ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা ছড়িয়েছে ১২৫ দেশে, মৃত্যু ৪৭৩০

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৩ মার্চ ২০২০

করোনা ছড়িয়েছে ১২৫ দেশে, মৃত্যু ৪৭৩০

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটারের ওয়েবসাইট অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১২৫টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮০ জন মানুষ। এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছে ৪ হাজার ৭৩০ জন। আর সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৬৮ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে উপমহাদেশে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটল ভারতের কর্নাটকে। খবর এএফপি, বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা, এনডিটিভি, আনন্দবাজার পত্রিকা, সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট ও ইয়াহু নিউজের। গত দুই সপ্তাহে ভাইরাসটি চীনের বাইরে ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে বুধবার বিশ্বব্যাপী মহামারী ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। উৎপত্তিস্থল চীনে ৮০ হাজারেরও বেশি মানুষ আক্রান্ত হলেও সেখানে ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইতালিতে। দেশটিতে ১৫ হাজার ১১৩ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার বিপরীতে মারা গেছেন ১০১৬ জন। ইতালির পর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে ইরানে। দেশটিতে ৯ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৩৫৪ জন। দক্ষিণ কোরিয়ায় ৭ হাজার ৮৬৯ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৬৬ জন। ফ্রান্সে ২ হাজার ২৮১ জন আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে ৪৮ জন। স্পেনে ২ হাজার আক্রান্তের বিপরীতে মারা গেছে ৫৫ জন। জার্মানিতে ১ হাজার ৯৬৬ জন আক্রান্তের মধ্যে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। আর যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার ৩২২ জন আক্রান্তের মধ্যে ৩৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। সারাবিশ্বে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে ২৩৮ জন। এর মধ্যে চীনে অন্তত ১৮, দক্ষিণ কোরিয়ায় ১১৪, যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫, অস্ট্রেলিয়ায় ২১, কানাডায় ৮, ইসরাইলে ৩, ভারত ও থাইল্যান্ডে ১১ জন করে, পোল্যান্ডে ১৩, বেলারুশে ৩ ও মেক্সিকোতে ১ জন আক্রান্ত হয়েছে। ইতালিতে একদিনেই ১৯৬ জনের মৃত্যু ইতালিতে একদিনেই করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দেশটির বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থার বিবৃতিকে উদ্ধৃত করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজ এ তথ্য জানিয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর ২৪ ঘণ্টায় এটিই সর্বোচ্চ সংখ্যক মৃত্যুর ঘটনা। ইতালির বেসামরিক সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের বিবৃতি অনুযায়ী, মঙ্গলবার থেকে বুধবারের মধ্যে নতুন ১৯৬ জনের মৃত্যুর পর দেশটিতে করোনায় প্রাণহানির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০১৬ জনে। আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ১৪৯ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ১১৩ জনে। করোনা ঠেকাতে ইতালির উত্তরাঞ্চলকে অবরুদ্ধ (লকডাউন) করে রাখার পরও এর বিস্তার ঠেকানো যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে ৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইতালিজুড়ে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ ও জনসমাগম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার। সব ধরনের ক্রীড়া আয়োজন স্থগিত করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার সময়সীমাও। ভারতে প্রথম মৃত্যু করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিবেশী ভারতে ৭৬ বছর বয়সী এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার দেশটির কর্ণাটকের কালবুর্গি জেলায় ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। নিজের বাড়িতেই মারা যান তিনি। তার মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন কর্ণাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও। গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষদিনেই সৌদি আরব থেকে ভারতে ফিরেছিলেন ওই বৃদ্ধ। সেই সময় তার ডাক্তারি পরীক্ষা হলেও করোনার উপসর্গ ধরা পড়েনি। গত ৫ মার্চ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তখন তাকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষায় জানা যায়, করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। অবশ্য নার্সিংহোম থেকে ওই বৃদ্ধকে হায়দ্রাবাদের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হলেও সেখান থেকে তাকে বাড়ি নিয়ে যান আত্মীয়-পরিজনরা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যেই ৭৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। দেশে প্রথম করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর পরই সতর্কতা জারি করা হয়েছে কর্ণাটকজুড়ে। এছাড়া শুক্রবার থেকে বেঙ্গালুরুর সব স্কুল বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছে কর্ণাটক সরকার। চীনের হুবেই প্রদেশে নতুন রোগী কমে এক অঙ্কে চীনের হুবেই প্রদেশে নতুন করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা আট জনে নেমে এসেছে, দৈনিক রেকর্ড প্রকাশ শুরু হওয়ার পর থেকে এই প্রথম মহামারীর উৎসস্থলে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা এক অঙ্কের ঘরে নেমে এলো। নতুন আক্রান্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সতর্কভাবে কিছু কিছু বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু করেছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও ফের খোলা শুরু করেছে বলে রয়টার্স জানিয়েছে। হুবেই প্রদেশ কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরও শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে এবং প্রদেশের দুটি শহর ও দুটি কাউন্টির কিছু শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে উৎপাদন ফের শুরু করার অনুমতি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, বুধবার হুবেইয়ে নতুন আক্রান্তের সব ঘটনাই উহানে ঘটেছে। চীনে হোটেল ধসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ চীনে সম্ভাব্য করোনাভাইরাস আক্রান্তদের কোয়ারেন্টাইনে রাখতে ব্যবহৃত একটি আবাসিক হোটেল ধসের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। ফুজিয়ান প্রদেশের চুয়ানজু শহরের পাঁচতলা ওই হোটেলটিতে ৭০ জনেরও বেশি সম্ভাব্য আক্রান্তকে রাখা হয়েছিল। তাদের মধ্যে ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে ২৭ জন নিহত হন ও পরে দুই জন মারা যান বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে উহানে চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যে ‘বৈশ্বিক মহামারী’ বলে ঘোষণা করেছে। তবে এবার উহান শহরে দিন দিন কমছে মৃত্যু এবং আক্রান্তের সংখ্যা। সপ্তাহখানেক ধরেই প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ থাকা উহানে। শহরটির কয়েকটি সংস্থার অফিসও দ্রুত সময়ের মধ্যে খুলে দেয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে চীন সরকার। ইরানে আরও ৭৫ মৃত্যু, বিশ্বজুড়ে বেড়ে ৪৭২৯ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ইরানে আরও ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ৪২৯ জনের। এ রোগে দেশটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৭৫ জন। আর বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭২৯ জনে। বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এসব তথ্য জানায়। ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কিয়ানুশ জাহানপুর বলেন, দেশে শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে এই ভাইরাসে ১ হাজার ৭৫ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৭৫ জন। এ ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৫ জনের। সবমিলিয়ে দেশে এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৪২৯ জনের। করোনায় আক্রান্ত স্প্যানিশ মন্ত্রী, কোয়ারেন্টাইনে উপপ্রধানমন্ত্রী ॥ স্পেনের সাম্যবিষয়ক নারী মন্ত্রীর শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়েছে। করোনার পরীক্ষায় পজিটিভ রিপোর্ট আসার পর তাকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তার স্বামী, দেশটির উপপ্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দল পোদেমসের নেতা পাবলো ইগলিসিয়াসও স্ত্রীর সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। বৃহস্পতিবার স্পেন সরকারের এক বিবৃতিতে ওই মন্ত্রী ও তার স্বামীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, মন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা ভাল রয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী পাবলোও কোয়ারেন্টাইনে আছেন। মন্ত্রী এবং উপপ্রধানমন্ত্রীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার এই ঘোষণা দেয়া হয়েছে দেশটির মন্ত্রিসভার সদস্যদের বিশেষ এক বৈঠকের মাত্র দুই ঘণ্টা আগে। ওই বৈঠকে করোনাভাইরাস সঙ্কট মোকাবেলায় জরুরী পদক্ষেপের ব্যাপারে আলোচনা করা হতে পারে। মালয়েশিয়ায় আক্রান্তদের মধ্যে বাংলাদেশী নেই মালয়েশিয়ায় করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১৪৯ জন আক্রান্ত হয়েছে। তবে এর মধ্যে কোন বাংলাদেশী নেই। নিবিড় পর্যবেক্ষণ শেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সুস্থ ঘোষণা করেছে ২৬ জনকে যারা ইতোমধ্যে নিজ নিজ বাসায় ফিরেছে। বৃহস্পতিবার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়। খবর ওয়েবসাইটের। সবশেষ তথ্যমতে বৃহস্পতিবার সেরেম্বান এলাকা থেকে চার জনকে পাওয়া গেছে যাদের শরীরে করোনা থাকার লক্ষণ পাওয়া গেছে। আক্রান্তদের মধ্যে দুজন সম্প্রতি ইরান ও ভিয়েতনাম থেকে এসেছেন, বাকি দুজন তাদের পরিবারের সদস্য। তাদের তুনকো জাফর হাসপাতালে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত ১ থেকে ১১ মার্চ পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে ৬০০ জনকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজনের শরীরে এ ভাইরাসের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাসে কেউ মারা যায়নি বলে নিশ্চিত করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। বাংলাদেশ থেকে বন্ধ হচ্ছে ভারতগামী ফ্লাইট করোনাভাইরাসের কারণে আগামী ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরনের পর্যটক ভিসা স্থগিত করেছে ভারত সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ থেকেও দেশটিতে ফ্লাইট বন্ধ করছে কয়েকটি এয়ারলাইন্স। ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কূটনৈতিক, জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা, চাকরি এবং প্রজেক্ট ভিসা ছাড়া বিদ্যমান সব ধরনের ভিসা স্থগিত থাকবে। বুধবার রাতে এ সিদ্ধান্ত জানায় দেশটি। খবর ওয়েবসাইটের। নভোএয়ার জানিয়েছে, ১৪ মার্চ থেকে ঢাকা-কলকাতাগামী ফ্লাইট বন্ধ রাখবে এয়ারলাইন্সটি। এই সময়ের টিকেট কাটা যাত্রীরা বিনা চার্জে রিফান্ড করতে পারবেন। ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সও বন্ধ করছে ভারতগামী ফ্লাইট। এয়ারলাইন্সটির মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, ১৫ মার্চ থেকে চেন্নাই রুটের ফ্লাইট বন্ধ করা হবে। ১৬ মার্চ থেকে কলকাতা রুটের ফ্লাইট বন্ধ করা হবে। ঢাকা থেকে কলকাতা ও দিল্লী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করত বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ১৪ মার্চ থেকে এই দুই রুটে ফ্লাইট বন্ধ করছে এয়ারলাইন্সটি। বিমানের উপমহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার বলেন, কলকাতায় ও দিল্লীতে ভারতের নির্দেশিত সময় পর্যন্ত ফ্লাইট বন্ধ রাখা হবে। রিজেন্ট এয়ারওয়েজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরান আসিফ বলেন, আমাদের দেশে যেসব ভারতীয় আছেন এবং ভারতে যেসব বাংলাদেশী আছেন, তাদের ঢাকায় ফেরাতে আমরা কয়েকদিন ফ্লাইট চালানোর কথা জানিয়েছি ভারতকে। তারা অনুমতি দিলে কয়েকদিন এসব ফ্লাইট চলবে, এরপর বন্ধ থাকবে।
×