ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সর্বত্র মাস্ক ব্যবহারের পরিস্থিতি হয়নি

হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা বাড়ছে, নতুন কেউ আক্রান্ত নন

প্রকাশিত: ১১:০৮, ১৪ মার্চ ২০২০

হোম কোয়ারেন্টাইনের সংখ্যা বাড়ছে, নতুন কেউ আক্রান্ত নন

নিখিল মানখিন ॥ দেশের সব জায়গায় সকল মানুষের অবাধে মাস্ক ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে যারা ব্যবহার করতে চান তাদের সার্জিক্যাল মাস্ক ও সেনিটাইজারের পরিবর্তে পপলিন কাপড় দিয়ে নিজেদের তৈরি মাস্ক ও হাতের কাছে পাওয়া সাবান ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে নতুন করে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হননি এবং সুস্থ হয়ে যাওয়া দুইজনের মধ্যে একজন বাড়ি ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে আইইডিসিআর। আক্রান্ত সব দেশ থেকে যে সব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশী-বিদেশী যে কোন নাগরিক), যারা দেশে শনাক্তকৃত ৩ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাদের কোন শারীরিক উপসর্গ নেই, তাদের ১৪ দিন স্বেচ্ছয় গৃহ কোয়ারেন্টাইন পালন করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আর পরামর্শ অনুযায়ী স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে না গেলে এবং ভাইরাসটির উপসর্গ থাকার তথ্য গোপন করলে ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন-২০১৮’ প্রয়োগ করা হবে বলে গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, দুই মাস আগে থেকেই বাংলাদেশে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। আন্তঃমন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ কমিটি কাজ করছে। কমিটি এবং এলাকাবাসীর সহযোগিতায় বর্তমানে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সংখ্যা বেড়েছে। দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকার পরও প্রতিরোধ কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই সন্দেহজনক ব্যক্তিদের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা বলা হচ্ছে। ভাইরাসটি যাতে আর বিস্তারলাভ করতে না পারে সেজন্যই জনস্বার্থে প্রয়োজনে এ সংক্রান্ত আইন প্রয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সব জায়গায় সকল মানুষের মাস্ক ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। তবে যারা মাস্ক পরতে চান তাদের নিকটস্থ দর্জির মাধ্যমে পপলিন কাপড়ের মাস্ক তৈরি করার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, সার্জিক্যাল মাস্কের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করার দরকার নেই। সার্জিক্যাল মাস্ক বারবার ধোয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। প্রয়োজনে নিজেরাই নিজেদের মাস্ক তৈরি করা নেয়া যায়। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে যে, পপলিনের কাপড় দিয়ে তিন স্তর বিশিষ্ট এ মাস্ক যে কোন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় তৈরি করতে পারবেন। এই মাস্ক পরার জন্য পপলিনের ফিতা থাকতে হবে। একবার ব্যবহার করে সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ও শুকিয়ে এই মাস্ক আবার ব্যবহার করা যাবে। সব মানুষের সব জায়গায় মাস্ক পরার দরকার নেই জানিয়ে মহাপরিচালক জানান, সবার মাস্ক ব্যবহার করার মতো পরিস্থিতি এখনও আমাদের দেশে তৈরি হয়নি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি এবং তাদের সংস্পর্শে যারা থাকবেন বা যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা করবেন তাদের মাস্ক পরা দরকার। লোক সমাগম বা গণপরিবহনে মাস্ক পরা যায়। একইভাবে হ্যান্ড সেনিটাইজারের পরিবর্তে সাবান ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়ে অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাভাইরাস দমনে সাবানই যথেষ্ট। হাত ধোয়ার কাজে সাবান ব্যবহার করলেই হয়, সেনিটাইজারের দরকার হয় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডাঃ এ বি এম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক নয়, সচেতন হতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজারের পেছনে দৌড়াদৌড়ি না করে মানুষ নিশ্চিন্তে সাবান ব্যবহার করতে পারে। সাবান-পানি দিয়ে হাত ধোয়াই যথেষ্ট। সাবান দিয়ে ২০ সেকেন্ড হাত ধুলে ভাইরাস মারা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোশতাক আহমেদ বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাটি দিয়েছেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, করোনাভাইরাসের ওপরের আবরণ চর্বি (লিপিড) দিয়ে তৈরি। সাবানে আছে ক্ষার। চর্বি যখন ক্ষারের সংস্পর্শে আসে, তখন চর্বি ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যায়। সাবানের সংস্পর্শে আসার সঙ্গে সঙ্গে করোনাভাইরাসের ওপরের আবরণ নষ্ট হয়ে যায়, ভাইরাস মরে যায়। সাবানে ক্ষার যত বেশি থাকে, ভাইরাস তত দ্রুত মরে। সে জন্য কাপড় কাচা সাবানই এ ক্ষেত্রে শ্রেয়। হ্যান্ড স্যানিটাইজার না খুঁজে হাতের কাছে পাওয়া সাবানই যথেষ্ট। সাশ্রয় এবং দেশের সব জায়গায় পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের রোগনিয়ন্ত্রণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল এ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, কিছু জীবাণু মারতে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের চেয়ে সাবান-পানি বেশি কার্যকর। হ্যান্ড স্যানিটাইজার জীবাণুর পরিমাণ হয়তো কমিয়ে আনতে পারে। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মেরে ফেলতে পারে না। সাবান ব্যবহার করলেই করোনাভাইরাস ধ্বংস হয়ে যায়। এদিকে, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুজন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের মধ্যে একজন বাড়ি ফিরে গেছেন এবং আরেকজন হাসপাতালে রয়েছেন। কারণ তার পরিবারের কয়েকজন সদস্যকে হোম কোয়ারেন্টাইনে (ভাইরাস সংক্রমণ রোধে বাসার মধ্যে পৃথক রাখার ব্যবস্থা) রাখা হয়েছে। আর আক্রান্ত তৃতীয়জনের তার পরীক্ষায় এখনও পজিটিভ ফলাফল পাওয়া গেছে। তার চিকিৎসা চলছে। অধ্যাপক ডাঃ সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, এ পর্যন্ত ১৮৭ জনের নমুনা পরীক্ষা করেছে আইইডিসিআর। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ২৪ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে তাদের কারও শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়নি। করোনাভাইরাসের লক্ষণ থাকলে চিকিৎসার জন্য সরাসরি আইইডিসিআরে না আসার অনুরোধ জানিয়েছেন সংস্থাটির পরিচালক অধ্যাপক ডাঃ মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। বিশ্ব পরিস্থিতি সম্পর্কে অধ্যাপক ডাঃ ফ্লোরা বলেন, চীন থেকে সংক্রমিত হওয়া নতুন করোনাভাইরাস থেকে সৃষ্ট ‘কোভিড-১৯’ রোগে আক্রান্ত হয়ে শুক্রবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৪ হাজার ৯৮৩ জনে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বে এ পর্যন্ত ১ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৭০ হাজার ৩৮৫ জন পুরোপুরি সুস্থ হয়েছেন। বিদেশফেরত এবং তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের স্বেচ্ছায় কোয়ারেন্টাইনে ১৪ দিন থাকার পরামর্শ দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানেই করোনাভাইরাস রোগী নন। এটি করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সাবধানতা অবলম্বন কর্মসূচীর একটি অংশ। করোনা মোকাবেলায় জনস্বার্থে আইন প্রয়োগের গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। মহাপচিালক এ বিষয়ে বলেন, বিদেশ থেকে প্রত্যাগত কিছু প্রবাসী বা তাদের সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিবর্গ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক আরোপিত কোয়ারেন্টাইনের শর্ত সঠিকভাবে প্রতিপালন করছেন না। অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সকলকে এ সংক্রান্ত আইন অনুযায়ী এবং নির্দেশিত পন্থায় যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাই। ব্যত্যয়ের ক্ষেত্রে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে। এ সংক্রান্ত আইনের কয়েকটি ধারা উল্লেখ করে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক ‘সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮’- এর ১(জ) অনুযায়ী সংক্রামক রোগের তথ্য রয়েছে এমন কোন ব্যক্তিকে উক্ত রোগের বিষয়ে অধিদফতরের নিকট তথ্য প্রদানের নির্দেশনার কথা বলা হয়েছে। ধারা-১(ট) অনুযায়ী সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হয়েছেন এমন কোন সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট হাসপাতাল, অস্থায়ী হাসপাতাল, স্থাপনা বা গৃহে অন্তরীণ (কোয়ারেন্টাইন) রাখা বা পৃথককরণ (আইসোলেশন) রাখা যাবে। ধারা-১(ত) অনুযায়ী সংক্রামক রোগের বিস্তার রোধে উড়োজাহাজ, জাহাজ, জলযান, বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহন দেশে আগমন, নির্গমণ বা দেশের অভ্যন্তরে এক স্থান হতে অন্য স্থানে চলাচল নিষিদ্ধকরণ। ধারা-১৪ অনুযায়ী যদি ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মচারীর এমন বিশ্বাস করার কারণ থাকে যে, কোন সংক্রমিত ব্যক্তিকে বিচ্ছিন্ন করা না হলে তার মাধ্যমে অন্য কোন ব্যক্তি সংক্রমিত হতে পারেন, তাহলে উক্ত ব্যক্তিকে সাময়িকভাবে অন্য কোন স্থানে স্থানান্তর বা জন বিচ্ছিন্ন করা যাবে বলে জানান মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ। এদিকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার এবং নিজস্ব সংবাদদাতারা জানান, স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হওয়া বা হোম কোয়ারেন্টাইন লোকের সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে, একই সঙ্গে বাড়ছে কৌতূহলী মানুষের সংখ্যাও। সব মিলিয়ে এক ধরনের অদ্ভুত দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যেÑ চাঁদপুরের হোম কোয়ারেন্টাইনে ৬০৪ জন ॥ করোনাভাইরাস মুক্ত রাখতে গত ১৫ দিনে বিদেশ ফেরত চাঁদপুরের ৬০৪ জনকে ‘হোম কোয়ারেন্টাইনে’ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন চাঁদপুর জেলা প্রশাসন। শুক্রবার সকালে এটি নিশ্চিত করেন চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জামান। তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানের নির্দেশে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসেন ৬০৪ ব্যক্তি। আমরা তাদের তথ্য সংগ্রহ করে যার যার নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করেছি। এতে তাদের সহায়তা করছে জেলা সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগ, পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ বিভাগ। এদিকে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে করোনা সচেতনতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ও জনসমাগমস্থল লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড এলাকায় লিফল্যাট বিতরণ শুরু করেছে। মানিকগঞ্জে ১৬৯ জন ॥ ৪ দিনে মানিকগঞ্জে ১৬৯ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১০৯ জন থাকলেও ২৪ ঘণ্টায় নতুন আরও ৬০ জন বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ১৬৯ জন ব্যক্তিকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। মানিকগঞ্জের সিভিল সার্জন ডাঃ আনোয়ারুল আমিন আখন্দ জানান, বিদেশ ফেরৎ ব্যক্তিদের শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ না থাকলেও নিজ বাড়িতে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে তাদের। হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা ব্যক্তিরা সম্প্রতি ইতালি, চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সৌদি আরব ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছে। ভাইরাস প্রতিরোধ ও আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সোমবার থেকে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালের পুরাতন ভবনে দোতলায় ১২ শয্যা এবং জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউশনের নতুন ভবনে ১০০ শয্যার কোয়ারেন্টাইন ইউনিট খোলা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ডাক্তার ও নার্সদের। বগুড়ায় ৭ জন ॥ বগুড়ায় যারা বিদেশ থেকে আসছেন কৌতূহলী মানুষ তাদের থেকে দূরে সরে থাকছে। পরিবারের সদস্যরা সহজে ভিড়তে চাইছে না। বগুড়ায় এ পর্যন্ত বিদেশ থেকে আসা সাতজন স্বেচ্ছায় বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে আছেন। জেলা সিভিল সার্জন গাউসুল আজিম চৌধুরী জানিয়েছেন, কেউ কারোনাভাইরাসে শনাক্ত হয়নি। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাঃ সামির হোসেন মিশু বলেন, যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে এসেছেন তাদের সতর্ক থাকতে হবে। জ¦র কাশি ও অন্য উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে বলা হয়েছে। অন্যদেরও সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। এদিকে করোনাভাইরাস নিয়ে নানা ধরনের ‘কথা’ ছড়ানো হচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও কিছু অপরিচিত অন লাইনে। এসব কথা ও তথ্য কোন্টি ঠিক আর কোন্টি ঠিক নয় এ নিয়ে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়ছে। যারা ভারত থেকে ফিরছেন তাদের কাছেও সহজে কেউ যেতে চাইছেন না। কুড়িগ্রামে সৌদি-দুবাই ফেরত ৬ জন ॥ কুড়িগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সৌদি আরব ও দুবাই ফেরত ৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ নজরুল ইসলাম জানান, হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা সবাই সদর উপজেলার বাসিন্দা। এদের মধ্যে সৌদি আরব থেকে ওমরাহ হজ পালন করে এসেছেন ৫ জন। এরা ৪ ও ৫ মার্চ দেশে ফিরেছেন। এদের বয়স ৪০ থেকে ৫৯ বছরের মধ্যে। এছাড়া ৮ মার্চ দুবাই থেকে ৩৫ বছর বয়সী এক যুবক ফেরত এসেছেন। সবাই সুস্থ এবং স্বাভাবিক রয়েছেন। তিনি আরও জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাদের সবাইকে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডাঃ হাবিবুর রহমান জানান, করোনাভাইরাস মোকাবেলায় জেলার হাসপাতালগুলোতে আইসোলেশন ওয়ার্ড স্থাপন করে ৩১টি বেড প্রস্তুত রাখা হয়েছে। নরসিংদীতে বিদেশ ফেরত ৩ জন ॥ নরসিংদীতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ আগাম প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্তান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে বিদেশ ফেরত নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী গ্রামের সামসুদ্দিনের পুত্র কামরুল ইসলাম ওরফে সজল (৪০), হাজীপুরের রুবেল এবং রায়পুরা উপজেলার পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যনগরের শাহ্ মর্তুজ আলীর পুত্র সুমন মিয়াকে (২৬) নিজ নিজ বাড়িতে কোয়ারেন্টাইনে রেখে পর্যবেক্ষণ করছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। পরিস্থিতি অনুযায়ী সর্বোচ্চ সেবা দিতে জেলার সরকারী হাসপাতালগুলো প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ ইব্রাহিম টিটন।
×