ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এম এ মান্নান

অভিমত ॥ প্রয়োজন দেশপ্রেম ও মানুষের কল্যাণ

প্রকাশিত: ০৮:৪৩, ১৫ মার্চ ২০২০

অভিমত ॥ প্রয়োজন দেশপ্রেম ও মানুষের কল্যাণ

সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য অবিরাম চেষ্টা ও সংগ্রাম অব্যাহত রয়েছে। বিশ্বে বহু নবী রসুলের-আবির্ভাব ঘটেছে এবং তাদের ধর্ম প্রচারে সত্য এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠা করার জন্য মহান আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন। পরম করুণাময় স্বয়ং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশ্বের সকল দেশে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বহু আইন নিয়মকানুন ও পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। তার মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা ও কার্যকর করার জন্য বহু চেষ্টা তদ্বীর কলাকৌশল অবলম্বন ও প্রয়োগ করার জন্য প্রচেষ্টা চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যে বিচার ব্যবস্থা চালু ও কার্যকর রয়েছে, তার মধ্যে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যেমন কঠোর ব্যবস্থা রয়েছে তেমনি বিচারহীনতারও বহু নজির রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বহু শাসক, রাজা বাদশা নিজের সন্তানকেও কঠোর শাস্তি ব্যবস্থা করেছেন ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে। বিশ্বে সকল সৃষ্টিকুলের জীবন জীবিকার ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পরিচালনা ও কার্যকরের জন্য যত রকমের পদ্ধতি রয়েছে- যেমন প্রশাসনিক বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ ইত্যাদি। সামগ্রিক জীবন ব্যবস্থায় এ সকল যাই কিছু করা হউক না কেন, সব কিছুই করা হয়ে থাকে দেশের জনগণের কল্যাণ ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। আমাদের এই স্বাধীন দেশে এক সময় ন্যায় বিচার খোঁজে পাওয়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছিল। বর্তমানে মিডিয়াসহ বিষয়ে ব্যাপক উন্নয়নের কারণে আজকে আমরা একটা পর্যায়ে এসে উপনীতি হয়েছি। বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্নীতি প্রতিরোধে কঠোর মনোভাব এবং ক্লিন ইমেজে দক্ষতার সঙ্গে হাল ধরার কারণে আমরা আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু তা কতদিন ধরে রাখা যাবে সে বিষয়ে দেশের সুশীল সম্প্রদায়কে গভীরভাবে বিচক্ষণতার সাথে নিরীক্ষণ করা দরকার। কারণ একটি চক্র নানাভাবে উন্নয়নের এই ধারা ব্যাহত করার চেষ্টা করছে, করবে। প্রধান বিচারপতি দেশের বিচার ব্যবস্থার সামগ্রিক উন্নয়নে কঠোর সংকল্প, দৃঢ়মনোভাব ও আস্থা পোষণ নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারপরও সকলের প্রয়োজনীয় আন্তরিক প্রচেষ্টা, সহযোগিতা এবং সুস্থ মনমানসিকতার অভাবে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চের ভাষণে বলেছিলেন, তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাক।... এদেশর মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব...। আমি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর ডাকে চাকরি ছেড়ে পিতা-মাতা-ভাই-বোন আত্মীয়-স্বজনের মায়া ত্যাগ করে প্রথমে আমার রাজনৈতিক গুরু সৈয়দ নজরুল ইসলামের অনুপ্রেরণায় স্বাধীনতা আন্দোলন ও সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কিশোরগঞ্জ এলাকায় প্রথমে সংগঠক হিসাবে অমানসিক পরিশ্রম কষ্ট করেছি। আমার বাড়িতে নির্যাতিত হিন্দু-মুসলমানদের আশ্রয় এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্পের ব্যবস্থা করি। এক পর্যায়ে হানাদার বাহিনীর দোসরদের দ্বারা আমার কার্যক্রম প্রকাশ হয়ে পড়ায়, আমার জীবন বিপদাপন্ন হয়ে পড়ায় কিছু দিন আত্মগোপনে থাকি। অতপর কয়েক’শ যুবককে নিয়ে ভারতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং গ্রহণ করে মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করি। আন্দোলন-সংগ্রাম-যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করার পিছনে আমাদের স্বপ্ন ছিল- বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে আপামর জনগণের কল্যাণ করা। যেটা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ৭৫ পরবর্তী সরকারগুলো সেপথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়। তবে বর্তমান সরকারের এই পরিস্থিতির উন্নয়নের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে শোনা যায়- অপরাধীরা নিজেদের বাঁচাতে এবং কাউকে কৌশলে ফাঁসাতে কোর্টে মামলা করে দেয়। সত্য মিথ্যা যাই হউক পরে প্রমাণ হবে। এভাবে কত নিরীহ মানুষ নির্যাতিত হচ্ছে, তার কোন ইয়ত্তা নেই। অনেক বাদী তার মামলার রায় বা ফলাফল জীবিত অবস্থায় দেখে যেতে পারে না। মামলার কারণে বহু ভুক্তভোগীর সাজানো সংসার তছনছ হয়ে যায়। কোর্টের বারান্দায় অনেক সময় দেখা যায়, হাড়ভাঙ্গা ছিন্নমূল কঙ্কালসার মানুষগুলো মামলা মোকদ্দমা করতে করতে কেমন অসহায় হয়ে পড়েছে। তাদের বিবর্ণ চেহারার দিকে মায়াভরা চোখের পানি গড়িয়ে আসে। এরূপ পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে একটি বিষয়ে বিজ্ঞ বিচারকগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তা হলোÑ মামলার রায় ঘোষণা প্রসঙ্গে। মামলার শোনানির শেষ প্রান্তে রায়ের একটি দিন ধার্য থাকে। কিন্তু ধার্যকৃত দিনের রায়টির ঘোষণা মাসের পর মাস ঝুলে থাকার কারণে বাদি-বিবাদীরা রায় শোনার জন্য অপেক্ষায় দারুণভাবে উৎকণ্ঠা বোধ করে থাকে। রায়ের শেষ শুনানির সাথে সাথে বিজ্ঞ বিচারকের মনে মামলার শুনানীর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বেশি বেশি স্মরণে থাকে বিধায় রায়টি লিখতে হয় ও অনেক সহজ হবে বলে মনে হয়। তাছাড়া অনেকগুলো রায় এক সঙ্গে জমে গেলে বিচারকের অস্বস্তি অনুভব হওয়া স্বাভাবিক। রায় ঘোষণাটি কিভাবে ত্বরান্নিত করা যায় তার দিকে দৃষ্টি দিলে সকল পক্ষই উপকৃত হবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আমাদের প্রত্যাশা-মামলার জট তুলনামূলক আরও কমাতে হবে। সম্মানিত আইনজীবীদের দেশের এবং সমাজের মানুষের প্রতি ভালবাসা ও দেশপ্রেমের প্রতি মনকে উৎসারিত করতে হবে। যারা বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তাদের দেশের মানুষকে বাঁচাতে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য কঠোর মনোভাব গ্রহণ করতে হবে। এককথায় দেশের বিচার ব্যবস্থার আরও উন্নতি করতে হলে দেশের বিজ্ঞ আইনজীবী এবং বিজ্ঞ বিচারকবৃন্দকে সমন্বিতভাবে একে অন্যের পরিপূরক হিসাবে কাজ করতে হবে। লেখক : প্রকৌশলী, রাজনীতি বিশ্লেষক
×