ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল

রোগীর খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক অনিয়ম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১২ মার্চ ২০২০

রোগীর খাদ্য সরবরাহে ব্যাপক অনিয়ম

নিজস্ব সংবাদদাতা, জামালপুর, ১১ মার্চ ॥ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের খাদ্যপণ্য কেনা হচ্ছে দ্বিগুণ মূল্যে। উচ্চমূল্যে খাদ্যপণ্য কেনা হলেও রোগীদের খাদ্য তালিকা থেকে খাসির মাংস ও মাছ বাদ দিয়ে প্রতিদিন দেয়া হয় ফার্মের মুরগি। উচ্চমূল্য ও রোগীদের খাবার নিয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হলেও কর্তৃপক্ষ বলছে, দরপত্র প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্যপণ্য কেনা হচ্ছে। আর প্রতিদিন ফার্মের মুরগি দেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছেন কর্তৃপক্ষ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন বাজারে ফার্মের মুরগির কেজি ১১০ টাকা, শরবি কলার হালি ২০ টাকা, সাগর কলার হালি ১০ থেকে ১২ টাকা, ডিমের হালি ৩০ টাকা ও বিআর-২৮ জাতের সিদ্ধ চাল প্রতি কেজি ৩৫ টাকা হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফারহান এন্টারপ্রাইজ ফার্মের মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, ডিম ৫৬ টাকা হালি, কলা ৪৫ টাকা ও সিদ্ধ চাল ৬০ টাকা কেজি দরে সরবরাহ করছে। যা বর্তমান বাজার মূল্যের চেয়ে দ্বিগুণ। রোগীদের খাবার তালিকায় দুপুর ও রাতে সপ্তাহে দুদিন খাসির মাংস, দুদিন মাছ, তিনদিন ফার্মের মুরগি থাকলেও প্রতিদিনই দেয়া হয় ফার্মের মুরগি। সকালের নাস্তায় রয়েছে ডিম, কলা পাউরুটি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যোগসাজশে ঠিকাদার মাছ ও খাসির মাংস না দিয়ে উচ্চমূল্যে সরবরাহকৃত ফার্মের মুরগি, কলা, ডিম প্রতিদিন সরবরাহ করে আসছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগীদের অভিযোগ, প্রতিদিন ফার্মের মুরগি ও মাঝেমধ্যে রাতে ডিম দেয়া হয়। ফার্মের মুরগি খেতে না পারায় বাইরের খাবার খেয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন রোগীরা। আবার অনেকেই নিরুপায় হয়ে খেতে বাধ্য হচ্ছেন। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে চিকিৎসা নেয়া রোগী মোতাহার জানান, তিনি ১৯ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। এই ১৯ দিনের ভেতর কেবল দু’দিন তাদের খাসির মাংস দেয়া হয়েছে। বাকি ১৭ দিন ধরে তাকে দেয়া হয় ফার্মের মুরগির তরকারি। গাইনি ওয়ার্ডের চিকিৎসা নেয়া রোগী পারুল বেগম জানান, তিনি পাঁচদিন ধরে ভর্তি ছিলেন। তিনি ফার্মের মুরগি না খাওয়ায় প্রতিদিন বাইরে থেকে খাবার কিনে খেয়েছেন। অর্থোসার্জারি ওয়ার্ডের হতদরিদ্র রোগী আলিমউদ্দিন জানান, হাসপাতালের খাবার খুবই নিম্নমানের। তবুও কোন উপায় না থাকায় তিনদিন ধরে ফার্মের মুরগি খেয়েছেন। এদিকে মাছ মাংস না দিয়ে প্রতিদিন ফার্মের মুরগি দেয়ার বিষয়ে খাবার দায়িত্বে থাকা হাসপাতালের স্টুয়ার্ড লিটন চন্দ্র সূত্রধর বলেন, রোগীদের অভিযোগ ঠিক নয়। তালিকা অনুযায়ী খাবার দেয়া হয়। তবে ফার্মের মুরগি একটু বেশি দেয়া হয়। একজন রোগীর জন্য প্রতিদিন ১৬৯ গ্রাম ফার্মের মুরগির বরাদ্দ হওয়ায় ২৫০ জন রোগীর জন্য দিনে ৪২.১৮২ কেজি এবং বছরে ১৫ হাজার ৩৯৭ কেজি ফার্মের মুরগির প্রয়োজন হয়। হাসপাতালের খাদ্য সরবরাহ দরপত্র কমিটির নির্ধারিত ক্রয়মূল্য অনুযায়ী এর মূল্য দাঁড়ায় ৪৬ লাখ ১৮ হাজার ৯৮৩ টাকা। তবে ১১০ টাকা কেজি হিসেবে জেলার বাজারে এর স্বাভাবিক মূল্য দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬২৭ টাকা। এতে বাজার মূল্যের সঙ্গে দরপত্র কমিটির ক্রয়কৃত মুরগির মূল্যের ব্যবধার দাঁড়ায় ২৯ লাখ ২৫ হাজার ৩৫৬ টাকা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মচারী জানিয়েছেন, প্রতিদিন ৩০-৩৫ কেজি ফার্মের মুরগি কেনা হয় এবং রোগীদের খাবারের জন্য দেয়া হয়। জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, প্রতিদিন সেখানে নিম্নমানের ফার্মের মুরগি দেয়া হচ্ছে। যেখানে ১০০ টাকা কেজি, সেখানে ধরা হচ্ছে ৩০০-৩৫০ টাকা কেজি। যার জন্য বছরে প্রায় ২৯ লাখ ২৫ হাজার টাকা লুটে নিচ্ছে দরপত্র কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদার। অনতিবিলম্বে এই খাদ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে যারা আছে তাদের মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করে যাতে নিম্নমানের খাদ্য পরিহার করা হয়। প্রতিদিন প্রতি সপ্তাহে যে রুটিন আছে। সেই রুটিন অনুযায়ী যাতে খাদ্য দেয়া হয়। আর যদি না দেয়া হয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এই অভিযোগগুলো উত্থাপন করব। এ বিষয়ে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডাঃ ফেরদৌস হাসান জানান, দরপত্র প্রক্রিয়া অনুযায়ী ঠিকাদার খাদ্য সরবরাহ করে থাকে। জামালপুর জেনারেল হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ও দরপত্র কমিটির সভাপতি ডাঃ হাবিবুর রহমান ফকির এমন উচ্চ মূল্যে খাদ্যপণ্যের দাম নির্ধারণের বিষয়ে কোন কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রোগীদের খাদ্যপণ্য ও পথ্যবাবদ এক কোটি পাঁচ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হয়ে থাকে বলে তিনি জানিয়েছেন।
×