান, সবাইকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সদর হাসপাতালে পুরুষ ১২ জন ও নারী ৫ জনের জন্য মোট ১৭ বেডের আইসোলেশন ইউনিট তৈরি রাখা হয়েছে। এছাড়াও প্রস্তুত আছে ১০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন ইউনিট। টাঙ্গাইলে ২ জন ॥ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে টাঙ্গাইলে স্বাস্থ্য বিভাগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালসহ সব উপজেলা হাসপাতালে পৃথক আইসোলেশন ওয়ার্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে সিঙ্গাপুর ও চীন ফেরত দুইজনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তাদের শরীরে করোনাভাইরাসের কোন উপসর্গ পাওয়া যায়নি। হাসপাতালে প্রথমে ছয়টি বেড নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হলেও পরবর্তীতে পুরো ট্রমা সেন্টারের ১০০ বেডকে আইসোলেশন ওয়ার্ড করা হয়েছে। এছাড়াও ১১ উপজেলার প্রতিটিতে দুই থেকে আটটি করে বেড নিয়ে আইসোলেশন ওয়ার্ড খোলা হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ৩ জন ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ইতালি ফেরত তিন প্রবাসীকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, তাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের কোন লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা তিনজনই পুরুষ এবং তাদের বয়স ৩০-৪০ বছরের মধ্যে। আতঙ্ক যাতে না ছড়ায় সে জন্য তাদের নাম-পরিচয় গোপন রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। গত তিনদিন আগে ইতালি থেকে দেশে ফেরে তিন প্রবাসী। এরপর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে তাদেরকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ প্রদান করে। আখাউড়া ধরখার ইউনিয়নের একটি বাড়িতে তাদের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এখন তারা পুরোপুরি সুস্থ রয়েছে। এদিকে এখন পর্যন্ত জেলার কোথাও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোন রোগীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। ভাইরাস আক্রান্তের প্রস্তুতি হিসেবে জেলা সদর হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো আইসোলেশন ওয়ার্ড চালু রেখেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। জেলার বিজয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটিকে কোয়ারেন্টাইন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তাই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নারী ও পুরুষ ওয়ার্ডটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। করোনা আক্রান্ত অথবা উপসর্গ আছে এমন রোগীদের সেখানে পর্যবেক্ষণ করা হবে। সিভিল সার্জন মোঃ শাহ আলম বলেন, ইতালি থেকে আসা তিন প্রবাসীকে আমাদের মেডিক্যাল টিমের মাধ্যমে বুঝিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে তাদের কারও মধ্যেই করোনাভাইরাসের লক্ষণ বা উপসর্গ নেই। তারা সুস্থ। নেত্রকোনায় ৪ জন ॥ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সর্তকর্তায় নেত্রকোনার চারজন প্রবাসী গত বুধবার থেকে নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন চীন থেকে এবং বাকি তিনজন ইতালি থেকে এসেছেন। ওই চারজনের মধ্যে দু’জনের বাড়ি নেত্রকোনা সদর উপজেলায়। অপর দু’জনের বাড়ি কলমাকান্দা ও দুর্গাপুরে। সিভিল সার্জন ডাঃ তাজুল ইসলাম খান শনিবার এ প্রতিনিধিকে জানান, চারজনই বর্তমানে সুস্থ। তাদের কারও করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়নি। ১৪ দিন পর্যন্ত তাদের পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এর মধ্যে কোন উপসর্গ দেখা দিলে রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করে আইইডিসিআরকে খবর দেয়া হবে। তারা এসে নমুনা সংগ্রহ করবেন এবং চিকিৎসা পরামর্শ দেবেন। সিভিল সার্জন আরও জানান, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলার ১০টি সরকারী হাসপাতালে আইসোলেশন সেন্টার এবং আটপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোয়ারেন্টাইন ইউনিট চালু করা হয়েছে। এছাড়া জেলা সদরে একটি এবং ১০ উপজেলায় ১০টি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে জেলা প্রশাসক সভাপতি এবং সিভিল সার্জন সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ভোলায় ১ জন ॥ দ্বীপজেলা ভোলায় করোনাভাইরাসে ইতালি ফেরত এক যুবককে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। শনিবার ভোলা স্বাস্থ্য বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিকে করোনা মোকাবেলায় ভোলা সদর হাসপাতালে ২০ শয্যার একটি পৃথক করোনা আইসোলেশন ইউনিট খোলা হয়েছে। ভোলা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ সিরাজ উদ্দিন জানান, ভোলা সদর হাসপাতালে সন্দেহজনক করোনা রোগী আসেনি। তবে ইতালি থেকে আসা এক যুবক জ্বর সর্দি কাশি থাকায় স্থানীয় ডাক্তারের কাছে গেলে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরার্মশ দেয়া হয়েছে। এদিকে করোনা মোকাবেলায় ২০ শয্যার আলাদা ইউনিট খেলা হয়েছে। এছাড়া যেসব রোগী জ্বর সর্দি গলা ব্যাথা নিয়ে আসে তাদের আলাদা স্ক্রীনিং করার জন্য করোনা হাসপাতালে স্ক্রীনিং সেন্টার খেলা হয়েছে। সেখানে একজন ডাক্তার নিয়োজিত রয়েছে। কলাপাড়ায় চীনা নাগরিকের কাজে যোগদান ॥ সম্প্রতি চীন থেকে আসা এক নাগরিক ঢাকায় কোয়ারেন্টাইন শেষ করে কলাপাড়ার ধানখালীর পায়রা তাপবিদ্যুত কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেলে কাজে যোগদান করেছেন। তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক এমনটা নিশ্চিত করেছেন কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার। নীলফামাীতে ৫ জন ॥ নীলফামারীতে চীন ও দক্ষিণ কোরিয়া ফেরত পাঁচজনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে জেলার ডোমার উপজেলায় দুইজন ও নীলফামারী পৌর এলাকায় তিনজন রয়েছেন। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষে প্রতিদিন তাদের নজরদারি ও চেকআপ করা হচ্ছে। শনিবার সিভিল সার্জন রনজিৎ কুমার বর্মন এ তথ্য নিশ্চিত করেন জানান, এর আগে জেলায় ৩৫ জন হোম কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পান। তারা সকলেই শঙ্কামুক্ত। এ ছাড়া সদর আধুনক হাসপাতালে করোনার একই পৃথক ইউনিট খোলা হয়েছে। সেখানে ৫০ শয্যা তৈরি করা হয়েছে। চাঁদপুরের কচুয়ায় ১২ জন ॥ প্রশাসন ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নিবিড় পর্যবেক্ষণে এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে কচুয়া এলাকায় আগতদের সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মার্চ মাসে শনিবার পর্যন্ত ১২ জন সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্ব দিয়ে প্রতিটি এলাকায় উপজেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মরত সকলেই সর্তকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণকে সচেতন ও করণীয় সম্পর্কে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লিফলেট বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপায়ন দাশ শুভ জানান, চলমান পরিস্থিতিতে সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়নে তদরকি কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। গ্রাম পুলিশ ও প্রান্তিক পর্যায়ের জনগণ, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের সাহয্যে তথ্যসংগ্রহ করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সঙ্গে সমন্বয় করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সালাউদ্দীন আহমেদ জানান, মার্চ মাসে ১২ জন বিদেশ ফেরত সেলফ কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে এবং সবাই সুস্থ আছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে কোভিড-১৯’র জন্য একটি আইসোলেটেড ভবনে চিকিৎসা সেবার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেখানে চিকিৎসা সেবার উপযোগী করে সকল সরঞ্জামাদি রাখা হয়েছে। পর্যটন শূন্য সিলেট ॥ পর্যটন নগরী হিসেবে খ্যাত সিলেটে বর্তমানে ভরা মৌসুমে পর্যটকদের আগমনে ভাটা পড়েছে। হোটেল মোটেল, পর্যটন স্পটগুলো এক ধরনরের শূন্যতা বিরাজ করছে। বিমানবন্দর, রেলওয়ে স্টেশন, টার্মিনালেও জনশূন্যতা বিরাজ করছ্।ে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটে স্বজনরা উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। লন্ডন, আমেরিকা, ইতালি, স্পেনসহ আক্রান্ত দেশগুলোই বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস। লন্ডন ও আমেরিকার বাঙালী অধ্যুষিত এলাকায় করোনা বিস্তার লাভ করছে। এই সকল এলাকায় ৯০ ভাগ সিলেটিদের বসাবাস থাকায় সেই পরিস্থিতি নিয়ে স্বজনরা আহাজারি করছেন। শুক্রবার লন্ডন শহরের টাওয়ার হ্যামলেটসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সিলেটের গোলাপগঞ্জের বাগিরঘাট গ্রামের ৬৬ বছর বয়সী আফরোজ মিয়া মৃত্যুবরণ করেছেন। করোনাভাইরাসের কারণে সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে।
×