ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পুকুরশূন্য হচ্ছে রাজশাহী নগর

প্রকাশিত: ০৯:৩৪, ১৪ মার্চ ২০২০

পুকুরশূন্য হচ্ছে রাজশাহী নগর

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও রাজশাহী নগরীতে থামছে না পুকুর, খাল-বিলসহ জলাশয় ভরাট। একের পর এক ভরাট হচ্ছে নগরীর পুকুর। ভরাট বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের নজরদারি না থাকায় দিনে দিনে পুকুর ভারাট হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে বহুতল ভবন ও বিভিন্ন অবকাঠামো। সম্প্রতি নগরীর আহমদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের পুকুরটি ভরাট নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী বলছেন, গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে মেহেরের পুকুর নামে পরিচিত বিশাল পুকুরটি বালু ফেলে ভরাট কাজ শুরু হয়েছে। এলাকাবাসী পুকুরটি ভরাট বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সিটি মেয়র, জেলা প্রশাসক, পুলিশ কমিশনার, পরিবেশ অধিদফতর এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বরাবর লিখিতভাবে অবহিত করেছেন। এলাকাবাসী বলছেন, একদিকে চার লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে পুকুরের পাড় রক্ষায় প্রোটেকশন ওয়াল নির্মাণ করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাতের আঁধারে চলছে পুকুর ভরাটের কাজ। এলাকাবাসীর প্রশ্ন, পুকুরটি যদি ভরাটই করা হবে, তাহলে এখানে প্রোটেকশন ওয়াল কেন নির্মাণ করা হচ্ছে। এদিকে ক্রমাগত পুকুর ভরাট করায় এক সময়ের পুকুরের নগরী খ্যাত রাজশাহী হতে চলেছে পুকুর শূন্য। এক সমীক্ষায় জানা যায়, ষাটের দশকের প্রথমে এই নগরীতে ছোট-বড় মিলিয়ে দীঘি, পুকুর, ডোবা, নয়নজুলি ও অন্যান্য জলাশয়ের সংখ্যা ছিল ৪ হাজার ২৮৩টি। ১৯৮১ সালে এই সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসে দাঁড়ায় ২ হাজার ২৭১টিতে। এই সংখ্যা ২০০০ সালের দিকে এসে দাঁড়ায় ৭২৯টিতে। তবে হেরিটেজ রাজশাহীর সভাপতি মাহবুব সিদ্দিকীর গবেষণা অনুযায়ী বর্তমানে এই সংখ্যা এখন তিন শ’ বা তারও কম। এদিকে একের পর এক পুকুর এবং জলাশয় ভরাট হয়ে যাওয়ায় মুক্ত অবগাহন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষসহ পশু-পাখি। অন্যদিকে পুকুর এবং জলাশয় ভরাটের প্রভাবে সামান্য বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। নাজুক হয়ে পড়ছে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরজুড়ে পুকুর এবং জলাশয় ভরাটের যে মহোৎসব চলছে তা বন্ধ করা না গেলে পরিবেশ এবং প্রাণীকূল পড়বে বিপর্যয়ের মুখে। এদিকে নগরীর হড়গ্রাম এলাকার সাজ্জাদের পুকুর এবং এক সময়ে এমানের পুকুরটিও ভরাট করা হচ্ছে অল্প অল্প করে। হড়গ্রাম নতুনপাড়া এলাকায় গত দুই-তিন মাসের মধ্যে অন্তত চারটি পুকুর ভরাট করা হয়েছে। এগুলো হলো ডাঃ মজিবরের পুকুর, সাত্তারের দুটি এবং জাকাউলের পুকুর। ভরাট হয়েছে মহিষবাথান আলিয়া মাদ্রাসা মসজিদ সংলগ্ন পুকুরটিও। নগরীতে পুকুর এবং জলাশয় ভরাটের যে গতি তা বন্ধ করা না গেলে প্রকৃতি এবং পরিবেশের জন্য তা হুমকি হয়ে উঠবে। এদিকে কোন কোন জলাশয় ভরাট বন্ধে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের প্রেক্ষিতে প্রশাসন উদ্যোগ নিলে সাময়িকভাবে ভরাট কাজ বন্ধ রাখা হয়। পরবর্তী সময় ভিন্ন কৌশল এবং পন্থা অবলম্বন করে ভরাট প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে। নগরীর পুকুর ভরাট নিয়ে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র-১ সরিফুর ইসলাম বাবু বলেন, নগরীতে যেভাবে পুকুর-জলাশয় ভরাট হচ্ছে তা বন্ধ হওয়া উচিত। তবে ভরাট বন্ধে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের আইনত তেমন কিছু করার নেই। এ বিষয়ে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে পারেন। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে আলোচনা করে রাজশাহী নগরীর পুকুর-জলাশয় ভরাটের বিষয়ে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
×