ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

গভীর সমুদ্রবন্দর

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ১৩ মার্চ ২০২০

গভীর সমুদ্রবন্দর

দেশে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের কথা শোনা যাচ্ছিল দীর্ঘদিন থেকেই। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির কারণে চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর দিয়ে আর চলছিল না। দেশের নদ-নদীগুলো বিপুল পলি বিধৌত বিধায় বন্দরের চ্যানেলে ক্রমাগত পলি জমে এগুলোকে প্রায়ই অচল ও অনুপযোগী করে তোলে। পশুর নদীর মোহনায় মংলা প্রায় অচল হয়েছে অনেক আগেই। চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থা ভাল নয়। তাছাড়া এ দুটোই মূলত নদীবন্দর। এ বন্দরগুলোতে বিশালাকৃতির জাহাজ ও নৌযান ভিড়তে পারে না। মালামাল প্রধানত খালাস করতে হয় লাইটারেজ জাহাজ ও নৌযান দিয়ে। ফলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়েছে মহেলখালী উপজেলার মাতারবাড়ী ও ধনঘাট এলাকার গভীর সমুদ্রে। গঠন করা হয়েছে মাতারবাড়ি পোর্ট ডেভেলপমেন্ট। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি ২৬ লাখ টাকা। গভীর সমুদ্রবন্দরে বড় ও বিশালাকৃতির জাহাজ ভিড়তে পারলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণসহ আর্থিক সক্ষমতা অনেক বাড়বে তাতে দ্বিমতের অবকাশ নেই। প্রকল্পটি যাতে যথাসময়ে বাস্তবায়ন হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকে। ইতোমধ্যে অবশ্য পায়রা সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম দৃশ্যমান হচ্ছে ক্রমশ। দেশ-বিদেশের পণ্যবাহী জাহাজ ভিড়ছে, ছেড়ে যাচ্ছে, রাজস্ব আদায় হচ্ছে নিয়মিত। এমনকি যেসব জাহাজ এখান দিয়ে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা অতিক্রম করে তারাও টোল দিয়ে যাচ্ছে। কর্মসংস্থান হয়েছে বহু লোকের। আগামীতে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রসহ বন্দরটি আরও সচল ও বহু ব্যবহার্য হলে আরও বাড়বে কর্মচাঞ্চল্য। চাপ কমবে চালনা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে। মাত্র কয়েক বছর আগে ২০১৩ সালের নবেম্বরে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় টিয়াখালীতে এর সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। বর্তমান সরকার সর্বাধিক মনোযোগ দেয় বিদ্যুত উৎপাদন, বন্দর স্থাপন ও যোগাযোগের উন্নয়নে, যা যে কোন দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। দেশ বিদ্যুত উৎপাদনে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। চট্টগ্রাম ও চালনার পর পায়রায় হয়েছে তৃতীয় সমুদ্রবন্দর। সর্বোপরি মাতারবাড়িতে হচ্ছে গভীর সমুদ্রবন্দর। আর পদ্মা সেতুর কাজ তো ইতোমধ্যে ৭১ শতাংশ দৃশ্যমান হয়েছে। মধ্যম আয়ের দেশে অগ্রসর হতে হলে এসব লাগবে বৈকি। চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে শুধু দেশেই নয়, প্রশ্ন রয়েছে আন্তর্জাতিক নৌ-বাণিজ্যের অঙ্গনেও। এই বন্দরে জাহাজ ভিড়তে এবং পণ্য খালাস করতে অত্যধিক সময় লাগে। কাস্টমসের ঝামেলাও অনেক এবং শ্লথগতিসম্পন্ন। ফলে বিশ্বের যে কোন বন্দরের চেয়ে এখানে পণ্য আমদানি-রফতানিতে ব্যয় অনেক বেশি হয়। ফলে জাহাজ ভাড়াও বেড়ে যায়। পণ্যের দামও বেড়ে যায় বহুগুণ। সর্বোপরি নাব্য সঙ্কটে বর্তমানে আরও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে বন্দরের প্রবেশমুখ। প্রবল জোয়ার ব্যতিরেকে বন্দরের সব জেটিতে জাহাজ ভিড়তেও পারে না। অতঃপর লাইটারেজ জাহাজযোগে পণ্য খালাস করতে হয় আমদানিকারকদের। ফলে জরুরীভিত্তিতে চালনা ও পায়রা বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোসহ আরও একাধিক বিকল্প বন্দর তথা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ বর্তমানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির মহাসড়কে অবস্থান করছে, যা দেশে-বিদেশে প্রশংসিত। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ জাতীয় প্রবৃদ্ধি ডাবল ডিজিটে রূপান্তর হতে পারে। সে অবস্থায় গভীর সমুদ্রবন্দরের প্রয়োজন ও গুরুত্ব আরও অর্থবহ হয়ে উঠেছে। এর পাশাপাশি চট্টগ্রাম, চালনা ও পায়রা বন্দরের আধুনিকীকরণসহ সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। বৈশ্বিক ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত জাইকার স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এগিয়ে আসার বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া বাঞ্ছনীয়। কেননা, জাপান বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু ও সুহৃদ এবং সর্বোচ্চ দাতা দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
×