ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা সমিতিতে ‘গ্রহণকাল’ মঞ্চস্থ

প্রকাশিত: ০৯:২২, ১৪ মার্চ ২০২০

মহিলা সমিতিতে ‘গ্রহণকাল’ মঞ্চস্থ

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ রাজধানীর বেইলী রোডের নাটক সরণীর বাংলাদেশ মহিলা সমিতির ড. নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা নান্দনিক রেপার্টরির নতুন প্রযোজনা ‘গ্রহণকাল’ নাটকের মঞ্চায়ন হয়। প্রয়াত নাট্য ব্যক্তিত্ব সৈয়দ মহিদুর রহমান রচিত ‘গ্রহণকাল’ নাটকটি নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দ শুভ্র। নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন সায়েম সামাদ, সৈয়দা নওশীন ইসলাম দিশা, সৈয়দ শুভ্র, শামসুজ্জামান দুলাল, সৈয়দ রমিত রহমান, মনোজিত কুমার ওঝা। এদিন নাটকটির তৃতীয় মঞ্চায়ন হয় বলে জানা গেছে। ‘গ্রহণকাল’ নাটকের গল্পে দেখা যায় যুদ্ধাহত খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহেদ। যে তার দুরন্ত যৌবনে ভালবাসার মানুষকে পেছনে ফেলে চলে গিয়েছিল যুদ্ধের মাঠে। নেতার বজ্রকণ্ঠের উদাত্ত আহ্বান তার স্বপ্নের আকাশটাকে একঝাঁক পায়রা হয়ে তাকে যুদ্ধে মাঠে ডেকেছিল। সে মিশে গিয়েছিল সেই পায়রার সঙ্গে। নেতার বজ্রকণ্ঠ সাতকোটি বাঙালীর গায়ে যেন বাঘের তেজ এনে দিয়েছিল। তারা হায়েনার কণ্ঠনালী ছিঁড়ে ফুঁড়ে লাল-সবুজ পতাকাটি এই জমিনে ওড়াতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। যুদ্ধের যবনিকাপাতের ঠিক পূর্বক্ষণে শাহেদ যুদ্ধাহত হয়ে একটি পা হারায়। দীর্ঘ চিকিৎসায় কেটে যায় বেশ ক’টি বছর। অবশিষ্ট একটি পা নিয়ে যখন সে উঠে দাঁড়ায় তখন সে চেয়ে দেখে পুরো দেশ যেন ন্যুব্জকুব্জ, অথর্ব্য হয়ে গেছে। ২৪টি বছর সংগ্রাম করে একটি মানুষ যে জাতির বুনে এনেছিল বাঘের সাহস। সেই মানুষটিকে হায়নারা খুন করে পুরো জাতিকে যেন মুশিক শাবকে পরিণত করেছে। যেখানেই তাকায় সেখানেই যেন পশ্চাৎপদতার চিহ্ন। যে আদর্শের জন্য ৩০ লাখ প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছিল বাঙালী, তা যেন কতিপয় কুলাঙ্গারের কালো থাবায় রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে। সর্বত্রই ৭১-এর পরাজিত শত্রুর আস্ফালন। একটি পায়ের খ-িত জীবন নিয়ে শাহেদ আজ হাতড়ে বেড়ায় তার দৃপ্ত যৌবনের সেই হারানো দিনগুলোকে। যে স্বপ্নভরা যৌবনে তার চোখে ভেসেছিল এক মানবিক দেশের ছবি, সেখানে আজ সাম্প্রদায়িক শক্তি ভর করেছে তার ভালবাসার প্রেয়সীর অরক্ষিত দেহে। যার জঠরে জন্ম নিচ্ছে যুদ্ধাপরাধীর সন্তান। নিদারুণ অপমানে ক্রুদ্ধ স্বদেশ মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বারবার প্রশ্ন রাখে- আমাদের জননীরা কি প্রতিনিয়ত ধর্ষিতা হয়ে দেশদ্রোহীর জন্ম দেবে? দেশপ্রেমিকরা কি নিঃশেষ হয়ে গেছে চিরতরে। ৩২ নম্বরের সিঁড়ি বেয়ে একদা যে রক্ত নিঃশব্দে মিশে গেছে এই দেশের শরীরে, সে রক্ত গড়াড়ে গড়াতে পৌঁছে গেছে বঙ্গোপসাগরে। সে রক্তে আবার গর্জন তুলেছে সাগরের ঢেউয়ের বুকে। সেই গর্জনে কেঁপে উঠছে ধর্ষিতা মাটি। সেই মাটির বুকে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর বুকে আবার জ্বলে উঠছে ৭১-এর চিতা। যে চিতার আগুনে তারা দেখতে পাচ্ছে তাদের পিতার নির্ভীক মুখের ছবি। যে মুখ রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে আবার হুঙ্কার দিচ্ছে জয় বাংলা। এ হুঙ্কার দাবায়ে রাখে এমন সাধ্য কার।
×