ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মমতাজ লতিফ

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী উপলব্ধি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ১২ মার্চ ২০২০

বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শী উপলব্ধি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র

বাংলাদেশের জন্মের পর মুক্ত বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে এসে তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭২ সালের ১০ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের গণপরিষদে গৃহীত প্রস্তাব অনুযায়ী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জন্য খসড়া সংবিধান প্রণয়ন কমিটি গঠন করেন। এর আগে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু ’৭২ সালের ১০ জানুয়ারি রমনার বিশাল জনসমুদ্রে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ একটি আদর্শ রাষ্ট্র হবে আর তার ভিত্তি বিশেষ কোন ধর্মীয়ভিত্তিক হবে না। রাষ্ট্রের ভিত্তি হবে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ।’ বঙ্গবন্ধুর প্রয়াণের পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর মনে প্রশ্ন জাগে, যদি আমাদের তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি কোন্টি তা চিহ্নিত করতে হয় তাহলে নিঃসন্দেহে কৃতজ্ঞ জাতির উত্তর হবেÑ স্বদেশের স্বাধীনতা। কিন্তু তারপরও পৃথিবীর সব রাষ্ট্রনেতার মধ্যে বঙ্গবন্ধু তাঁর আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রজ্ঞার পরিচয় দিয়ে যখন ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মৌল নীতি হিসেবে সংবিধানে স্থাপন করেন তখন তিনি পৃথক এবং ভিন্ন ও বিশিষ্ট হয়ে ওঠেন। পৃথিবীর উন্নত দেশের দিকে দৃষ্টিপাত করলে আজ আমরা বঙ্গবন্ধুর অসামান্য প্রজ্ঞার পরিচয় লাভ করে গর্ব অনুভব করি। দেখতে পাই, যে ইউরোপ হিটলারের ধর্মভিত্তিক ইহুদীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা ও গণহত্যার তা-ব দেখেছে, গ্যাস চেম্বার, বন্দী শিবির, নির্যাতনের নানা কৌশল দেখে বিশ্ববিবেক স্তম্ভিত হয়েছে, সেই ইউরোপের কোন নেতা-নেত্রী ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্র পরিচালনার নীতি হিসেবে গ্রহণ করতে সক্ষম হয়নি। অথচ বঙ্গবন্ধু জামায়াত, মুসলিম লীগসহ পাকিস্তানী শাসকের ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি, হত্যা, ধর্ষণ, গণহত্যাকে ইসলাম রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে দেখে তাঁর ধার্মিক মনে গভীর এবং তাঁর পক্ষে সম্পূর্ণ নতুন উপলব্ধি, নতুন রাজনীতির সংজ্ঞা আবিষ্কার তাঁর অনন্যসাধারণ ধ্যান-ধারণাকে উপস্থাপন করেন। এই ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ পরিপূরক হিসেবে তিনি ধর্মের নামে রাজনৈতিক দল গঠনকে নিষিদ্ধ করেন। সঙ্গে সঙ্গে জনগণকে আশ্বস্ত করতে ঘোষণা করেন, ব্যক্তির ও সামাজিক জীবনে ধর্ম পালন, ধর্মসংশ্লিষ্ট কাজকর্ম, আচার, অনুষ্ঠান পালন করা হবে। কিন্তু রাষ্ট্র পরিচালিত হবে ধর্মনিরপেক্ষ আধুনিক আইন দ্বারা। ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ধর্মের পবিত্রতা রক্ষা এবং ধর্মের নামে হানাহানি ও ধর্ম ব্যবসা বন্ধের জন্য এই নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। এর ফলে ধর্ম ও রাষ্ট্র দুই-ই নিরাপদে স্ব-স্ব অবস্থানে থাকবে। একে অপরের ওপর প্রভাব বিস্তার করলে ধর্মও তার স্বকীয়তা, পবিত্রতা হারিয়ে মৌলবাদের জন্ম দেয়। আবার ধর্মের প্রভাবে রাষ্ট্রও হয়ে পড়ে যুগের অনুপযোগী ধর্ম রাষ্ট্র, যা জনগণের দৈনন্দিন বাস্তব, সামাজিক জীবনের প্রয়োজন পূরণে ব্যর্থ হয়ে কট্টর, অমানবিক ধর্মরাষ্ট্র হয়ে ওঠে। এই নতুন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র কাঠামো যেন জনকল্যাণকর হয়ে ওঠে, বঙ্গবন্ধুর নিজস্ব প্রজ্ঞা তাঁকে ‘সমাজতন্ত্র’কে রাষ্ট্রের অপর একটি অপরিহার্য মূল নীতি হিসেবে গ্রহণ করার প্রেরণা যোগায়। স্মরণ রাখতে হবে তিনিই সেই জাতীয় নেতা যিনি উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেনÑ বাংলাদেশ দারিদ্র্যমুক্ত হবে, বাংলার মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তি লাভ করবে এবং সবাই, বিশেষ করে কৃষক, শ্রমিক যারা সবার মুখে অন্ন তুলে দেয়, সবার নানা প্রয়োজন পূরণে অকাতরে শ্রম দেয়Ñ তারা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা লাভ করে সবার সমান গুণমানসম্পন জীবনযাপন করবে। আশ্চর্য এই যে, বঙ্গবন্ধু রাশিয়া ও চীনের সমাজতান্ত্রিক বিপ্লব এবং এর সফল নেতা লেনিন, মাও সে তুংয়ের দর্শন জেনে তাঁর স্বদেশ ও জাতি, ধর্মভীরু বাঙালী মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রীস্টান এবং ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর উপজাতিদের কাছে গ্রহণযোগ্য কিন্তু উন্নয়নের জন্য সহায়ক এক নতুন সমাজতান্ত্রিক কাঠামোর রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন। যার অন্যতম প্রধান তিনটি বৈশিষ্ট্য তিনি সৃজনশীলতার সঙ্গে চিহ্নিত করেছিলেনÑ ১) এই লক্ষ্যে সাতাশ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করে তিনি শিক্ষা যে জনগণের অধিকার, যেটি রাষ্ট্র কর্তৃক প্রদেয়Ñ সেই সমাজতান্ত্রিক ও জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্রের ভিত্তি তৈরি করেন। একই সঙ্গে কলকারখানা, ব্যাংক সরকারী করেন। ২) সব রাজনৈতিক দলকে, ব্যক্তি, সংগঠনকে একটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত দল- বাংলাদেশ কৃষক, শ্রমিক লীগ গঠন করে এক ছাতার নিচে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রচেষ্টায় পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দুঃখজনক হলেও সত্য, সদ্য স্বাধীন দেশ, যেখানে ’৭১-এর পরাজিত শক্তি দেশে-বিদেশে নতুন সরকারকে অস্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে ফেলতে নানা অপতৎপরতা, ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে, দেশের মধ্যে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে। সে সময় নতুন সরকারের কাছে সবচেয়ে প্রয়োজন ছিল ’৭১-এর মতো জাতীয় ঐক্য। বঙ্গবন্ধু দল-মত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ‘বাকশাল’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যেটি তথাকথিত এলিট শ্রেণী গ্রহণ করতে পারেনি। ৩) সরকারী সেবা বণ্টন এবং দরিদ্র, বঞ্চিত সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষের কাছে দ্রুততম উপায়ে সরকারী সেবা পৌঁছানোর লক্ষ্যে জেলা গবর্নর ব্যবস্থা চালু করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। এমনকি, তদানীন্তন ষোলোটি জেলার জেলা গবর্নর হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তদের নামের তালিকা সে সময় প্রকাশিত হয়। প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণের এই মহৎ পদক্ষেপটি বাস্তবায়িত হলে সেই সময় প্রশাসকেরা জেলা শহরে অবস্থান করত এবং জেলা শহরগুলোতে ঢাকা, চট্টগ্রামের মতো শহুরে সুযোগ-সুবিধার কাঠামো তৈরি হয়ে জেলাগুলো প্রশাসনের সব কার্যক্রমের কেন্দ্র হয়ে উঠত। পরবর্তীকালের এখনকার জেলাগুলোর মতো মফস্বল শহর না হয়ে আধুনিক শহরে পরিণত হতো। একই কারণে প্রত্যেক জেলা স্কুলগুলো আরও মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠত। গড়ে উঠত জেলাকেন্দ্রিক চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র, কলেজ, হাসপাতাল। অনেক শিক্ষিত, অর্ধশিক্ষিত পেশাজীবীর চাকরিস্থল হয়ে উঠত সে সময়ের ষোলোটি জেলা। সদ্য স্বাধীন দেশে আমরা যারা নতুন সরকারের শূন্য কোষাগারে আমাদের সব গহনা দেয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কি কাজ করলে সরকারের সুবিধা হবেÑ সেসব ভেবে উদ্বিগ্ন ছিলাম, আমার গভীর বিশ্বাস, সেই ’৭৪, ’৭৫-এ প্রশাসকসহ অধিকাংশ মানুষ এই জেলাকেন্দ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে জেলাগুলোকে উন্নত করে গড়ে তোলার এক প্রতিযোগিতায় নেমে যেত। ফলে আজকের মতো ঢাকা-চট্টগ্রামকেন্দ্রিক সরকার হওয়ার ফলে এর বাইরের পুরো দেশটা গ্রাম, আধা-গ্রাম ও মফস্বল হয়ে সুযোগ-সুবিধার অভাবে মলিন হয়ে থাকত না। শিক্ষা গ্রহণেচ্ছুদেরও ঢাকা, চট্টগ্রাম অভিমুখী হতে হতো না। বঙ্গবন্ধুর আরও অনেক বাস্তব বুদ্ধি ও মানবিক বোধের মিলিত পদক্ষেপের মধ্যে আজ জ্বলজ্বল করছে বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসন এবং তাদের সামাজিক মর্যাদাকে অক্ষুণœœ রাখতে ’৭১-এর ‘যুদ্ধশিশু’দের বিদেশে, বিশেষত পশ্চিমা আগ্রহী দেশগুলোর নাগরিকদের কাছে দত্তক দেয়ার সরকারী আইন প্রণয়ন করে সে সময় জন্মগ্রহণ করা ‘যুদ্ধশিশু’দেরও একটি নিরাপদ, নিশ্চিত ও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ। আমার মনে হয় না, পৃথিবীর আর কোন রাষ্ট্রের সরকারপ্রধান যুদ্ধ শেষে যুদ্ধে আক্রান্ত নারী ও যুদ্ধশিশুদের জন্য এমন সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুই একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান যিনি সব বীরাঙ্গনাকে বলেছিলেন, যে কোন ফর্মে পিতার নামের স্থানে তারা যেন প্রয়োজনে তাঁর নাম ব্যবহার করে। তিনি সব বীরাঙ্গনার, সব মুক্তিযোদ্ধার প্রকৃত পিতা হয়ে উঠেছিলেন। হায়! তাঁর দীর্ঘকালীন পিতৃত্ব লাভের সৌভাগ্য থেকে এরা বঞ্চিত হলেন এত দ্রুত সে কথা আজও ভেবে অশ্রুসিক্ত না হয়ে পারি না। কারণ তাঁকে হত্যা করার সুদূরপ্রসারী অভিঘাত ও প্রভাবে আজও মুক্তিযোদ্ধা, তাদের সন্তান, বীরাঙ্গনাদের করুণ অবস্থার সংবাদ পেয়ে হত্যাকারীদের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তারা বঙ্গবন্ধু, জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা, বীরাঙ্গনাদের নিঃস্ব, ক্ষমতাহীন ও মর্যাদাহীন করে জাতির মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কা-ারীদের মর্মমূলে আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল। অর্থাৎ, ওরা ওদের প্রধান শত্রু- মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তির মূলোৎপাটন করতে সক্ষম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছরে নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের ভিত্তি নির্মাণের রূপরেখা প্রণয়ন করে ফেলেছিলেন। অথচ তাঁর এবং মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের ধ্বংসকারী দল, জোট ও ব্যক্তি দীর্ঘ একুশ বছর ক্ষমতা দখল করে রাখে! একুশ বছর একটি মানবজীবনের জন্য দীর্ঘ সময়। এ সময়ে তরুণ টগবগে মুক্তিযোদ্ধা মধ্য বয়সে পৌঁছে যায়। রাষ্ট্রের উপেক্ষার ফলে দীর্ঘ একুশ বছরে যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে দৃঢ় ভিত্তি দিতে প্রস্তুত ছিল তারা হয়ে পড়ল অসহায়, নিঃস্ব, দুর্বল। সমাজের কর্তৃত্ব তখন রাজাকারদের হাতে। দেশ যখন ’৭১-এর খুনী, গণহত্যাকারী, পাকি-দালাল, ধর্ষক ও হিন্দু বসত লুটকারীদের হাতে চলে যায়, তখন সহায়-সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধার পক্ষে তাদের প্রত্যাঘাত করা সম্ভব হয়নি। সম্ভবত ’৮৮-’৮৯ সালে যখন আমি একটি শিক্ষক প্রশিক্ষণের ভিডিও তৈরি করছিলাম তখন প্রশিক্ষণের জন্য যে পাঠগুলো নির্ধারণ করেছিলাম, তাতে একটি পাঠ ছিল শিক্ষার্থীরা (এখানে চতুর্থ অথবা পঞ্চম শ্রেণীর) স্থানীয় একজন মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশ্ন করে তার অভিজ্ঞতা জেনে খাতায় লিখবে। পাঁচরুখি এলাকার একজন মুক্তিযোদ্ধাকে আগেই খুঁজে রেখেছিলাম। পাঁচটি প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের দেয়ার জন্য শিক্ষিকাকে দিয়েছিলাম। সে সময় ভিডিও ক্যামেরায় এসব মডেল শ্রেণী পাঠের দৃশ্য তুলেছিল তিন তরুণ। তারা এবং আমি খেয়াল করলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব- নামগুলো শিশুরা উচ্চারণ করতে ভয় পাচ্ছে, তাদের ঠোঁট কাঁপছিল! যা হোক, শিশুরা খুব সুন্দর শুদ্ধ বাংলায় মুক্তিযোদ্ধার উত্তরগুলো লিখেছিল দেখে মনটা ভরে গিয়েছিল। উল্লেখ্য, এই শিক্ষক প্রশিক্ষণ ভিডিওটি (৫৫ মি.) সে সময়ের চলমান যোগ্যতাভিত্তিক শিক্ষাক্রমের ওপর পরিচালিত শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ব্যবহারের জন্য তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ওখানে মোল্লা ধরনের একজন কর্মশিবির আয়োজকের বাধার কারণে মুক্তিযোদ্ধার অভিজ্ঞতা বর্ণনার পাঠটি আসামাত্র ভিডিওটি বন্ধ করে দেয়া হতো। উপরন্তু ওই আয়োজকের উদ্যোগে পাঁচ-ছয়জন মোল্লা প্রকৃতির পিটিআই সুপার এ ভিডিও বন্ধ করার জন্য এনসিটিবিতে পত্র লিখেছিল। সৌভাগ্যক্রমে সে সময়ের আধুনিকমনা প্রাথমিক শিক্ষার ডিজি ওই পত্র ছিঁড়ে ফেলে দেন। এনসিটিবির কর্মকর্তারাও ওই পত্র গ্রাহ্য করেননি। যে রাষ্ট্রটির অসাধারণ চারিত্র্য বৈশিষ্ট্য একা বঙ্গবন্ধু তাঁর অসম্ভব মানবিক ধ্যান-ধারণার দ্বারা ভাবতে পেরেছিলেন এবং সেটিকে বাস্তবে রূপ দিতে অবিস্মরণীয় দূরদৃষ্টি, কল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রণালী উদ্ভাবন করেছিলেন, সে পরিকল্পনাকে বানচাল করে দিতে, সেই আকাক্সিক্ষত নবজাতক বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে অঙ্কুরেই হত্যা করতে শকুনের দল বঙ্গবন্ধু, তাঁর চার সহকর্মীকে, তার কিছু পরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করে। এর কুফল, কালো এক অন্ধকার যুগে বাঙালী জাতি নিক্ষিপ্ত হলো। ইতিহাসকে ঘুরিয়ে দেয়া হলো উল্টোদিকে। কিন্তু রাতের পর যেমন সূর্য ওঠে, দিন আসে তার আলো ঝলমল রূপ নিয়ে, তেমনি ২০০৮-এর ডিসেম্বরের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর ’৭০-এর নির্বাচনের জোয়ারের মতো ভূমিধস বিজয় অর্জন করে বাঙালীকে নতুন এক প্রভাত এনে দিলেন। দীর্ঘদিনে বঙ্গবন্ধুর কল্পিত রাষ্ট্রের রূপরেখা বহু ঝড়-ঝাপটায় ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন, মলিন হয়ে গেছে। কিন্তু বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে আজ ফিরিয়ে আনবে বলে পণ করেছে। আজকের বাঙালীর ভরসা, তাদের নেতৃত্বে আছেন বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা, যিনি বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতান্ত্রিক ধাঁচের জনকল্যাণমুখী সোনার বাংলা অবশ্যই প্রতিষ্ঠিত করবেন একদিন, যেদিন খুব দূরে নেই। লেখক : শিক্ষাবিদ
×