ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ হবে কি

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১২ মার্চ ২০২০

নাগরিক প্রত্যাশা পূরণ হবে কি

নগরবাসীর প্রত্যক্ষ ভোটে সদ্য নির্বাচিত ঢাকার দুই মেয়র ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস এবং মোঃ আতিকুল ইসলাম। দু’জনই ব্যক্তি ও কর্মজীবনে স্ব-স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। একজন পেশায় প্রখ্যাত আইনজীবী আর একজন ব্যবসায়ী। নির্বাচনকালীন দু’জনই প্রথা মাফিক কথার ফুলঝুরি এবং নানা প্রতিশ্রুতিতে নগরবাসীকে সিক্ত করেছেন। নগরের জনগণও তাদের পছন্দের প্রতিনিধি বেছে নিয়েছেন। এখন দেখার বিষয় ঢাকাবাসীকে দেয়া ওয়াদাগুলো পালনে মেয়রগণ কতটা সক্ষম হন। ১৯৮৪ সালে প্রথম ঢাকা পৌরসভার জন্ম। সেই থেকে আজকের সিটি কর্পোরেশন ধাপে ধাপে অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে এত বৃহৎ আকার ধারণ করেছে। দিনের পর দিন এর কলেবর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং জনসংখ্যা বেড়েই চলেছে। গ্রাম থেকে মানুষ ছুটে আসছে এই ইট-পাথরে ঘেরা শহরে। সেই সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন সমস্যা। আর এ সমস্যাগুলো ঋতুচক্রের পরিবর্তনের সঙ্গে একেক সময় একেক রকমভাবে আবির্ভূত হচ্ছে। যেমন, বর্ষা মৌসুমে দেখা যায় জলাবদ্ধতার কাদা-ময়লা। শুষ্ক মৌমুমে ধুলাবালি, বায়ুদূষণ ইত্যাদি। পরিবেশ দূষণ, শব্দ দূষণ, যানযট ও ময়লা-আবর্জনা সমস্যা বছরজুড়েই থাকে। বর্ষা মৌসুমে বেশি দেখা যায় সাধারণত মশা ও ডেঙ্গুর প্রকোপ। এ রকম আরও অনেক সমস্যা রয়েছে, যা নগরবাসীর যাপিত জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলছে। যেখানে মানুষ আছে, সমাজ আছে, মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা আছে সেখানেই সমস্যা আছে এবং তার সমাধানও আছে। তবে একটি বিষয় একটুখানি পরিষ্কার হওয়া দরকার যে, কিছু সমস্যা আছে মানুষের জীবন ধারণের জন্য যা অত্যাবশ্যকীয় তার সমাধান না হলে শুধু ঢাকা কেন পৃথিবীর কোথাও মানুষ বসবাস করতে পারবে না। যেমন, গ্যাস, বিদ্যুত, পানি, বিশুদ্ধ বায়ু। এসব সমস্যা সরকার বা তার জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেয়রগণ নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্যের জায়গা থেকেই সমাধানের উদ্যোগ নেবেন। সেটা ঢাকাবাসী জনপ্রতিনিধি বা কোন অথরিটির কাছে প্রত্যাশা করুক আর না-ই করুক। নইলে জনগণের মনে দুঃখ-বেদনা ও কষ্টের উদ্রেক হয় এবং গোটা সমাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। কিন্তু জনগণের প্রত্যাশার জায়গাটি একটু ভিন্ন চোখেও মানুষ প্রত্যাশা করতে পারে। যেমন, সবুজ সুন্দর মনোরম নগরী, শিশু-কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত খেলার মাঠ, সকলের জন্য বিনোদন পার্ক, পায়ে চলার সুন্দর রাস্তা, প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় একটি করে পড়ার লাইব্রেরি, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, জবাইখানা, শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে নারীদের জন্য টয়লেটসহ অনেক প্রত্যাশার স্বপ্নই নগরের বাসিন্দাগণ দেখতে চাইতে পারেন। এটাকে নাগরিক স্বপ্ন, চাওয়াপাওয়া বা প্রত্যাশা যেভাবেই বলি না কেন, এগুলো অতীতে মেয়রগণ কতটা পূরণ করেছেন, তা ভুক্তভোগী জনগণ সকলেই জানেন। পরিশেষে একটি কথা বলা প্রয়োজন যে, অতীতে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক নগর উন্নয়ন ও কাজ যতটুকু পূরণ হোক না কেন, এবারের মেয়রদ্বয় অত্যন্ত দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন এবং কাজের প্রতি আন্তরিক বলেই মনে হচ্ছে। ঢাকা উত্তরের মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম পূর্বে কয়েক মাসে কাজের যে পরিচয় দিয়েছেন এবং দক্ষিণের মেয়র ফজলে নূর তাপস নির্বাচনী ইস্তেহারে যে সকল প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন, তাতে সকলের মনেই আশার সঞ্চার করেছে। বিশেষ করে ঢাকার বর্তমান দুই মেয়র প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ¯েœহভাজন এবং প্রিয় ব্যক্তি। অতএব সরকার বা সরকারপ্রধান যদি দেশের প্রতি ঘরে ঘরে শতভাগ বিদ্যুত পৌঁছে দিতে পারেন, মুজিববর্ষে একজন মানুষও যদি ভূমিহীন এবং গৃহহীন না থাকে সে ব্যবস্থা করতে পারেন; তাহলে সেই সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হয়ে মেয়রদ্বয় ঢাকাকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন, এটাই হোক নাগরিক প্রত্যাশা। লেখক : সাবেক কর্মকর্তা, ডিএনসিসি
×