ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অনৈতিহাসিক ॥ বাঙালীর মহাকাব্য- কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১৪ মার্চ ২০২০

অনৈতিহাসিক ॥ বাঙালীর মহাকাব্য- কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না

দেশের প্রথম এক্সপ্রেসওয়ে বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করা হলো। মুহুর্মুূহু করতালির মধ্যে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। মহান আল্লাহপাকের কাছে শুকরিয়া! এর মাধ্যমে বাংলাদেশের ‘বদলে’ যাবার তথা এগিয়ে যাবার শুভ সূচনা হলো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেদিন প্রত্যয়দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করলেন ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই।’ ফখরুল-রিজভীর মতো মানুষরা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খুচরা কিছু মাস্টার, কিছু কলাম লেখক সেদিন হেসে থাকতে পারেন। কিন্তু তারা বঙ্গবন্ধুকেও বুঝতে পারেননি, শেখ হাসিনাকেও বুঝতে পারছেন না। এটা তাদের বোঝবার দৈন্যও হতে পারে কিংবা যারে দেখতে না-রি তার চলন বাঁকা হতে পারে। বঙ্গবন্ধু যেমন সেদিকে তাকাননি, নিজের লক্ষ্যপথে হেঁটেছেন তেমনি কন্যা শেখ হাসিনাও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলছেন। এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং উদ্বোধনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ এবং আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। বাঙালী জাতি চিরকাল মাননীয় নেত্রীকে মনে রাখবে। সেই সঙ্গে নেত্রীর নির্দেশ এবং দিকনির্দেশনা অনুযায়ী দিন-রাত পরিশ্রম করার জন্য সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকেও ধন্যবাদ। যদি প্রশ্ন করা হয় বাঙালী জাতির মহাকাব্য কি? উত্তর হবে- * কেউ বলবেন - মহাকবি কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ * কেউ বলবেন - আলাওলের ‘পদ্মাবতী’ * কেউ বলবেন - মীর মশাররফ হোসেনের ‘বিষাদ সিন্ধু’ * কেউ বলবেন – শ্রী মধুসূদনের ‘মেঘনাদ বধ’ কিন্তু বাঙালীর যদি কোন মহাকাব্য থাকে, তা হলো ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’ আমি বলছি না, ঐসব মহাকাব্যের কোন ইমপ্যাক্ট নেই। আছে, কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তৎকালীন রমনার রেসকোর্স ময়দানে ১০ লাখ মানুষের উত্তাল তরঙ্গের মাঝে সাতটি শব্দের যে মহাকাব্যটি রচনা করে গেলেন; তার তুলনা কেবল সেই সাতটি শব্দই, এর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই। এই এক্সপ্রেসওয়ের দুটি সার্ভিস লেন দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীকে যুক্ত করবে। এখন মাত্র ২৭ মিনিটে ঢাকা থেকে মাওয়া যাওয়া যাবে। তাতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস, প্রায় ১০০টি সেতু এবং কালভার্ট রয়েছে। ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ পদ্মা সেতুর সঙ্গে সংযুক্ত হবে, যা বর্তমানে নির্মাণাধীন। এই এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজ পুরোপুরি শেষ হলে বৃহত্তর ফরিদপুর, বৃহত্তর বরিশাল এবং বৃহত্তর খুলনার অর্থাৎ গোটা দক্ষিণ অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ সহজ হবে। অর্থাৎ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২২ জেলার মানুষের যাতায়াত এবং মালামাল পরিবহন সহজ হবে। একটা সময় ছিল যখন ঢাকা থেকে টুঙ্গিপাড়া যেতে ২দিন লাগত- কখনো নৌকায়, কখনো লঞ্চে, কখনো ভ্যানগাড়িতে। সে অবস্থা আর নেই। অর্থাৎ পদ্মা সেতু চালু হবার পর সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা ইনশাল্লাহ! আগামী ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পদ্মাসেতুও চালু হয়ে যাবে। সম্প্রতি একটু অসুবিধা হয়েছে ‘করোনা ভাইরাস’-এর প্রভাবে। এতে কিছু কর্মী কাজ করবে, নাকি করবে না এমন একটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল (ডু অর হোয়াট টু ডু)। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের কারণে মুজিববর্ষের সভা-সমাবেশ-আনন্দ মিছিল বন্ধ করে দিয়েছেন। অবশ্য সামাজিক কর্মসূচী যেমন ভূমিহীনদের ভূমি, ঘরহীনদের ঘর দান কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। অথচ, যে চীন থেকে এই করোনাভাইরাসের উৎপত্তি সেখানেই এই ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাচ্ছে। পদ্মা সেতুতে কর্মরত চীনা কর্মীদের মধ্যেও আজ আর সেই আতঙ্ক নেই। তাছাড়া বাংলাদেশে করোনা উৎপত্তির শঙ্কা অনেক কম বলেই আমি মনে করি। আমি এ বিষয়ের ওপর এক্সপার্ট নই। যারা এক্সপার্ট তারাই কেবল বলতে পারবেন বাংলাদেশে মরণঘাতী এ করোনা ভাইরাস কতখানি ঝুঁকিপূর্ণ। আমাদের একটি সুবিধা অন্তত আছে সেটি হলো আমরা বাঙালীরা বাদুড়, সাপ, গিরগিটি, ইঁদুর, চিকা এর কোনটাই খাই না। আমাদের ঝুঁকিও কম। আমাদের যেটুকু আছে, তা হলো পোল্ট্রি ফিড। এই পোল্ট্রি ফিড কি দিয়ে বানায় আমরা ভোক্তারা জানি না। পোল্ট্রি ফার্মের যে মুরগিটি বা চাষের যে মাছটি খাচ্ছি তা পিওর কি না সেটি জানার সময় বা উপায় কোনটাই আমাদের নেই। আমাদের যা চরিত্র তাতে কোন উপদেশই কাজে লাগবে না। যারা আম-লিচুতে বিষ দেয়, পচনরোধে বা কার্বাইড ব্যবহার করে দ্রুত পাকার জন্য, আগাম বাজারে নিয়ে বেশি দাম পাওয়ার জন্য কিংবা দেশের ব্যবসায়ীরা মানুষের দুর্দশা-বিপর্যয়ের মধ্যে রাতারাতি মালামাল উধাও করে অস্বাভাবিক দ্বিগুণ-তিনগুণ দাম হাঁকে; তাদের ব্যাপারে কি বলা যাবে- গণবিরোধী, দেশদ্রোহী না বেঈমান! প্রিয় পাঠক, এ অবস্থা আমাদের সমাজে ব্যাপকভাবে আছে। রাজনীতি ব্যবহার করে ক্যাসিনো, চাঁদাবাজি, বেশ্যাবৃত্তি, এই তো আমাদের সমাজ। এরা এতোই বেপরোয়া যে, বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডলের মাস্ক পরিয়ে সালাম নেয়, টিস্যু পেপারে বঙ্গবন্ধুর ছবি ছাপে (যা দিয়ে কেউ নাক মুছে, কেউ পা মুছে, কেউ ওয়াশরুমে ব্যবহার করে, তারপর কেউ ওয়েস্ট বক্সে, কেউ ড্রেনে, কেউ ডাস্টবিনে ফেলে) আবার বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে পোস্টার ছেপে কেউবা ডাস্টবিনে, কেউবা পাবলিক টয়লেটের ওয়ালে সেঁটে দেয়। শুধু তাই নয়, তৃণমূল রাজনীতির অবস্থা আরও খারাপ। বিশেষ করে দলের অধঃস্তন কমিটি করার ক্ষেত্রে খুব কমই দলের স্বার্থ দেখে- মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নীতি- আদর্শ অনুসরণ করে কেউ প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটানোর জন্য বিতর্কিত এবং মস্তান, সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত লোকদের নেতা (তৃণমূলে) বানায়। রাজাকার, আলবদর-আলশামসদের মুজিব কোট পরিয়ে দলে ভেড়ায় টাকার বিনিময়ে এবং জামায়াত-শিবির, আলবদরদের প্রতিষ্ঠিত এবং পরিচালিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়ে যায়। হয় না স্বাধীনতার পক্ষের প্রতিষ্ঠান। অনেকে আছে দলের প্রভাবশালী নেতার ছত্রছায়ায় অপকর্ম করে রি-শিডিউলের সুযোগ নিয়ে বারবার ব্যাংক থেকে ঋণ দেয়। আবার রি-শিডিউল করে টাকা নেয়, নিতেই থাকে। যুক্তি হলো নতুন ঋণ না দিলে তারা অতীতের পাওনা দেবে কি করে। তাছাড়া তারা তো রি-শিডিউল করেই টাকা নিচ্ছে এ তো আইনের আওতায়ই পড়ে। আসলে কি তাই! আরেকটা দিক আছে যারা দলীয় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার দাপটে সমাজের বিতর্কিত লোকদের নিয়ে লোকাল গবর্নমেন্ট বা স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন স্তরে নমিনেশন নিয়ে দেয়, যারা ১৫ আগস্টের পর বলে ‘এটা যে হবে আগেই জানতাম।’ সবকিছুর একটা সীমা আছে। সেই ব্যক্তিই আবার প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা হয়। কারা এই অপকর্মগুলোর পেছনে কলকাঠি নাড়ে, মানুষ জানে। তবে এসব লোক এবং ওদের প্রোমোটাররা আজও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে আছেন। কিংবা যারা বিশেষ বিশেষ ক্লাব বা বিশেষ রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ-ডিনারের নামে মদের বন্যা বইয়ে দেয় তারাই বা কোথায়? এদের খোঁজার জন্য হারিকেন নিয়ে রাস্তায় নামার দরকার নেই, চোখ-কান একটু খোলা রাখলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ লেখা ছাপা হবে শনিবার অর্থাৎ ১৪ মার্চ। শিডিউল অনুযায়ী পরের শনিবার আসতে এবং আবার পরবর্তী লেখা ছাপা হবার আগেই ১৭ মার্চ ২০২০ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ শুরু। অর্থাৎ আমার আর লেখার সুযোগ নেই- তাই, এখানেই মুজিববর্ষ নিয়ে কিছু আলোচনা করছি। মুজিববর্ষ আত্ম-আবিষ্কারের সহজপাঠ শুরু করেছিলাম বঙ্গবন্ধু জাতি বাঙালীর মহাকাব্য ‘সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না’ এই ৭টি শব্দ দিয়ে। আমি বেশ কিছু লেখায় বলেছিলামÑ বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের এক একটি শব্দ শতাব্দী ধারণ করে। আজ বিশ্ববাসীও তা স্বীকার করছে এবং আড়াই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ বলে বিশ্ব ঐতিহ্যের দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছে। আমি সেই মহাকাব্য থেকে মাত্র তিনটি শব্দ নিয়ে কিছুটা আলোচনা করব- * দাবায়ে * রাখতে * পারবা না জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু এই শব্দ তিনটি বিশেষ করে ‘দাবায়ে’ শব্দটি আমাদের উপহার দিয়েছিলেন প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছিলেন- “আজি হতে শত বর্ষ পরে কে তুমি পড়িছ বসি আমার কবিতাখানি কৌতুহলভরে...” কবি নির্মলেন্দু গুণের ভাষায় ‘রাজনীতির কবি’ যা বিশ্বব্যাপী প্রচারিত এবং জনপ্রিয় ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদের ভাষা- ঢ়ড়বঃ ড়ভ ঢ়ড়ষরঃরপং থেকে আমি একটি শব্দ নিয়ে কয়েকটি কথা বলছি- এই ‘দাবায়ে’ শব্দটি আমার কাছে এমন একটি শব্দ যা কেবল শতবর্ষ নয় হাজার বর্ষ ধারণ করছে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে তথা যতদিন এই পৃথিবীর নিপীড়িত মানুষ থাকবে ততদিন এই ‘দাবায়ে রাখতে পারবা না’ শব্দ তিনটি বারুদের মতো ব্যবহৃত হবে। বিশেষ করে ‘দাবায়ে’ শব্দটি। এ শব্দে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া অঞ্চলের উচ্চারণগত টান আছে অর্থাৎ জাতির পিতা যেমন ছিলেন গ্রামের অশিক্ষিত, পিছিয়ে পড়া মানুষের বন্ধু, আপনজন তেমনি গ্রাম ভুলে যাওয়া শহুরেদের নেতা। যে কারণে বক্তৃতা-বিবৃতিতে ‘ভায়েরা’ আমার (ভাইয়েরা নয়) উল্লেখ করেছেন। কিন্তু আমার গরিব-দুঃখী মানুষ এই ‘আমার’ ক’জন সম্বোধন করতে পারে। ক’জন বলতে পারে “ইজ্জত দিয়ে কথা কইয়েন” অথবা তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাক, কেউ কিছু বলবেনা, আর আমার বুকে গুলি চালানোর চেষ্টা করোনা- * ভাল হবে না * আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না * আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে খুনী মোশতাক-জিয়া ভেবেছিল বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলব, আবার পাকিস্তানের মতো বাঙালীদের ওপর নির্যাতন চালাবে। কিন্তু কার সাধ্য, যেখানে দাবায়ে রাখতে পারবা না শব্দাবলী বাঙালীর মানসপটে অঙ্কিত হয়ে আছে। তাই তো আইয়ুব-ইয়াহিয়া পারেনি, মোশতাক-জিয়া পারেনি, সাত্তার-এরশাদ পারেনি, খালেদা পারেনি, ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনরা পারেনি। গত ৪০ বছর শেখ হাসিনা রাষ্ট্রনেতা। এর মধ্যেও ২১ টি বছর চলে গেছে মিলিটারিদের লুটপাট-দুর্নীতিতে। নইলে কেবল ঢাকা-মাওয়া বা ঢাকা-খুলনা বা ঢাকা-বরিশাল না, গোটা বাংলাদেশই এক্সপ্রেসওয়ের আওতায় চলে যেত। ভাতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত আমরা বাংলাদেশের নাগরিকরা ভালো আছি। আমরা দুইবেলা, তিনবেলা খেতে পাচ্ছি। আজ থেকে ১০/১২ বছর আগেও একটি বিরাট জনগোষ্ঠী একবেলা, আধাবেলা খেয়ে বাঁচত, বেশিরভাগ মানুষ খালি পায়ে হাঁটত, অনেকে বনের কচুঘেচু খেয়ে খিদের জালা মিটাত, ২৪ ক্লাস ঘুরে ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া ছেড়ে দিত, সুচিকিৎসা ছিল স্বপ্নের ব্যাপার, একটা বিরাট জনগোষ্ঠীর ঘর ছিল না, ছনের ঘরে বৃষ্টিতে পানি পড়তো, গ্রামে মহিলাদের দেখা যেতÑ একটু ভাত, একটু ফেনের জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়াতে। আজ আর সে অবস্থা নেই। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সফল রাষ্ট্রনেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের মানুষ ‘ভাতের গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছে। আজ কোন মানুষ না খেয়ে থাকে না, পোশাক-আশাকে মানুষ শহুরে বাবু, কেউ খালি পায়ে হাঁটে না, ছেলেমেয়েরা কেডস, ইউনিফর্ম পরে স্কুল-কলেজে যায়, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও এখন যানবাহন চলে, বিদ্যুত ঘরে ঘরে, স্বাস্থ্য সেবা দোর গোড়ায়, আর কি চাই- বাংলাদেশ তথা জয় বাংলায় ভাতের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। প্রায়োরিটি কর্মসূচী- ক. একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না খ. একটি মানুষও ঘরহারা থাকবে না গ. আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীনদের ঘরসহ ভূমি দেয়া হবে ঘ. যাদের জমি আছে, ঘর নেই তাদের ঘর করে দেবেন ঙ. জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের মাধ্যমে জরিপ কাজ শুরু হয়েছে চ. জাতীয় সংসদ সদস্যদের স্ব স্ব এলাকায় ভূমিহীন-ঘরহীনদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন কিন্তু বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণজনিত পরিস্থিতির কারণে উদ্বোধনী সমাবেশসহ বড় ধরনের গেট টুগেদার আপাতত স্থগিত রাখাসহ মুজিববর্ষের কর্মসূচী পুনঃবিন্যাস করা হয়েছে। তবে স্টুডিওতে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানিয়ে টিভি-রেডিওর মাধ্যমে দেশব্যাপী প্রচার করা হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রায়োরিটি কর্মসূচী অর্থাৎ ভূমিহীনদের ঘর করে দেবার কর্মসূচী বাস্তবায়ন অব্যাহত থাকবে। সংশোধন হয়নি তারপরও একশ্রেণীর নাগরিক নিজেদের হীন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক স্বার্থে এমনভাবে দল ও সরকারকে ব্যবহার করছিলেন মুজিববর্ষ উপলক্ষে যে তাদের এই স্বার্থ হাসিলের মাত্রা সকল নিয়মনীতি ও ভব্যতা ছাড়িয়ে যায়। খবর বেরিয়েছে, শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি গত ২৯ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুষ্ঠানে অংশ নেন এবং ছাত্রীরা জাতির পিতার মুখম-লের ছবি সম্বলিত মাস্ক পরে প্রধান অতিথিকে সালাম জানায়। এতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন, একই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যবহার্য টিস্যু পেপারে জাতির পিতার ছবি ছেপে দেয়া হয়, তারও আগে দুই হাজারের ওপর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয় যার বিরাট সংখ্যক জামায়াত-আলবদর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত, পরিচালিত। আর তা-ই ঐ ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে পাশাপাশি অনুষ্ঠানের কথা বলে চাঁদাবাজি তো চলমান প্রক্রিয়া। আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণকারী বিশ্বস্ত নাগরিক ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের প্রশ্ন- * কেন শেখ হাসিনাকেই সবকিছু স্যাক্রিফাইস করতে হবে? * কেন খারাপ নাগরিক এবং দলীয় নেতাকর্মীদের অপকর্মের দায় একা শেখ হাসিনাকে বহন করতে হবে? * কেন আজ অনেকেই অতি উৎসাহী? * ১৫ আগস্টের পর যে লোক প্রেসক্লাবে বলেছিল ‘এমনটি যে হবে আগেই জানতাম সবকিছুর একটা সীমা আছে’। অথচ সেই লোককে নিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা বানানো হয়। কারা এ অপকর্মটি করেছিল। তারা কি এখনো প্রধানমন্ত্রীর চারপাশে আছে? প্রধানমন্ত্রী দলীয় পার্লামেন্টারি পার্টির বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন “৭৫ পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর কি পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল তা আমরা দেখেছি। আমার বাবার লাশ ৩২ নম্বরে পড়েছিল কেউ তো এগিয়ে আসেনি, আমার মায়ের লাশ রেড ক্রিসেন্টের কাপড় দিয়ে দাফন করা হয়েছিল তখন এই অতি উৎসাহীরা কোথায় ছিলেন” এর কি কোনো জবাব আছে। মুজিববর্ষ আত্ম-আবিষ্কার মুজিববর্ষ প্রকৃতপক্ষে আত্ম-আবিষ্কারের সহজপাঠ। কৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে আমাদের কাজ হবে যে যেভাবে পারবে জাতির পিতার জীবন, আত্মত্যাগ ও সংগ্রাম সম্পর্কে জানা বিশেষ করে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের সামনে জাতির পিতাকে তুলে ধরা। কি করে একজন মানুষ দক্ষিণ বাংলার এক পাড়াগাঁ থেকে উঠে এসে মাত্র ৫০ বছরে একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করলেন, কি করে বাবা-মায়ের আদরের খোকা থেকে শেখ মুজিব, শেখের বেটা, মুজিব ভাই, বাঙালীর অবিসম্বাদিত নেতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী,ইতিহাসের মহানায়ক এবং বাঙালী জাতির পিতা, রাষ্ট্রপিতা, বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু হলেনÑ ধারাবাহিকভাবে তা আজকের প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে হবে। এভাবে জীবনের সোনালী দিনগুলো জাতির জন্য উৎসর্গ করেছেন, কেনইবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত হলেন, যে কারণে এলএলবি ফাইনাল পরীক্ষা দিতে পারলেন না, এসব সবার জানা দরকার। পিতার মতোই কন্যা শেখ হাসিনাও আগস্ট ট্র্যাজেডির কারণে এমএ পরীক্ষা দিতে পারলেন না, জানা দরকার কেন ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানের মিয়ানওয়ালি কারাগারে বন্দী করা হয় এবং বন্দী অবস্থায় বিচারে ফাঁসির হুকুম দেয়া হয় এবং কারা-সেলের পাশে কবর খোদা হয় মানসিকভাবে নির্যাতন করার জন্য। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসায় বিশেষ ক্লাস আয়োজন এবং তাতে করে বঙ্গবন্ধুর দুনিয়া কাঁপানো মার্চ নন- কোঅপারেশন ম্যুভমেন্ট এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (রেসকোর্স) ঐতিহাসিক ৭ ই মার্চের ভাষণের নিয়মিত পাঠ থাকতে পারে, এটি খুবই জরুরী। কেন ৭ই মার্চের ভাষণ হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ ভাষণ হিসেবে বিবেচিত এবং স্বীকৃত, কি করে এত কিছু করলেন গবেষণা হওয়া দরকার। পাকিস্তানের গণহত্যা, নারী নির্যাতন তথা ২৩ বছরের ইতিহাস যেমন জানতে হবে তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধে প্রতিবেশী ভারত এবং তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর অবদান জানতে হবে এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণন এবং অস্ত্র ও গোলা-বারুদ দান, যুদ্ধে অংশ নেয়ায় ভারতের ১৭ হাজার সৈন্যের জীবন দানÑএসব জানতে এবং জানাতে হবে। বঙ্গবন্ধুর ওপর আলোচনা করতে গেলে অবধারিতভাবে বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ও শেখ হাসিনার কথা আসবেই। তারা, বিশেষ করে বঙ্গমাতা নীরবে বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বিশ্বস্ত সহযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন, বঙ্গবন্ধু কারাগারে তিনি একাধারে সন্তানদের মানুষ করার পাশাপাশি দল ও দলের লড়াই পরিচালনা করেছেন এবং অনন্ত জীবনে চলেও গেলেন একই সঙ্গে। ঢাকা- ১৩ মার্চ ২০২০ লেখক : এমপি, সদস্য- মুজিববর্ষ উদ্যাপন জাতীয় কমিটি, সাবেক সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় প্রেসক্লাব [email protected]
×