ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক্সপ্রেসওয়ে যুগে পদার্পণ

প্রকাশিত: ০৮:৫৬, ১৪ মার্চ ২০২০

এক্সপ্রেসওয়ে যুগে পদার্পণ

দেশজুড়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবর্ষের শুভ আয়োজন। এত বড় অনুষ্ঠানমালার গভীর তাৎপর্যের মূলে রয়েছে জাতির জনকের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার উদ্দীপনা ও অঙ্গীকার। উন্নয়ন অগ্রগামিতায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। সবচেয়ে নজরকাড়াভাবে এগিয়ে চলায় গুরুত্বপূর্ণ খাত হিসেবে অবকাঠামোর উন্নয়ন পরিকল্পনা আজ দৃষ্টিনন্দনভাবে দৃশ্যমান। মেট্রোরেলের প্রস্তুতি কর্মযোগ থেকে শুরু করে নিজ অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমই শুধু নয়, সড়ক-মহাসড়কের ৪ লেনবিশিষ্ট সংযোগ স্থাপনও আজ দেশের দর্শনীয় মেগা প্রকল্প। এমন সব কর্মপ্রকল্পের সম্মুখ যাত্রায় আরও এক সম্ভাবনাময় শুভযোগ এক্সপ্রেসওয়ের দ্বার উন্মোচন। মুজিববর্ষ শুরুর প্রাক্কালে যাত্রাবাড়ী-মাওয়া-ভাঙ্গা রুটে দেশের প্রথমবারের মতো এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগ সড়ক খুলে দেয়া হয় বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই নতুন যুগে পদার্পণের শুভ উদ্বোধন করেন। জাতির জন্য মুজিববর্ষের অনন্য উপহার এ এক্সপ্রেসওয়ে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সূচিত হলো এক নতুন যুগের। ছয় লেনবিশিষ্ট এই এক্সপ্রেসওয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের জন্য যাতায়াত ব্যবস্থার এক যুগান্তকারী মাইলফলক। এতে যাত্রার সময় কমবে, যানজটের আশঙ্কা থাকবে না, ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও আরামদায়ক। সংশ্লিষ্ট উর্ধতম কর্মকর্তা আশান্বিত আন্তর্জাতিকমানের এই এক্সপ্রেসওয়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলোর সমন্বয় সাধনে শুধু যে যাত্রাকালীন স্বস্তি তা কিন্তু নয়, বরং দেশের অর্থনৈতিক কর্মকা-েও আসবে এক অভাবনীয় সাফল্য। ক্রমবর্ধমান ব্যবসা-বাণিজ্য সারাদেশে সম্প্রসারিত হয়ে দেশজ অর্থনীতির চাকাকে আরও সচল ও গতিশীল করবে, যা মোট জাতীয় উৎপাদনে সুদূরপ্রসারী অবদান রাখবে। যাতায়াতের এই সুবর্ণ সুযোগটিতে পাঁচটি ফ্লাইওভার, ১৯টি আন্ডারপাস এবং প্রায় ১০০টি সেতু ও কালভার্টের অন্তর্ভুক্তি রয়েছে। বরিশাল বিভাগের ছয়, খুলনা বিভাগের ১০ এবং ঢাকা বিভাগের ছয় জেলা অর্থাৎ দেশের ২২ জেলার সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগের অবিস্মরণীয় দ্বারটির উন্মোচন হলো তা সারা বাংলাদেশে সামগ্রিক ব্যবস্থাপনায় এক অভাবনীয় শুভ সঙ্কেত। এই অত্যাধুনিক এক্সপ্রেসওয়ের দুটি অংশ পদ্মা সেতুর প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার অংশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। আরও একটি সম্ভাবনাময় সেতু সংযোগ বাংলাদেশকে নিয়ে যাবে যোগাযোগের অনন্য মাত্রায়, যা এখন নির্মাণাধীন। স্বপ্নের পদ্মা সেতু তার বহুবিধ সফল কার্যক্রমে জনগণের দ্বারে পৌঁছাতে অপেক্ষমাণ। আর সেই সুবর্ণ যুগে রাজধানীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোর দূরত্ব যেমন কমে আসবে, পাশাপাশি সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার শহর আমার গ্রাম’ এমন বার্তারও সফল উপস্থাপন হবে। সত্যিই একটি বাসযোগ্য, নিরাপদ ও আধুনিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে জাতি অপেক্ষার দিন গুনছে। অবকাঠামোগত এসব নির্মাণ প্রকল্প আগামী ২০ বছরের প্রয়োজন ও লক্ষ্যমাত্রা বিবেচনায় চার লেনবিশিষ্ট সড়ক-মহাসড়ক, ছয় লেন বিশিষ্ট এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে পদ্মা সেতুর কার্যক্রমকে সন্নিবেশিত করে সারাদেশকে একটি উন্নত পর্যায়ে আনার পরিকল্পনা এখন বাস্তবায়নের পথে। ২০১৬ সাল থেকে শুরু হওয়া এই এক্সপ্রেসওয়ে নির্ধারিত সময়ের তিন মাস আগেই তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করে। এটাও বাংলাদেশের দীর্ঘায়িত সংস্কৃতিতে কর্মযোগের একটি সফল দৃষ্টান্ত। আলোকিত বাংলাদেশ গড়ার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে নিরন্তর গতিপ্রবাহে। যেখানে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে সারাদেশের যে নিরবচ্ছিন্ন সম্প্রসারিত যোগাযোগ সেটাও বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় সফলতা। সারাদেশে যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে শিল্প উদ্যোগের মহতি কার্যক্রম সেটাও যোগাযোগ ব্যবস্থার সফল সংযোগে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে খুব বেশি সময় নেবে না। তেমন প্রত্যাশিত বাংলাদেশের অপেক্ষায় পুরো জাতি।
×