ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

নির্মিত হলো বিশেষ নাটক ‘রক্তদহ’

প্রকাশিত: ০৯:২৪, ১৪ মার্চ ২০২০

নির্মিত হলো বিশেষ নাটক ‘রক্তদহ’

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ বগুড়ার আদমদীঘি থানার ‘রক্তদহ’ বিলের ঐতিহাসিক ঘটনা নিয়ে নির্মিত হয়েছে বিশেষ নাটক ‘রক্তদহ’। ২৫০ বছরের পটভূমি অবলম্বনে নাটকটির গল্প, সংলাপ, চিত্রনাট্য ভাবনা লিখেছেন নওগাঁ-৬, আত্রাই-রানীনগরের সংসদ সদস্য, রবীন্দ্র গবেষক, লেখক মোঃ ইসরাফিল আলম এমপি। এছাড়াও ‘রক্তদহ’ নাটকটি রচনা করেছেন এ সময়ের জনপ্রিয় কবি ও নাট্যকার মিজানুর রহমান বেলাল। নাটকটি পরিচালনা করেছেন মেধাবী পরিচালক মুরসালিন শুভ। নাটকে ফকির মজনু শাহ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শ্যামল মাওলা। অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাজিরা মৌ, আব্দুল্লাহ রানা, অভি, কেয়া মণি, রাজিন, সানজিদা কাইয়ুমসহ অর্ধশত অভিনেতা-অভিনেত্রী। বিগ বাজেটের এই নাটকটি প্রযোজনা করেছেন দাগ এন্টারটেনইমেন্ট মিডিয়া লিমিটেড। সম্প্রতি নওগাঁ, আত্রাই, রানীনগর, বগুড়ার বিভিন্ন মনোরম লোকেশনে নাটকটির শূটিং শেষ হয়েছে। সম্পাদনা শেষে ‘রক্তদহ’ নাটকটি বেসরকারী কোন টিভি চ্যানেলে প্রচার হবে। এই ঐতিহাসিক পটভূমি নিয়ে নাটক নির্মাণ প্রসঙ্গে মোঃ ইসরাফিল আলম এমপি বলেন, ‘ফকির সন্ন্যাসী মজনু শাহ ও ইংরেজ সৈন্যদের মাঝে যুদ্ধে প্রচুর লোক হতাহত হওয়ায় বিল ভোমরার পানি রক্তের জোয়ারে লাল রং ধারণ করে সেই থেকে বিল ভোমরা ঐতিহাসিক ‘রক্তদহ’ বিল নাম ধারণ করে আসছে। এই ইতিহাসগুলো এ যুগের ছেলে-মেয়েরা জানে না। এছাড়াও এখন টিভি নাটক ও সিনেমায় শুধু প্রেম-ভালবাসার নাটক প্রচার হওয়ার কারণে এ প্রজন্ম দর্শকদের রুচি ও চেতনার পরিবর্তন হচ্ছে না। ইতিহাসও জানছে না। এ কারণে এমন ঐতিহাসিক কাহিনী নিয়ে নাটক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া। জানা যায়, রক্তদহ বিলের সঙ্গে ইংরেজবিরোধী স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নেতা ফকির মজনু শাহের স্মৃতি জড়িয়ে আছে ওতপ্রোতভাবে। তার বাহিনীর বীরত্বেই রক্তদহ বিলের নাম। আর এই বিলের নামে নির্মাণ হলো ইতিহাস নির্ভর নাটক ‘রক্তদহ’। পলাশীর যুদ্ধে ইংরেজদের হাতে পরাজয়ের পর স্বাধীনতা পুনরুদ্ধারের জন্য প্রথম যুগের স্বাধীনতা সংগ্রামে যে সব বীর যোদ্ধা সম্মুখ সারিতে ছিলেন ফকির মজনু শাহ তাদের অন্যতম। মজনু শাহ গোয়ালির রাজ্যের (বর্তমান ভারত) মেওয়াতে এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমান ভারতের কানপুর থেকে চল্লিশ মাইল দূরে তিনি বাস করতেন। এখান থেকেই শতাধিক সশস্ত্র অনুচর নিয়ে তিনি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধিকারভুক্ত বাংলা ও বিহারের বিভিন্ন স্থানে গেরিলা অভিযান চালাতেন। তার কার্যক্ষেত্র প্রধানত বিহারের পানিয়া অঞ্চল এবং বাংলার রংপুর, দিনাজপুর, রাজশাহী, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, মালদহ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও ময়মনসিংহ জেলা বিস্তৃত ছিল। তিনি ঢাকা, সিলেট নিম্নবঙ্গের কোন কোন জায়গাও অভিযান পরিচালনা করেছেন। বগুড়ার মহাস্থানে ফকির নেতা মজনু শাহর আস্তানা বা প্রধান ঘাঁটি ছিল। ১৭৭৬ সালে এখানে তিনি একটি দুর্গ নির্মাণ করেছিলেন। এখান থেকে তিনি বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেছেন। তার মধ্যে আদমদীঘি থানার অভিযানগুলো ছিল উল্লেখযোগ্য। ১৭৮৬ সালের আগস্টে বগুড়া হতে ৩৫ মাইল দূরবর্তী এক স্থানে লেফটেন্যান্ট আইন শাইনের সঙ্গে তার যোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়েছিল। ইতিহাস গবেষণায় দেখা গেছে, এই স্থানটিই ছিল আদমদীঘি থানার রক্তদহ বিল। এখানে বহু ইংরেজ সৈন্য হতাহত হয়েছিল এবং রক্তের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। ফকির মজনু শাহের এক যোদ্ধাও এখানে শহীদ হয়েছিলেন। এ কারণেই বিলটির নাম রাখা হয় রক্তদহ বিল। বাংলার ইতিহাসে ফকির মজনু শাহ যেমন চির স্মরণীয় হয়ে আছেন।
×