ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সোলার প্যানেলে সেচে খরচ কমেছে এক-তৃতীয়াংশ

প্রকাশিত: ০৯:১২, ১৪ মার্চ ২০২০

সোলার প্যানেলে সেচে খরচ কমেছে এক-তৃতীয়াংশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ১৩ মার্চ ॥ এক সময় বোরো আবাদে সেচ দেয়ার জন্য ‘বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্তৃপক্ষে’র ওপর নির্ভর করতে হতো ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের। এতে ব্যয় বাড়ার পাশাপাশি ভোগান্তিও পোহাতেন কৃষকরা। ওই সময় অনেক কৃষক সেচের এ ভোগান্তির জন্য বোরো আবাদ থেকে বিরত থাকতেন। আবার অনেকে আবাদের পরিমাণও কমিয়ে ছিলেন। তবে ২০১৬ সাল থেকে এ চিত্র পাল্টে যেতে শুরু করে। এখন প্রতি বিঘায় সেচ খরচ ৩ হাজার থেকে কমে হয়েছে ২ হাজার টাকা। সোলেয়মান আলী নামে এক কৃষক প্রথমে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে বোরো ধানে সেচ দেয়া শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে তার দেখা দেখি জেলার অনেক কৃষকই এ পদ্ধতিতে সেচ দেয়া শুরু করেন। বর্তমানে ঠাকুরগাঁও সদর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় ৩০টি ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেলের মাধ্যমে প্রায় ১০০ হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি বছর জেলায় ৬২ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে চারা রোপণের জন্য অধিকাংশ জমিই প্রস্তুত করা হয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষকরা। শীত চলে যাওয়ায় কোন কোন কৃষক জমিতে হাল চাষ করছেন। আবার অনেকে জমিতে চারা রোপণ করছেন। কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সালের আগে বোরো ধানে সেচ দিতে হতো বরেন্দ্র উন্নয়ন বহুমুখী কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের মাধ্যমে। অনেক সময় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে নিরবচ্ছিন্নভাবে সেচ দেয়া সম্ভব হতো না। ওই সময় এক বিঘা জমিতে সেচ দেয়ার জন্য গুনতে হতো ৩ হাজার টাকা। সোলেয়মান আলীর সোলার প্যানেল পাম্প চালুর পর সে খরচ কমে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার টাকায়। বর্তমানে জেলা সদর ও বালিয়াডাঙ্গী উপজেলায় প্রায় ৩০টি ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেল পাম্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা নিচ্ছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে সদর উপজেলার ভেলাজান ইউনিয়নের মোলানী গ্রামের সোলার প্যানেলের কারিগর সোলায়মান আলী বলেন, বোরো আবাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হচ্ছে পানি। সময়মতো পর্যাপ্ত পানি দেয়া না গেলে ফলন কমে যায়। জমিতে সেচ দেয়ার জন্য নির্ভর করতে হতো বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ওপর। তাদের কাছ থেকে সেচ সুবিধা নেয়ার জন্য প্রত্যেক কৃষককে গুনতে হতো ৩ হাজার টাকা। তার পরও লোডশেডিংসহ নানা ভোগান্তি লেগে থাকত। কৃষকদের ভোগান্তি কমানোর জন্য ২০১৫ সালের শুরু থেকে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ সুবিধা দেয়ার চেষ্টা করি। ২০১৬ সালে প্রথমে আমার জমিতে সোলার প্যানেলের মাধ্যমে সেচ দেই। পরবর্তী সময়ে আমার দেখাদেখি অনেক কৃষক এ পদ্ধতিতে জমিতে সেচ দেয়া শুরু করেন। তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছ থেকে প্রায় ২২টি সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প কিনেছেন জেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষক। তাছাড়া আরও ৩০টি পাম্প দিয়ে সদর ও বালিয়াডাঙ্গা উপজেলায় সেচ দেয়া হচ্ছে। সদর উপজেলার মোলানী গ্রামের মজিবর রহমান, আইয়ুব আলী, মোকলেসুর রহমানসহ অনেক কৃষক জানান, আগে বোরো মৌসুমে সেচ নিয়ে কৃষককে বিপাকে পড়তে হতো। এখন ভ্রাম্যমাণ সোলারের সেচ ব্যবস্থায় অনেক সুবিধা পাচ্ছেন তারা। আগে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সেচ দেয়া হতো। তাছাড়া অনেক কৃষক আবার নিজ উদ্যোগে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত পাম্প কিনে সেচ দিতেন। কিন্তু তাতে অনেক খরচ হতো। এখন তা হচ্ছে না। বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ভ্রাম্যমাণ সোলার প্যানেল দিয়ে সেচ দিতে খরচ হচ্ছে মাত্র ২ হাজার টাকা। তারা বলেন, সেচের এ ভোগান্তির কারণে অনেক কৃষক বোরো আবাদ ছেড়ে দিয়েছিলেন। আবার অনেকে বোরো আবাদের জমির পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছিলেন। তবে সোলার প্যানেলের সেচ পাম্প চালুর পর আবার অনেক কৃষকই বোরো আবাদ শুরু করেছেন। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোঃ আফতাব হোসেন বলেন, জেলায় দিন দিন সোলার প্যানেল সেচ পাম্পের ব্যবহার বাড়ছে। এতে কৃষকরা সাশ্রয়ে ফসল আবাদ করতে পারছেন। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে কোন শঙ্কা নেই। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে তীব্র শীতের কারণে অনেক কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। তার পরও ফলনে যাতে কোন প্রভাব না পড়ে, সেজন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।
×