ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ১১:০৯, ১৩ মার্চ ২০২০

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বঙ্গবন্ধু বেঁচে নেই। কত সংগ্রামের জীবন! দেশ গড়ার লড়াই। সব অসমাপ্ত রেখে চলে গেছেন তিনি। আরও বহু বছর হয়ত তাঁকে পাওয়া যেত। অবিসংবাদিত নেতা হয়ত বেঁচে থাকতেন। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ না করে তাঁর তো চলে যাওয়ার কথা ছিল না। অথচ কী দুর্ভাগ্য বাঙালীর! যাঁর নামে স্বাধীনতা, যাঁর নামে দেশ, সবচেয়ে প্রয়োজনের মুহূর্তে হারাতে হলো তাঁকেই। এর পর থেকে উল্টো পথে চলা। মুজিব নাম মুছে ফেলার অযুত ষড়যন্ত্র। কিন্তু আজ? ইতিহাস ঠিকই ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সত্যকে কুলে তুলে নিয়েছে। মুজিবকে যারা ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে তারা। দেশের কোথাও তাদের স্থান হয়নি। মুজিব নামে শপথ নিয়েই এগিয়ে চলেছে দেশ। মুজিব আজ মৃত্যুঞ্জয়ী মহানায়ক। হ্যাঁ, মহানায়কের জন্মশতবার্ষিকী সামনে রেখেই কথাগুলো বলা। আগামী ১৭ মার্চ সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। এদিন গোটা জাতি উৎসব আনন্দে মাতবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ গর্বের সঙ্গে উদ্যাপন করবে মুজিববর্ষ। এরই মাঝে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা চূড়ান্ত করা হয়েছে। হ্যাঁ, করোনাভাইরাসের হুমকির মুখে দিন তারিখে কিছু পরিবর্তন এসেছে। তাই বলে এত বড় উপলক্ষ উদ্যাপন থেমে থাকবে না। সব দেখে এমন আভাসই পাওয়া যাচ্ছে। আপাতত ১৭ মার্চ সামনে রেখে প্রস্তুত হচ্ছে রাজধানী শহর ঢাকা। এদিন বহুবিধ আয়োজনে বঙ্গবন্ধুকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হবে। অভিনন্দিত করা হবে। চলছে সে প্রস্তুতি। আগে থেকেই তৈরি হচ্ছিল প্যারেড স্কয়ার। পুরনো বিমানবন্দর এলাকায় নানা কর্মজ্ঞ চলছিল। সবই এখন শেষের দিকে। এখানে স্থাপিত মঞ্চ থেকে সঙ্গীত নৃত্যের ভাষায় মুজিবর্ষের তাৎপর্য তুলে ধরা হবে। থাকবে বর্ণাঢ্য পরিবেশনা। না, সামনে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ নেই। রেকর্ড করে বিভিন্ন টেলিভিশন এটি সম্প্রচার করবে। উদ্বোধনী দিনের আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানও। ঐতিহাসিক উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর বজ্রকণ্ঠ ঢেউ উঠেছিল জনসমুদ্রে। আরও কত ইতিহাসের সাক্ষী এ উদ্যান! সব মাথায় রেখে জায়গাটিকে মুজিববর্ষের উদ্বোধনী আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও, ঢাকাবাসী দারুণ খুশি বলেই মনে হচ্ছে। শেখ মুজিবের জন্মের শুভক্ষণ রাত ৮টার দিকে এখানে আতশবাজির আয়োজন করা হবে। আলোকোজ্জ্বল আকাশের ছবি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের কথাও ভাবা হচ্ছে। এর ফলে আনন্দটা বড় আকারে প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর করোনার হুমকি কমে এলে, শুরু হবে বছরব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। উৎসব আনুষ্ঠানিকতার পাশাপাশি, এ সময় বাঙালী শেখ মুজিবুর রহমানকে আরও বেশি অনুভব করবে। তাঁর নীতি ও আদর্শে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে। প্রকৃত অর্থেই নিজেকে বদলাবে, দেশের প্রয়োজনে কাজ করবে, যদি করে তবেই স্বার্থক হবে মুজিববর্ষ। করোনাভাইরাসও খুব প্রাসঙ্গিক আলোচনা এখন। দেশে ৩ জন এ ভাইরাসে আক্রান্তÑ এমন খবর প্রচারিত হলে অনেকের মধ্যেই এক ধরনের শঙ্কা দেখা গিয়েছিল। মাস্ক স্যানিটাইজার এমনকি স্যাভলন কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল ওইদিনই। কেউ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হিসেবে এসব সংগ্রহ করেছেন। কেউ ছুটেছেন হুজুগে। তবে আশার কথা যে, পরবর্তী দিনগুলোতে রোগটি আর ছড়ায়নি। নতুন করে কারও আক্রন্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। আক্রান্তদের অবস্থা ভালর দিকে বলেও জানানো হয়েছে। এ কারণেই হয়ত অহেতুক হুড়োহুড়ি কিছুটা কমেছে। এমনকি বর্তমানে করোনা নিয়ে মশকরা করতেও ছাড়ছেন না কেউ কেউ। এত দূষণের দেশে করোনা সুবিধে করতে পারবে না। জন্ম নিয়েছি, একদিন তো মরবোই। ভয়ের কী আছে? ইত্যাদি বচন কানে আসছে নিয়মিতই। তবে সুযোগ সন্ধানী স্বার্থপর শ্রেণীটি বসে নেই। পণ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও দোকানিরা মজুদ করে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির একটি চেষ্টা করেছেন। বর্তমানে করোনার বিরুদ্ধে সারাবিশ্বে সম্মিলিত লড়াই চলছে। মহামারী থেকে পরস্পরের সহায়তায় বাঁচতে চাইছেন সবাই। এএফপির একটি খবরে জানা যাচ্ছে, লড়াইয়ে অংশ নিয়ে ইংল্যান্ডের লিভারপুলের এক প্রসাধনী দোকানের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে বিশেষ ঘোষণা। দোকানের সামনে লিখে রাখা হয়েছে, ‘ভেতরে আসুন এবং বিনামূল্যে হাত ধুয়ে নিন।’ এ ধরনের মহৎ চিন্তা আমাদের এখানে অনেকেই করতে পারছেন না। কেন পারছেন না? আর কবে পারবেন?
×