ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী

বঙ্গবন্ধু ও ‘আমার দেখা নয়া চীন’

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১৩ মার্চ ২০২০

বঙ্গবন্ধু ও ‘আমার দেখা নয়া চীন’

আজ থেকে চারদিন পর জাতির জনকের জন্মশতবার্ষিকী। তবে করোনাভাইরাসের কারণে সরকার ছোট পরিসরে ১৭ মার্চের মূল অনুষ্ঠানটি করে বছরব্যাপী শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদনের ব্যবস্থা নিয়েছে। এটি সরকারের দায়িত্বশীলতার পরিচায়ক। তবে বাংলার জনগণ হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর রচনায় ‘আমার দেখা নয়া চীন’ শীর্ষক বইটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলা একাডেমি প্রকাশ করেছে। বইটিতে সাম্রাজ্যবাদী শক্তির পাশাপাশি মেহনতী মানুষের সম্যক জীবনযাত্রা, দৈনন্দিন জীবন সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন আমাদের শ্রদ্ধেয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করেছেন বঙ্গমাতার কথা। লিখেছেন : ‘আমার মা দেখে যেতে পারলেন না তারই সযতেœ রাখা অমূল্য সম্পদ জনতার কাছে পৌঁছে গেছে। মায়ের কথাই সবসময়ে আমার মনে পড়ে। মাকে যদি একবার বলতে পারতাম, দেখাতে পারতাম আগের লেখাগুলো পুস্তক আকারে প্রকাশিত হয়েছে তাহলে কত খুশি হতেন। মা, তোমার কথাই বার বার মনে পড়ে মা।’ তার এ আকুতি আমাদের হৃদয়ে বাজে। কি অসহনীয় অবস্থা যারা দেশকে অন্ধকারে ঠেলে দিল। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সহধর্মিণীসহ, আত্মীয়স্বজন, পরিবার-পরিজনকে হত্যা করল। তারা পরবর্তী একুশে বছর দেশটি ও সমাজকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করল। এমনকি ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকেও মোটামুটি বন্ধ করতে ‘সচেষ্ট’ হলো। পৃঃ ১৯-এ বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘১৯৫২ সালে জেল হতে বের হলাম, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের পর। জেলে থাকতে ভাবতাম আর মাঝে মাঝে মওলানা ভাসানী সাহেবও বলতেন, ‘যদি সুযোগ পাও একবার চীন দেশে যেও (পৃঃ ১৯)।’ সে সময়ে চীনে জানুয়ারি ২৬, ১৯৫২ খ্রিঃ পাঁচটি স্তরে কর্মকা- শুরু হয়েছিল দুর্নীতি এবং রাষ্ট্রের যারা শত্রু তাদের বিরুদ্ধে। বুর্জোয়াদের বিপক্ষে সকল ধরনের দুর্নীতি প্রতিরোধে তখন চীন অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে ব্যবস্থা নিতে চেষ্টা করছিল। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পিকিংয়ে অনুষ্ঠিত শান্তি সম্মেলনে যোগদানের আমন্ত্রণ এলে পূর্ব বাংলা থেকেও মানুষজন গিয়েছিলেন। ওই শান্তি সম্মেলনে ৩৭টি দেশ এতে যোগদান করে। বঙ্গবন্ধু সে সময়ে শান্তি সম্মেলনে যোগদান করেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভ্রমণ বৃত্তান্তে যেভাবে পাসপোর্টের জন্য হয়রানির শিকার হয়েছিলেন তা পৃঃ ২০-২১-এ বিধৃত করেছেন। দাওয়াত পেলেও চীনে যাওয়ার প্রস্তুতিতে টাকার সঙ্কট নিয়ে তাদের যে কষ্ট হয়েছে সে সম্পর্কে বিধৃত করেছেন। অথচ আজকাল কেউ কেউ যেন পাহাড়সম অর্থ সম্পদের মালিক যা দৃষ্টিকটু। এটি আসলে জিয়াউর রহমানের বলা ‘মানি ইজ নো প্রবলেম’ কথাটির মাধ্যমে সমাজে তৈরি বিবর্তনের ফসল। যাওয়ার পথে তাদের যাত্রাবিরতি ছিল রেঙ্গুনে। তখনকার ব্রহ্মদেশের পরিস্থিতি তার জবানীতে আমরা জানতে পারি। এখনও যে ব্রহ্মদেশ তথা মিয়ানমারের অবস্থার উন্নতি হয়েছে তা কিন্তু নয়। বরং তারা অন্য দেশ কর্তৃক শোষিত হচ্ছে। তাদের দেশের নাগরিক রোহিঙ্গাদের এদেশে পাঠিয়ে দিয়েছে। সে দেশে তৎকালীন পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতের বিলাসী জীবনযাপনের বর্ণনাও এতে বিধৃত হয়েছে। এখনকার বাংলাদেশী রাষ্ট্রদূতরা অনেকখানি বিলাসী জীবনযাপন করে থাকে। দেশের জন্য বিদেশ থেকে বাণিজ্যিক অর্ডার প্রেরণ করে না। বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত চমৎকার একটি কথা লিখেছেন : ‘...জনগণের সমর্থন ছাড়া বিপ্লব হয় না।’ (পৃঃ ২৪) রেঙ্গুন ছেড়ে ব্যাঙ্কক হয়ে তারা হংকং গেলেন। তিনি একটি স্থানে লিখেছেন, ‘কমিউনিস্ট দেশে যাচ্ছি, কিন্তু আমাদের দলের অধিকাংশই আমরা কমিউনিস্ট ভাবাপন্ন নয়।’ (পৃঃ ২৫) ব্যক্তি মুজিব ততটুকু সমাজতন্ত্র বিশ্বাস করতেন যেটুকুতে প্রতিটি মানুষ খেয়ে পরে বাঁচতে পারে। আমৃত্যু তিনি এক নীতিতে অটল ছিলেনÑ এমনকি দ্বিতীয় বিপ্লব গঠনের মূল উদ্দেশ্য ছিল দেশের প্রত্যেকটি মানুষের ঘরে ঘরে খাদ্যাভাব দূর করা। তাঁর কন্যা তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তিনি হংকং শহর পরিদর্শনের একটি মনোগ্রাহী বর্ণনা দিলেন। বঙ্গবন্ধুর একটি কথোপকথনের উদ্ধৃতি দিতে লোভ সংবরণ করতে পারছি না : ‘আইন করে কারও কণ্ঠরোধ করার উদ্দেশ্য আমাদের দলের নেই। আমাদের দেশের সম্পদ এবং ন্যায়ভিত্তিক আদর্শ দিয়ে দেশ গড়তে চাই (পৃঃ ২৬)।’ বঙ্গবন্ধু চমৎকার করে মানিক সাহেব সম্পর্কে লিখেছেন। তার জবানীতে ছিল : ‘মানিক ভাইয়ের স্মরণশক্তি অস্বাভাবিক, নোট করতে হয় না।’ (পৃঃ ৩০)। বঙ্গবন্ধুর কত আশা ছিল এদেশ ও জাতিকে নিয়ে। কি দুর্নিবার কষ্ট তিনি সহ্য করে দেশকে স্বাধীনতা পাইয়ে দিয়েছিলেন। দেশ গঠনের সময়ে কালোবাজারী, মুনাফাখোরদের অভাব ছিল না। আর চুরি-চামারি যেন নিয়তির বিধান হয়ে গিয়েছিল। ভাল মানুষেরা তখন চোর-মুনাফাখোর-কালোবাজারী ও ষড়যন্ত্রকারীদের চাপে পিষ্ট ছিল। তাই তো ১৯৭৫ সালে তার বিভিন্ন বক্তৃতায় দেখা যায় চোর-বাটপার, সর্বহারার নামে ডাকাত শ্রেণী, মুনাফাখোর ও কালোবাজারীদের দৌরাত্ম্য। অথচ সেই ১৯৫২ সালের কথোপকথনে তিনি খুশি হয়ে লিখেছেন : ‘তবে যারা সত্যবাদী, ঘুষ খায় না, দেশকে ভালবাসে ও কর্মঠ তারা আছে (পৃঃ ৩১)।’ সেখানে গিয়ে তিনি তার জন্মভূমির কথা ভুলতে পারেননি। তাই তো লিখেছেন, ‘মনে হলো এ তো আমার পূর্ব বাংলার মতো সব কিছু। সবুজ ধানের ক্ষেত, চারদিকে বড় বড় গাছ। মাঝে মাঝে মাটি ঘরের গ্রাম, ছোট ছোট নদী, ট্রেনটা পার হয়ে যাচ্ছে।’ (পৃঃ ৩২)। বঙ্গবন্ধু মুসলিম লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্রের শাসনকার্য নিয়ে লিখেছেন : ‘...মুসলিম লীগের গণতন্ত্রের যে রূপ তা কোন সভ্য সমাজে না বললেই ভাল হয়।’ বাংলাদেশে এখন উন্নয়ন ও গণতন্ত্র একে অন্যের পরিপূরক। দেশের অগ্রযাত্রায় ভূমিকা রাখছে। বঙ্গবন্ধু বক্তৃতায় বলেছেন, ‘যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই। সাম্রাজ্যবাদীরা যুদ্ধ করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছে (পৃঃ ৩৯)।’ ইরানে শোষণের চিত্র তার লেখায় ফুটে উঠেছে-‘সমস্ত ইরানের সম্পত্তির মালিক এক হাজার ফ্যামিলি। আর সকলে দিনমজুর। দেশের অবস্থা ভয়াবহ। সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের দেশকে শোষণ করে শেষ করে দিয়েছে। (পৃঃ ৪১)।’ আসলে ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় বৈষম্য বাড়লে জনগণ সব সময়ে ধনবাদীদের দ্বারা নিগৃহীত হয়। এ সরল সত্যটি বাংলার বন্ধু মুজিব কখনো ভোলেন নাইÑ ফলে দেশ ও জাতির উন্নয়নে তিনি সব সময়ে শোষিতের পক্ষে, বঞ্চিতদের পক্ষে ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষার দরদ থেকেই বাংলায় বক্তৃতা করেছিলেন। ৪৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, অস্ট্রেলিয়ার এক প্রতিনিধির মন্তব্য, ‘রাষ্ট্রদূত ও কর্মচারীরা যেভাবে থাকেন, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীও সেভাবে থাকতে পারেন না।’ কি সুন্দরভাবে এ কথাটি বর্তমান বাস্তবতায় মিলে যায়। আবার সে সময়ে চীনের পাকিস্তানী রাষ্ট্রদূতের ব্যবহারে খুশি হয়ে লিখেছিলেন, ‘রাষ্ট্রদূত এই রকম লোক হলেই দেশের ইজ্জত বিদেশে বাড়ে।’ সে সময়েও তিনি দেশের, সমাজের কিসে হিত সাধন হবে- সেটি ভেবে দেখতে ভোলেননি। কেননা মানুষই ছিল তার কাছে সব থেকে বড়। আসলে রাষ্ট্রদূতরা যত বেশি অর্থনৈতিক পটভূমিকায় কাজ করবে, তত দেশ ও জাতির মঙ্গল সাধিত হবে। এখন কূটনীতি হচ্ছে অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। ১ অক্টোবর নয়া চীনের ‘স্বাধীনতা দিবস’ পালনের কথা বিধৃত হয়েছে। তিনি বর্ণনা করেছেন, ‘যখন মাও সেতুংয়ের কাছে শোভাযাত্রা উপস্থিত হয় তখন মনে হয় যেন আকাশ ফেটে যাচ্ছে, শুধু মুহুর্মুহু জিন্দাবাদ (পৃঃ ৫৫)। বঙ্গবন্ধুর মতো একজন মহীয়সী নেতা পর্যন্ত জনগণের ভালবাসায় মাও সেতুংয়ের সিক্ত হওয়ার কথায় উদ্বেলিত হয়েছেন। যারা দীর্ঘকাল ধরে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত, তারা নেতৃত্ব করলে মানুষ তাদের পেছনে থাকে। বঙ্গবন্ধু সকল সময়ে জনগণের ভালবাসা পেয়েছেন বলে নেতৃত্বের গুণে জনগণ মন্ত্রমুগ্ধের মতো ভালবেসেছে। এদেশে এখন শেখ হাসিনার অবস্থান সুউচ্চে। তার নেতৃত্বগুণে দেশের আপামর জনসাধারণের আস্থা আছে। আবার এমনও নেতা আছেন যারা হঠাৎ করে বেনিয়া থেকে নেতৃত্ব পেয়েছেন কিংবা জনগণের ভালবাসাকে জিম্মি করে বিভিন্ন উল্টাপাল্টা করে থাকে- তাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা দরকার। এ জন্যই দেখা যায়, কেউ কেউ অগ্রপশ্চাৎ না ভেবেই হরতাল ডাক দিয়ে ঘরে বসে থাকে। চীনের পুনর্গঠন উপলক্ষ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর মন্তব্যটি বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য সকলেই মনে করে ‘রাষ্ট্র আমাদের, একে গড়ে তুলতে হবে (পৃ ঃ ৬৪)।’ অথচ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই যখন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশের পুনর্গঠনে কাজ করছিলেন, কেউ কেউ তখন নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত ছিল। পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের হাতে রাষ্ট্রযন্ত্রের ক্ষমতা ছিল আর এখন পনেরো লাখ কোটিপতির বেশি হবে। আর যারা সারাদিন সৎভাবে পরিশ্রম করে, তাদের অনেকেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তার পরও সমাজে যদি জোর জবরদস্তকারীরা না থাকে জনমানুষ খুশি হবে। চীনের কৃষি ফার্ম পরিদর্শন করে তিনি তার ইচ্ছে ব্যক্ত করেছেন : ‘কারণ আমি দেখতে চাই কৃষির উন্নতি, শিল্পের উন্নতি, শিক্ষার উন্নতি, সাধারণ মানুষের উন্নতি (পৃঃ ৬৬)।’ সুন্দরভাবে তিনি সাংহাইয়ের মানুষ-জীবন-জীবিকা সম্পর্কে বিধৃত করেছেন। বঙ্গবন্ধু লিখেছেন, ‘দীর্ঘ পঁচিশ দিন পর্যন্ত নয়াচীনের কত নগর, কত গ্রাম আমি দেখেছি তা আপনারা সহজেই অনুমান করতে পারেন (পৃঃ ৮৪)।’ বঙ্গবন্ধু মন্তব্য করেছেন, ‘যে দেশে সরকারের কর্মচারীরা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয় ও সে রকম সাক্ষ্য দিতে লোকদের বাধ্য করে তাদের ওপর মানুষের আস্থা থাকবে কি করে। (পৃঃ ৯২)’ ওনার এ উক্তি যুগে যুগে প্রণিধানযোগ্য। যখন জনগণের আস্থার সঙ্কট তৈরি হয় তখন সাধারণ। আমজনতা দিশাহারা হয়ে পড়ে। ইদানীং এমনও উঠতি বয়সের যুবক-যুবতী তৈরি হচ্ছে, তারা অন্যের জায়গা-জমি দখল করে মাঝরাত পর্যন্ত যখন আনন্দ ফুর্তি করে। স্থানীয় কমিশনাররা নির্লিপ্ত থাকে। এমনকি নিজের জায়গায় গাছ লাগালে তুলে ফেলে দেয় এবং শ্রমজীবী মানুষ যে গাছ লাগাতে সাহায্য করেছে-তাকে ধরে মারধর করে। এ ধরনের অরাজক পরিস্থিতি যারা করে, তাদের আইনের আওতায় নেয়া উচিত। এরাই গোদের ওপর বিষফোঁড়া হয়। অকুতোভয় মুজিব সাহেবের অভিজ্ঞতা সিনেটের প্রেক্ষাপটে বিধৃত হয়েছে পৃঃ ১১১তে। উনি যথার্থই বলেছেন, ‘এর অর্থ, তারা এটাকে ব্যবসা হিসেবে গ্রহণ করেছে।’ আসলে এ ধরনের অসৎরা কখনও ধর্ম ব্যবসায়ী হয়, স্থানীয় পর্যায়ের ছোটখাটো মস্তান হয়- এদের পুনর্বাসিত করে ভাল কাজে লাগনোর দায়িত্ব স্থানীয় প্রশাসন এবং বিত্তশালীদের। ‘জীবাণুযুদ্ধে চীনের বহু লোকের ক্ষতি হয়েছিল (পৃঃ ১১৭)।’ এখন আবার চীন থেকে শুরু হয়ে করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এবং এদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে! ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী চার হাজারের মতো মানুষ মারা গেছে। বাংলাদেশের যে আর্থিক ক্ষতি হবে তা মোকাবেলার জন্য জরুরী ভিত্তিতে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা দরকার। পাশাপাশি প্রতিটি জেলায় যাতে সাধারণ আমজনতা চিকিৎসা পায় সে জন্য জেলা-উপজেলার সরকারী হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসক ও নার্সদের পর্যাপ্ত জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ দেয়া দরকার। ১৯৫৭ সালের ২৪ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত জাতির পিতা আবার চীনে সরকারী সফর করেন। বইটির আলোকচিত্রে ১৯৫৭ খ্রিঃ চীন সফরের চিত্রসমূহ রয়েছে। এতে ১৬টি চিত্রে অনেক না বলা কথা বিধৃত হয়েছে। চীনে ভ্রমণ তাকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে নিপীড়িত, নির্যাতিত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য অনুপ্রেরণা দিয়েছে। তিনি অন্বেষণ করেছেন একজন গণতান্ত্রিক নেতা হয়েও মানুষের মধ্যে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও আয়-বৈষম্য হ্রাস করা। দ্বিতীয়বার ভ্রমণের সময়ে বাঙালীর প্রিয় নেতা মাও সেতুং এবং চৌ এন লাইয়ের সঙ্গে দেখা করেন। দ্বিতীয়বার যখন তিনি চীন ভ্রমণ করেন তখন শিল্প, বাণিজ্য, শ্রম, দুর্নীতি দমন এবং ভিলেজ এইড দফতরের মন্ত্রী ছিলেন। দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও তিনি মাও সেতুং এবং প্রতিনিধি দলের সদস্যবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন। ম্যাডাম সান ইয়াৎ সেনের সঙ্গেও দেখা হয়। আবার তিনি চীনের কারখানাও পরিদর্শন করেন। আসলে উন্নয়নের গতিময়তা তাকে তার দেশের মানুষকে সম্পৃক্ত করতে উৎসাহ যুগিয়েছে। তিনি কখনও কোন উন্নয়ন কর্মকা-ে আচ্ছন্ন না হয়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করতে চেয়েছেন যাতে বাঙালী তার আত্মমর্যাদা ফিরে পায়। ভিক্ষাবৃত্তি না করে, ঘর সম্পদ লুণ্ঠন না করে। প্রত্যেক মানুষের অধিকার আছে, তার নিজের জায়গাতে কিছু করার। বইটি পড়তে পড়তে বার বার মনে হচ্ছিল, ইদানীং বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমি যত বেশি গবেষণায় জড়াচ্ছি, তত তার জ্ঞানের সুগভীরতার প্রমাণ পাচ্ছি। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বক্তৃতায় তিনি ভারত সম্পর্কে যে কথামালা বিধৃত করেছেন, সেগুলো নিয়ে আরেকটি বই রচিত হতে পারে। তার বই পড়ে মন্ত্রমুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি চিন্তাশক্তির উন্মেষ ঘটে। বইতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিশিষ্ট সাংবাদিক প্রয়াত বেবী মওদুদের কথা বলেছেন। বঙ্গবন্ধুর বইটি পড়ে মনে হয় আত্মমর্যাদাসম্পন্ন বাঙালী জাতি তৈরি এবং টেকসই উন্নয়ন ছিল তার ধ্যান-জ্ঞান। কিন্তু দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে অথচ মুষ্টিমেয় লোক সরকারপ্রধানের সদিচ্ছাকে বাধাগ্রস্ত করতে সচেষ্ট রয়েছে। আশা করব জাতি হিসেবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং আগামী বছর স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে যেন পরসম্পদ লুণ্ঠনকারী ও দুর্নীতিবাজরা এবং সম্পদ আত্মসাতকারীরা উপযুক্ত শাস্তি পায়। সরকারের সদিচ্ছাকে যারা ‘ঘরের শত্রু বিভীষণের’ মতো ধূলিসাত করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া দরকার। বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পথে জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রদর্শিত পথে তরুণদের যে উদ্যোক্তা হতে বলেছেন, সেটা বাস্তবায়নে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে এগিয়ে আসতে হবে। লেখক : ম্যাক্রোঁ ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট এবং প্রফেসর [email protected]
×