ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রোধে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ১১:৩৭, ১২ মার্চ ২০২০

সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ রোধে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে সংস্কৃতি চর্চা বাড়াতে হবে। আবহমানবকাল থেকেই এই দেশে সংস্কৃতি চর্চা হয়ে আসছে। এর সঙ্গে ধর্মের কোন বিরোধ ছিল না। এই সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমেই মানবতার চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমপি। তিনি বলেন, এই দেশের জনগণ কখনও সন্ত্রাস জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দেয়নি। বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ নির্মাণে শেখ হাসিনা পরিশ্রম করছেন। এ কারণে সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ মোকাবেলায় তিনি সফল হয়েছেন যোগ করেন। বুধবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে ‘জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও সংঘাত প্রতিরোধে সাংস্কৃতিক কর্মীদের ভূমিকা নিয়ে আয়োজিত এক সভায় তিনি এই মন্তব্য করেন। একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জামাত শিবিরের মাধ্যমে এদেশে প্রথম জঙ্গীবাদের সূচনা হয়েছে। এই জঙ্গীবাদ এখন সারাবিশ্বের প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সব ধর্মের মধ্যেই এখন জঙ্গীবাদ মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। বাংলাদেশে এর সূত্রপাত হয়েছে ছাত্র শিবিরের রগ কাটার মধ্য দিয়েছে। এই দেশকে জঙ্গীবাদে পরিণত করার জন্য আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র হয়েছে। কিন্তু সফল হতে পারেনি। তিনি বলেন, সরকার জঙ্গীবাদকে কঠোর হাতে দমন করেছে। এই পদক্ষেপের কারণে জঙ্গীবাদের সঙ্গে জড়িতদের পরিবারের লোকজন পর্যন্ত অস্বীকার করেছে। তাদের লাশ নিতে চায়নি। অনেক মা তার জঙ্গীবাদী সন্তানকে ধরিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন ছাত্র শিবির রগ কাটার মাধ্যমে এই জঙ্গীবাদ কর্মকা-ের সূচনা করেছে। কোন ছাত্র অন্য কোন ছাত্র বা অন্য ধর্মের কাউকে রগ কাটতে পারে না। তারাই এই জঙ্গীবাদ ভয়ঙ্কর রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছে। বেছে নেয় টার্গেট কিলিং, অন্য ধর্মের মানুষকে হত্যা, বৌদ্ধ বিক্ষুকে হত্যা এবং ধর্ম যাজকদের হত্যা। শিয়া মসজিদে হত্যার মতো দৃশ্যও দেখেছি। সবগুলোর সুতার টান ছিল একই। আন্তর্জাতিক মৌলবাদে যুক্ত করার ষড়যন্ত্র দেখেছি। তিনি বলেন, এই দেশ হিন্দু-মুসলিম, বৌদ্ধ-খ্রীস্টান সবার। বঙ্গবন্ধু এবং শেখ হাসিনার অসাম্প্রদায়িক মানসিকতার কারণে আজ এই পর্যন্ত আসতে পেরেছি। কিন্তু সারাবিশ্বে আজ সব ধর্মের মধ্যে যে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হয়েছে এটা প্রতিরোধে সবার মধ্যে শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। সংস্কৃতি চর্চার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দর্শন ছড়িয়ে দিতে হবে। জয়বাংলা স্লোগান নিয়ে হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রায়ের মাধ্যমে আজ দেশে জয়বাংলা স্লোগান আবারও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই স্লোগান দিয়েই আমরা যুদ্ধ শুরু করেছিলাম। কিন্তু এটা এক সময় সরিয়ে দেয়া হয়েছিল। যারা সরিয়ে দিয়েছিলেন তাদের অবস্থানই আজ মীরজাফর ও বিশ্বাসঘাতকদের কাতারে চলে গিয়েছে। কিন্তু জয়বাংলা আমাদের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতায় একাত্তরের ঘাতক-দালাম-নির্মূল কমিটির সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির বলেন, নাইন ইলেভেনের পর থেকে ইসলামের নামে সন্ত্রাস চলছে। কিন্তু ইসলাম ধর্ম সন্ত্রাসের ধর্ম নয়। ইসলামের নাম ব্যবহার করে এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করা হচ্ছে। কোন ধর্মই সন্ত্রাসকে অনুমোদন দেয় না। এই সন্ত্রাস এবং জঙ্গীবাদ রুখতে মানবতা বেশি জরুরী। মানবতার জন্য সংস্কৃতি চর্চা প্রয়োজন। কারণ যে সঙ্গীত চর্চা করে সে কখনো সন্ত্রাসী হতে পারে না। জঙ্গীরা আজ সুফীবাদকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে। কিন্তু সময় এসেছে সব ধর্মের মধ্যে সমন্বয় করার। যারা ওয়াজ মাহফিলে ফতোয়া দিচ্ছে গানবাজনা হারাম তাদের নিষিদ্ধ করা জরুরী। তিনি বলেন, জঙ্গী ও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করতে হলে বিশ্বব্যাপী বঙ্গবন্ধুর ধর্মনিরপেক্ষ মানবতা তুলে ধরতে হবে। কারণ বঙ্গবন্ধুই রাজনীতি থেকে ধর্মকে আলাদা করার কথা বলেছেন। আপীল বিভাগের সাবেক বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, ইসলাম হিংসা ও সন্ত্রাসের ধর্ম নয়। মানবতার ধর্ম। সব মানুষই একই স্রাষ্টার সৃষ্টি। এই বোধোদয় হলে ধর্ম নিয়ে হানাহানি, রাজনীতি থাকবে না। তাহলে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের কোন সুযোগ থাকবে না।
×