ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বগুড়া বিমান বন্দরে বিমান উড্ডয়ন অবতরণ শুরু হয়নি

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৪ মার্চ ২০২০

বগুড়া বিমান বন্দরে বিমান উড্ডয়ন অবতরণ শুরু হয়নি

সমুদ্র হক, বগুড়া অফিস ॥ বগুড়ায় বিদ্যমান বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশনের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) অধীনে দিয়ে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ অবতরণ ও উড্ডয়নের আয়োজন হয়েছে অনেক আগে। এখনও তা বাস্তবায়িত হয়নি। আকাশপথে বগুড়ার যোগাযোগের সকল ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে। গুরুত্ব অনেক বেড়েছে। তারপরও সাধারণের জন্য বিমান বন্দর চালু করা হয়নি। বর্তমানে বগুড়া বিমান বন্দর বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে চালু রয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায় বিমান বন্দরটি সিভিল এ্যাভিয়েশনকে দিতে বিমান বাহিনীর কোন আপত্তি নেই। ভৌগলিক ও বাণিজ্যিক অবস্থান বিবেচনায় বগুড়া বিমান বন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কথা ছিল আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে এই বিমান বন্দর হবে লাভজনক। ৯০’র দশকের মাঝামাঝি সদর উপজেলার এরুলিয়া মৌজায় আঞ্চলিক সড়কের ধারে ১শ’ ১০ একর ভূমির ওপর ৫ হাজার ফুট রানওয়ে, টার মার্ক, টার্মিনাল ও আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০২ সালে বিমান বন্দরটি বিমান বাহিনীর কাছে ন্যাস্ত হয়। বিমান বাহিনী সেখানে রাডার স্টেশন স্থাপন করে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। গেল প্রায় ১৮ বছর ধরে বগুড়া বিমান বন্দর এভাবেই চলছে। সূত্র জানায়, উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় এই সময়ে আকাশ পথে যোগাযোগ অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। উত্তরাঞ্চলের মধ্যবর্তী নগরী বগুড়ার গুরুত্ব দিনে দিনে বাড়ছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী সিভিল এ্যাভিয়েশনের বিমান চালু করায় সমর্থন দিয়ে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ দিয়েছে। তারপর বগুড়া বিমান বন্দরকে বর্তমান সময়ের আধুনিক উড়োজাহাজ ওঠানামায় উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদ্যমান রানওয়েকে আরও সম্প্রসারিত করে অন্যান্য অবকাঠামো সুবিধা বাড়ানোর কার্যক্রম হতে নেয়া হয়। এই বিষয়ে জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বিমান বন্দরটি আকাশ পথে সাধারণের যোগাযোগের জন্য চালুর দাবি জোড়ালো হয়েছে। ঢাকায় অনুষ্ঠিত জেলা প্রশাসকগণের (ডিসি) সম্মেলনে দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন বিমান বন্দর স্থাপনের পরামর্শ চাওয়া হয়। ওই সম্মেলনে বগুড়া বিমান বন্দরে বাণিজ্যিকভাবে উড়োজাহাজ ওঠানামার পরামর্শ দেয়া হয়। বগুড়া বিমান বন্দরকে সম্প্রসারণ ও আধুনিকায়নের কথা বলেন। জেলা প্রশাসন ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্র জানায়, বগুড়া বিমান বন্দরের বর্তমান ৫ হাজার ফুট রানওয়ের সঙ্গে আরও ৩ হাজার ফুট রানওয়ে নির্মাণ করতে হবে। এর সঙ্গে জ্বালানি রিজার্ভার, যাত্রীগণের সুবিধা, মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য সুবিধার জন্য অন্তত এক শ’ একর ভূমি প্রয়োজন। বিদ্যমান রানওয়ের পশ্চিমে জমি কেনার পরিকল্পনা করা হয়েছে। সূত্র জানায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব দেয়া আছে। মন্ত্রণালয় থেকে এখনও চিঠি আসেনি। চিঠি পাওয়ার পরই অধিগ্রহণের ব্যবস্থা নিয়ে কাজ শুরু হবে। বগুড়ার প্রবীণ ব্যক্তিগণ বলেন, আকাশপথে বগুড়ার যোগাযোগে ষাটের দশকেই বগুড়ার বনানীতে হ্যালিপ্যাড বানিয়ে তৎকালীন পিআইএর হেলিকপ্টার সার্ভিস ছিল। পঞ্চাশ বছরে বগুড়া আরও উন্নত হওয়ায় উড়োজাহাজ ওঠানামার সার্বিক উন্নত অবস্থা বিরাজ করছে। বগুড়ায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আধুনিক স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে। বগুড়ায় এখন কয়েকটি ফোরস্টার ও ফাইভস্টার হোটেল। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারগুলো এখন বগুড়ায় হচ্ছে। দেশের প্রাচীন নগরী মহাস্থানগড়ে পর্যটক আগমনের সংখ্যা বেড়ে বগুড়া পর্যটক ভূমিতে পরিণত। আন্তর্জাতিক অনেক অনুষ্ঠানের ভেন্যু করা হয় বগুড়ায়। দেশী বিদেশী অনেকের আগমন ঘটে। একদার শিল্প নগরী বগুড়া পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক অঞ্চল ও বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার কাজ শুরু হচ্ছে। বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক ও রেলপথে যোগাযোগে অনেকটা সময় লাগে। এক জরিপে দেখা গেছে বগুড়া বিমান বন্দর চালু হলে বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া রুটে দিনে বাংলাদেশ বিমান ও প্রাইভেট বিমান সংস্থার কয়েকটি ফ্লাইট চলবে। উড়োজাহাজ চলাচল লাভজনক অবস্থায় যাবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে।
×