ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্দেশনা মানলেই রক্ষা

প্রকাশিত: ০৮:৪১, ১৫ মার্চ ২০২০

নির্দেশনা মানলেই রক্ষা

দেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও মাস্ক কেনার হিড়িক পড়ে গেল। বাজার থেকে নিমেষেই উধাও এসব। কিন্তু এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। একা বাঁচা যায় না, সবার কথাই স্মরণে রাখতে হয়। জীবনে কখনই হ্যান্ড স্যানিটাইজার নামের জীবাণুনাশক দিয়ে দুই হাত নিরাপদ করেননি এমন সহস্র মানুষ মজুদ শুরু করে দিলেন ওই বস্তুটির। অথচ সাধারণ সাবান, এমনকি কাপড় কাচার সাবান দিয়েও যে করোনার জীবাণু ধ্বংস করা সম্ভব এই তথ্যটি তারা জানেন না। জানলেও বিশ্বাস করেন না। তাই সবার আগে চাই সচেতনতা। কী করলে কী হবে জেনে-বুঝেই তা করুন। যা হোক, করোনাভাইরাস দেশে এখনও ছড়িয়ে পড়েনি, কয়েকজনের হয়েছে, কিছু ব্যক্তি নির্বাসনে রয়েছেন। তাতেই এটি যেন মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। অথচ কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই আমরা নিরাপদ থাকতে পারব। সবকিছুর আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা জরুরী। কুঅভ্যাস ত্যাগ করা চাই। আমাদের সৌভাগ্য যে, দেশের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বারবার কথা বলছেন, আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ‘পরিচ্ছন্ন গ্রাম-পরিচ্ছন্ন শহর’ শীর্ষক কর্মসূচীর আওতায় দেশব্যাপী পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের উদ্বোধনকালে কিছু কথা বলেছেন। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা। কোন নাগরিকই তা উপেক্ষা করতে পারবেন না। করোনাভাইরাস থেকে বাঁচতে সচেতনতামূলক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে গণমাধ্যমে। সংবাদপত্রের প্রথম ও শেষ পাতায় এ সংক্রান্ত তথ্য এবং সংবাদ নিয়মিতভাবে ছাপা হচ্ছে। এখন প্রাথমিক স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীও জেনে গেছে যে, দুই হাত পরিষ্কার রাখতে হবে, অর্থাৎ জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে। আর ছোঁয়াছুঁয়ি বাঁচিয়ে চলতে হবে। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন যে, নির্দেশনা মানলেই করোনা ভাইরাস থেকে দেশ রক্ষা পাবে। খুবই খাঁটি কথা। ঘনবসতির এই দেশে করোনাভাইরাস নামের ছোঁয়াচে রোগ ছড়িয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে। এখন আমরা নিজেরা যদি নির্দেশনা মেনে চলি এবং অন্যকে বিপদগ্রস্ত না করে তুলি তাহলে ওই প্রাণঘাতী ভাইরাস কী করে পাত্তা পাবে? বাঙালীর সমস্যাই হচ্ছে যেখানে-সেখানে কফ-থুতু ফেলা। মানুষের মুখের ওপরে হাঁচি-কাশি দেয়া। বদভ্যাসগুলো পাল্টে ফেললে আমরা যেমন আরেকটু সভ্য হব, তেমনি অন্যকেও বিপদে ফেলব না। আলোচিত ভাইরাসটি দেশের সীমানার বাইরে থেকে আমাদের দেশে প্রবেশ করেছে। তাই বিদেশফেরতদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত নিজ ঘরে একা অর্থাৎ সঙ্গরোধ বা কোয়ারেন্টাইন অবস্থায় থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কেননা যদি বিদেশফেরত ব্যক্তি ভাইরাসটি বহন করে নিয়ে আসেন, তবে নির্দিষ্ট সময়ের ভেতরেই রোগের লক্ষণ ফুটে উঠবে। তিনি চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে যাবেন। পক্ষান্তরে তিনি যদি ঢালাওভাবে মেলামেশা করেন। তবে তার সংস্পর্শে থাকা অন্যেরাও একই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় থাকবেন। এভাবে দুই থেকে চার, চার থেকে আট জ্যামিতিক হারে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে। তখন আর রেহাই মিলবে না। কেননা রোগ হলে চিকিৎসা সেবা নিতে হবে। সেজন্য পর্যাপ্ত সুব্যবস্থা নিশ্চিত করা চাই। সেজন্যই বলা হচ্ছে রোগ হলে রোগ লুকিয়ে না রেখে অন্যকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব নিজেকেই নিতে হবে। এই সচেতনতাটুকু আমরা চাই। আমরা বিশ্বাস করি, করোনভাইরাস মোকাবেলায় একে অপরের পাশে এসে দাঁড়াব, সহযোগিতা ও সচেতন করে তোলার ভূমিকা রাখব এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলায়ও বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হব।
×