ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিল্পী মাহবুব রিয়াজের এ্যালবাম ‘মন খারাপের হাওয়া’

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ১৫ মার্চ ২০২০

শিল্পী মাহবুব রিয়াজের এ্যালবাম ‘মন খারাপের হাওয়া’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বাংলাদেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে মেধাবী গুণী এক সঙ্গীতশিল্পী মাহবুব রিয়াজ। সম্প্রতি জি সিরিজ অগ্নিবীণার ব্যানারে প্রকাশ হয়েছে শিল্পী মাহবুব রিয়াজের নতুন এ্যালবাম ‘মন খারাপের হাওয়া’। কলকাতার গুণী সঙ্গীত পরিচালক গৌতম ঘোষের লেখা ও সুর করা ৬টি গান নিয়ে এ্যালবামটি রিলিজ হয়েছে। ‘আমরা সূর্যমুখী’ নামের একটি সংগঠন সম্প্রতি এই নতুন এ্যালবামের প্রকাশনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ্যালবামের নামের মধ্যে এক ধরনের বিষণ্ণতার প্রতিচ্ছবি থাকলেও আগামীর পথচলা ধারাবাহিকতায় এই শিল্পীর নতুন এ্যালবামটি সকল সঙ্গীত প্রেমী মানুষের মধ্যে আলোর রশ্মি ছড়াবে এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের । শিল্পী মাহাবুব রিয়াজ ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীত চর্চা করছেন। ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়ে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় পল্লী গীতিতে প্রথম স্থান অর্জন করেন। সেই প্রাপ্তিটাই তাকে সঙ্গীতের নেশায় পেয়ে বসে। আব্দুর রহমান বয়াতির দোহার হিসেবে দেহতত্ত্ব, শরীয়ত, মারফতি লাইনের পালা গানেও রয়েছে সক্রিয় অভিজ্ঞতা। ১৯৭৭-৭৮ সালে নতুন কুড়ি প্রতিযোগিতায় তার নেতৃত্বে পরিবেশিত দলীয় সঙ্গীতে প্রথম স্থান অধিকার করে তার রয়েছে জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার গ্রহণের গর্বিত অহঙ্কার। স্কাউট জাম্বুরী ক্যাম্প ফায়ারে গান গাইতে গিয়ে পরিচয় হয় আবেদ রাজ্জাক সানডে বাবুর সঙ্গে। এ শিল্পীর অনুপ্রেরণায় মাহবুব সঙ্গীতের মূল শেকড় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের তালিম নেয়া শুরু করেন। ভর্তি হোন বুলবুল ললিতকলা একাডেমি বাফাতে। সেই সময়ে ওস্তাদ গোপাল চন্দ্র দাস, ওস্তাদ বেদার উদ্দন আহমেদ, ওস্তাদ ফজলুল হক, এমএ মান্নান প্রমুখ গুণীজনের সান্নিধ্যে আসার সুযোগ পান মাহবুব। শিল্পকলা একাডেমির খ-কালীন উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের কর্মশালায় অংশ নেন। এছাড়া নজরুল একাডেমিতে ও ওস্তাদ সুধীন দাস, ওস্তাদ ফুল মোহাম্মদ, ওস্তাদ জাকির হোসেনের নিকট তালিম নেন। আশির দশকের পড়ন্ত সময়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের মাঠের কর্মী হিসেবে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। ‘বাপের শালা মামা আমার গণতন্ত্রের বোল শোনায়, বলি ও বাঙালী আর কটাদিন চাল কিনে খা বাকিতে গণতন্ত্র আসবে দেশেতে’। তার গাওয়া এই গণসঙ্গীতগুলো আন্দোলন চলাকালে প্রেরণা যোগায়। আন্দোলন সংগ্রামের অংশ হিসেবে অভিনেতা ও সংগঠক হিসেবে কাজ করেন। গান চেতনায় সমৃদ্ধ মাহবুব নিজেকে ভেঙ্গে চুরে গড়েছেন বারবার। পথনাটক, গণসঙ্গীত দলীয় সঙ্গীত, পল্লীগীতি সব ধরনের গান করলেও তার মূল যাত্রা শুদ্ধসঙ্গীত ধারায়। ওস্তাদ করিম শাহবুদ্দিন ও মূল ধারার শিল্পী সুজিত মোস্তফার কাছে তালিম নেন। ৯০ দশকের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভুক্ত হোন। এছাড়া একুশে টিভি, এটিএনবাংলা, মাছরাঙা, এসএটিভি, বাংলাভিশন ও বিজয়টিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলে নিয়মিত সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ১৯৯০ দশকের শুরুতে ক্যাসেটের যুগের ‘আমার পৃথিবী’ নামে একটি এ্যালবাম প্রকাশ করেন। ফরিদ আহমেদের সঙ্গীতায়োজনে ওয়াকিল আহমেদের কথায় এই ক্যাসেটের গানগুলোর সুর করেন মাহবুব রিয়াজ। এটাই ছিল তার প্রথম ক্যাসেট। ২০০৩ সাল থেকে এ দেশের বিশুদ্ধ সঙ্গীতাঙ্গনের আইকন সঞ্জীব দের নিকট নিয়মিত তালিম নিচ্ছেন। পুরনো ঢাকায় সন্তান মাহবুব রিয়াজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। বঙ্গবন্ধু শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি ও একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তার বাবা রিয়াজউদ্দিন মা তাসলিমা বেগম প্রয়াত। মাহবুবের স্ত্রী শিউলি আহমেদ একজন সঙ্গীতশিল্পী ও গৃহিনী। যিনি সময় মাহবুবকে গানের জগতে থাকতে উৎসাহ যোগান। শিল্পী দম্পতির দুপুত্র স্বদেশ ও শ্রেষ্ঠাকে নিয়ে ধানম-ি এলাকায় বসবাস। সব মিলিয়ে সঙ্গীতকে আরাধ্য জ্ঞনা সাধনায় নিমগ্ন মাহবুব রিয়াজ এগিয়ে চলেছেন তার কাঙ্খিত লক্ষে। সঙ্গীতে অন্তপ্রাণ এই সাধকের জন্য নিরন্তর শুভ কামনা করেন সংশ্লিষ্টরা।
×