ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

২৪ বছরেও চালু হয়নি তাঁত বোর্ডের ফ্যাসিলিটি সেন্টার

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৫ মার্চ ২০২০

২৪ বছরেও চালু হয়নি তাঁত বোর্ডের ফ্যাসিলিটি সেন্টার

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরকারীভাবে তাঁত পণ্য উৎপাদন ও তাঁতিদের সেবা প্রদানের জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরে নির্মিত তাঁত বোর্ডের সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টারটি এখন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। দীর্ঘ দুই যুগেও সেন্টারটি চালু না হওয়ায় ভবনে ফাটল ধরে খসে পড়েছে পলেস্তারা, মরিচা ধরেছে যন্ত্রপাতিতে। আর চারপাশে ঝোপঝাড়ের কারণে তৈরি হয়েছে ভীতিকর পরিবেশ। নির্মাণের দুই যুগেও কেন সেন্টারটি চালু হচ্ছে না সেটিও জানা নেই দায়িত্বরত কর্মকর্তার। অথচ এই সেন্টারেই অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থান হতে পারত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঁত পণ্যের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে ১৯৮৭-১৯৯৬ সালে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদের তিতাস নদীর পূর্বপাড় ঘেঁষে ২.৫০ একর জমিতে সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টার নির্মাণ করে তাঁত বোর্ড। সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টার নাম হলেও মূলত তাঁত পণ্য উৎপাদনের জন্যই এটি নির্মাণ করা হয়। তাঁতের কাপড় বুনন, কাপড়ে রং করা এবং কাপড় বুনন পরবর্তী বিভিন্ন নক্সা করাসহ তাঁতিদের বিভিন্ন সেবা দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয় সেন্টারটিতে। এই সেন্টারে একটি কারখানা, একটি অফিস, একটি স্টোর, একটি আবাসিক ও একটি ডরমেটরি ভবন রয়েছে। কয়েক দফায় বস্ত্র মন্ত্রণালয় ও তাঁত বোর্ডের পৃথক প্রতিনিধি দল এসে পরিদর্শন করে গেছে সেন্টারটি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহৃত থাকায় অকেজো হয়ে পড়েছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিগুলো। এখনও কারখানা ভবনের ভেতরে ৪০টি সেমি অটো তাঁত মেশিন অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে শুধুমাত্র একজন লিয়াজোঁ কর্মকর্তা আছেন সেন্টারটিতে। আরেকজন নিরাপত্তাপ্রহরী ছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে তিনি অবসরে গেছেন। এরপর থেকে সরকারী এই সম্পত্তি অরক্ষিত হয়ে পড়ে আছে। সরেজমিনে তাঁত বোর্ডের সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, অফিস ভবনটি ছাড়া সব ভবন তালাবদ্ধ। দীর্ঘদিন ধরে তালাবদ্ধ থাকায় তালাগুলোতেও মরিচা ধরেছে। সব ভবনের জানালায় মরিচা ধরে কাঁচ ভেঙে গেছে। কারখানা ভবনের ভেতরে থাকা সেমি অটো তাঁত মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জামে মরিচা ধরে এবং ভেঙ্গে মাটিতে পড়ে আছে। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় ঝোপঝাড় হয়ে পরিত্যক্ত পোড়াবাড়ির মতো দশা হয়েছে সেন্টারটির। সন্ধ্যার পর যে কেউ এটির পাশ দিয়ে হেঁটে গেলে ভয়ে আঁতকে উঠতে পারেন। বিশাল এই সেন্টারটিতে লোকবল বলতে কেবলমাত্র একজন লিয়াজোঁ কর্মকর্তা রয়েছেন। পুরো সেন্টারটি এখন তার দায়িত্বে। সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টারটি চালু হলে এলাকার অনেক বেকার তরুণ-তরুণীর কর্মসংস্থান হতো। তাই স্থানীয়দের দাবি এটি চালু করে যেন বেকারদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। এতে তাঁত শিল্পের সুনাম ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। শামছুল ইসলাম নামে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা সদরের এক বাসিন্দা বলেন, একদিনের জন্যও তাঁত বোর্ডের এই সেন্টারটি চালু হয়নি। অথচ এটি চালু হলে অনেক বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি এলাকাটি আরও উন্নয়ত হতো। এতে বেকারত্বের হারও কমত। বাঞ্ছারামপুর পৌরসভা এলাকার বাসিন্দা ফারুক আহমেদ বলেন, আমরা এখনও আশায় আছি এই সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টারটি চালু হবে। এটি চালু হলে বেকারদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আমাদের এলাকাটি আরও উন্নত হবে এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের এলাকার সুনাম ছড়িয়ে পড়বে। তাই আমরা সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবি জানাই এটি চালুর ব্যাপারে যেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন। এ ব্যাপারে তাঁত বোর্ডের সার্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টার বাঞ্ছারামপুরের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা কামাল উদ্দিন বলেন, শুরু থেকেই সর্ভিসেস এ্যান্ড ফ্যাসিলিটি সেন্টারটি চালু করার জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে এসেছে। কিন্তু এখনও এটি আলোর মুখ দেখেনি। তবে এখন যদি এটি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয় তাহলে সবকিছুই নতুন করে সংযোজন করতে হবে। কারণ আগের সেমি অটো তাঁত মেশিন দিয়ে উৎপাদন করে খরচে কুলানো যাবে না। সেজন্য পাওয়ার লোম মেশিন বসাতে হবে। বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সারোয়ার বলেন, এটি চালুর ব্যাপারে তাঁত বোর্ডের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। যদি ভবনগুলো সংস্কার করে কিছু করা যায় তাহলে সংস্কার করা হবে।
×