মশিউর রহমান খান ॥ দেশের পুরনো ৫ কারাগার ব্যবহার উপযোগী করার মাধ্যমে নতুন করে বন্দী রাখার প্রস্তুতি নিয়েছে কারা অধিদফতর। এরই অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে সিলেট পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের নারী সেলে ৫০ বন্দীকে আটক রাখা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে তা বাড়ানো হবে বলে জানা গেছে। এসব কারাবন্দীর জন্য প্রেষণে একজন ডেপুটি জেলারের নেতৃত্বে মোট ৪৭ কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী নিরবচ্ছিন্নভাবে দায়িত্ব পালন করছেন। সিলেট ছাড়াও নির্বাচিত বাকি কারাগারগুলো হচ্ছে কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, পিরোজপুর, ফেনী। সিলেট ছাড়া বাকি কারাগারগুলো ব্যবহারের ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন জেলায় নতুনভাবে নির্মিত কারাগার কারাগার-১ ও পুরনো কারাগার কারাগার-২ হিসেবে পরিচিত হবে। বর্তমানে পুরনো সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কারাগার-২ হিসেবে সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকার ঘোষিত সকল পুরনো কারাগার সংস্কার করে বন্দীদের আটক রাখার নীতিগত সিদ্ধান্তের নির্দেশ কার্যকর করতেই এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে কারা অধিদফতর। এদিকে পর্যায়ক্রমে দেশের সকল পুরনো কারাগার সংস্কারের মাধ্যমে নতুন করে বন্দী আটক রাখার সরকারী আদেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বলে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন। জানা গেছে, সরকারের এ নির্দেশ বাস্তবায়নে কারা বিভাগের জনবলের ভয়াবহ সঙ্কট রয়েছে। বর্তমান জনবল দিয়ে এ দায়িত্ব পালন কোনক্রমেই সম্ভব হবে না।
এদিকে পুরাতন কারাগারগুলোতে বন্দী রাখার জন্য প্রয়োজনীয় জনবল না থাকায় সীমিত সংখ্যক কারা কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে দুটো কারাগারের দায়িত্ব পালন করা অনেকটা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে কারা কর্তৃপক্ষ পুরনো কারাগারের দায়িত্ব পালনের জন্য বাড়তি জনবল চেয়ে কারা অধিদফতর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, সিলেট নতুন কারাগারের জনবল না থাকায় বর্তমানে পুরনো কারাগারের জনবল দিয়েই পরিচালিত হচ্ছে। এই সমস্যা সমাধানে কারা কর্তৃপক্ষ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে নতুন কারাগারের জন্য মোট ১ হাজার ১০ জনবল চেয়ে চিঠি দিয়েছে। প্রয়োজনীয় জনবল না থাকলে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়বে জানিয়ে এই চিঠি পাঠায় কারা কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, সরকারী প্রজ্ঞাপনের মাধমে নির্দেশ সত্ত্বেও সিলেট পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি অংশের জমিতে একটি পার্ক ও খেলাধুলার জন্য মাঠ তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এটি হলে তা কারাবন্দীর নিরাপত্তার জন্য ভয়ানক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে ও একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন বিঘিœত ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক পুরনো কারাগারে বন্দী রাখার নির্দেশও লঙ্ঘিত হবে। এমন আশঙ্কা করছে কারা অধিদফতর।
কারা অধিদফতর সূত্র জানায়, সরকার গৃহীত কর্মসূচী অনুযায়ী পুরনো সকল কারাগার সংশোধনাগারে রূপান্তরের অন্যতম স্থান হিসেবে কাজে লাগানো হবে। বর্তমানে দেশের ৬৮ কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে ২শ’ গুণের বেশি বন্দী আটক রয়েছে। সেই সঙ্গে ক্রমবর্ধমান হারে বন্দীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি মোকাবেলায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।