ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩৮ বিসিএসে পদ বাড়ল, ফল প্রকাশ পেছাল

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ১২ মার্চ ২০২০

৩৮ বিসিএসে পদ বাড়ল, ফল প্রকাশ পেছাল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে নতুন করে পদের সংখ্যা বৃদ্ধির প্রস্তাব আসায় শেষ মুহূর্তে ৩৮ বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। চলতি মাসে এ বিসিএসের ফল প্রকাশ হচ্ছেনা। আগামী মাসের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ করা হবে ফল। তবে চাকরি প্রার্থীদের জন্য সুখবর হচ্ছে নতুন পদের সুপারিশে ফল প্রকাশের সময় কিছুটা পিছিয়ে গেলেও পদ সংখ্যা বাড়ছে প্রায় আড়াই শ’। এদিকে আরও একাধিক বিসিএসের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগের কাজ একই সঙ্গে করছে সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসি)। সরকারী কর্মকমিশন সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশের যাবতীয় কাজ প্রায় শেষ করে ফেলেছিল কমিশন। ফলাফল প্রস্তুতের সবচেয়ে জটিল অংশ ক্যাডার বণ্টনের কাজও প্রায় গুছিয়ে এনেছিল কমিশন। ক্যাডার বণ্টন কাজের অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই ইতোমধ্যে কমিশনের পক্ষ থেকে চলতি মাসে ফল প্রকাশের কথা বলা হয়েছিল। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক ফল প্রকাশের তারিখ নিশ্চিত না করলেও চলতি মাসেই ফল প্রকাশ করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন। তবে পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বুধবার জনকণ্ঠকে বলেছেন, ফল প্রকাশের দিনক্ষণ একটু পিছিয়ে দিচ্ছি আমরা চাকরি প্রার্থীদের স্বার্থের কথা চিন্তা করেই। আমরা ফল প্রকাশের প্রায় অর্ধেক কাজ গুর্ছিয়ে এনেছিলাম তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও ২৪০টি পদের চাহিদাপত্র দেয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত বড় একটি সুখবর চাকরি প্রার্থীদের জন্য। আমরাও মনে করেছি নতুন করে আবার ফল প্রস্তুতের কাজ করতে হলেও আরও অনেকের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। এমন চিন্তা থেকেই ফল প্রকাশের সময় একটু পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি। ক্যাডার পদের সংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাকরির এ সুযোগ আমাদের সন্তানদের জন্য মুজিববর্ষের একটি শুভেচ্ছাস্বরূপ। ৩৮ বিসিএসের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশন সদস্য অধ্যাপক ড. আবদুল জব্বার খানও ফল প্রকাশের শেষ পর্যায়ে পদ সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগকে চাকরি প্রার্থীদের জন্য মুজিববর্ষের শুভেচ্ছা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি জানান, চলতি মাসেই ৩৮তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা সম্ভব হতো। ক্যাডার বণ্টনের কাজও আমরা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছিলাম। তবে নতুন পদের প্রস্তাব আসায় ক্যাডার বণ্টনের কাজ আবার নতুন করে করতে হবে। এ কাজটি স্বচ্ছতার সঙ্গে করতে কয়েকটা দিন সময় লাগবে। তবে সামান্য কিছু সময় লাগলেও আরও যে প্রায় আড়াই শ’ ক্যাডার পদের চাকরির সুযোগ বাড়ছে এটা বিশাল একটি বিষয়। কাজের চাপ একটু বাড়লেও যদি নতুন একজন মানুষও চাকরির সুযোগ পান সেটাই কমিশনের কাছে আনন্দের। এর আগে এ বিসিএস থেকেই কার্যকর করা হলো বেশ কিছু নতুন বিষয়। এ বিসিএসেই বাংলার পাশাপাশি ইংরেজী ভার্সনের প্রশ্ন রাখা হয়, উত্তরও লেখার সুযোগ থাকে যে কোন একটি ভাষায়। পরীক্ষার্থীরা যাতে নিজেদের পছন্দমতো উত্তর করতে পারে সেজন্য বাংলা ও ইংরেজী মাধ্যমে প্রশ্ন করা হয়। যারা ইংরেজীতে উত্তর দেন তাদের আবেদনের সময়েই তা উল্লেখ করা হয়। এবার দু’জন পরীক্ষক দিয়ে লিখিত পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয় প্রথমবার। দুই পরীক্ষকের মধ্যে ২০ শতাংশ নম্বরের পার্থক্য হলে তৃতীয় পরীক্ষকের মাধ্যমে খাতা মূল্যায়ন করা হয়। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের নির্দেশনা অনুযায়ী খাতা মূল্যায়নে নতুন এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক সময় পরীক্ষকের ভুলে বা অনবধানতায় শিক্ষার্থীরা তাদের খাতার সঠিক মূল্যায়ন থেকে বঞ্চিত হন। তাই দ্বিতীয় ও প্রয়োজন হলে তৃতীয় পরীক্ষক রাখা হয়। দুই পরীক্ষকের প্রদত্ত নম্বরের ব্যবধান যদি ২০ শতাংশের বেশি হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে খাতা পাঠিয়েছে পিএসসি। ফলে পরীক্ষার্থীদের মেধা যথাযথভাবে মূল্যায়ন হওয়ার একটি সুন্দর পথ তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। আবেদনের সময় এবারই প্রথম এনআইডি নম্বর দেয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৩টি সাধারণ ক্যাডারে ৫২০টি পদ, কারিগরি ও পেশাগত ক্যাডারে ৫৪৯টি, সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে ৯৫৫টিসহ দুই কাজার ২৪ পদে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। তবে এখন আরও ২৪০টি পদ বাড়ল। গত বছরের ২৯ জুলাই থেকে ৩৮তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা শুরু হয়। চলতি বছরের ৯ ফেব্রুয়ারি পরীক্ষা শেষ হয়েছে। গত বছরের এক জুলাই লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ করে পিএসসি। এতে পাস করেন নয় হাজার ৮৬২ জন। ২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর ৩৮তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৪৬৮ জন প্রার্থী আবেদন করেন। এদিকে পিএসসির অধীন সকল পরীক্ষার সময় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত ভালভাবেই কার্যকর করছে কমিশন। এরই অংশ হিসেবে ৪০তম বিসিএসের পদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের লিখিত পরীক্ষা ১৫ দিনের পরিবর্তে মাত্র দ্ইু দিনে সম্পন্ন করা হচ্ছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক বলেন, বিসিএস পরীক্ষা ছাড়াও অন্য নন-ক্যাডার পদের, বিভাগীয় এবং সিনিয়র স্কেলের পদোন্নতির পরীক্ষার সময় উল্লেখযোগ্য হারে কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ৮ এবং ৯ মার্চ মাত্র দুই দিনেই ৪০তম বিসিএসের পদ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পরীক্ষা সম্পন্ন হয়। পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় বিসিএসের চলমান অন্য পরীক্ষা স্বল্প সময়ের ব্যবধানে সম্পন্ন করা হবে। এদিকে ৩৮ বিসিএসের আরও একাধিক বিসিএসের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার নিয়োগের কাজ করছে পিএসসি। পিএসসি সূত্র জানায়, ৩৭ তম বিসিএসের অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে আরও কিছু নন ক্যাডার নিয়োগের কাজ চলছে। ৩৯ তম বিশেষ বিসিএস থেকে চাহিদাপত্র অনুসারে আরও নন-ক্যাডার নিয়োগ হবে। ৪০ তম বিসিএসের সকল লিখিত পরীক্ষা সবেমাত্র শেষ হয়েছে। এখন শুরু হচ্ছে তা মূল্যায়নের কাজ। এছাড়া ৪১ বিসিএসের প্রিলিমিনারির আবেদন শেষ হয়েছে। চলছে পরীক্ষা আয়োজনের প্রস্তুতি। গত বছর ২৭ অক্টোবর প্রকাশ করা হয়েছিল ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি। এ বিসিএসে দুই হাজার ১৬৬ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগ দেয়া হবে। এই বিসিএসে সর্বোচ্চ সংখ্যক নিয়োগ দেয়া হবে শিক্ষা ক্যাডারে। এই ক্যাডারে ৯০৫ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। বিসিএস শিক্ষায় ৮৯২ জন প্রভাষক, কারিগরি শিক্ষা বিভাগে ১০ জন প্রভাষক নেয়া হবে। শিক্ষার পর বেশি নিয়োগ হবে প্রশাসন ক্যাডারে। প্রশাসনে ৩২৩ জনকে নিয়োগ দেয়া হবে। পুলিশে ১০০ জন, বিসিএস স্বাস্থ্যতে সহকারী সার্জন পদে ১১০ জন ও সহকারী ডেন্টাল সার্জন পদে ৩০ জনকে নেয়া হবে। এছাড়া পররাষ্ট্রে ২৫ জন, আনসারে ২৩ জন, অর্থ মন্ত্রণালয়ে সহকারী মহা হিসাবরক্ষক (নিরীক্ষা ও হিসাব) ২৫ জন, সহকারী কর কমিশনার (কর) ৬০ জন, সহকারী কমিশনার (শুল্ক ও আবগারি) ২৩ জন ও সহকারী নিবন্ধক ৮ জন নেয়া হবে। পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে পরিসংখ্যান কর্মকর্তা ১২ জন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ে সহকারী যন্ত্র প্রকৌশলী চার জন, সহকারী ট্রাফিক সুপারিনটেনডেন্ট এক জন, সহকারী সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক এক জন, সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ২০ জন, সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) তিন জন নেয়া হবে। তথ্য মন্ত্রণালয়ে সহকারী পরিচালক বা তথ্য কর্মকর্তা বা গবেষণা কর্মকর্তা পদে ২২ জন, সহকারী পরিচালক (অনুষ্ঠান) পদে ১১ জন, সহকারী বার্তা নিয়ন্ত্রক পদে পাঁচ জন, সহকারী বেতার প্রকৌশলী পদে নয় জন, স্থানীয় সরকার বিভাগে বিসিএস জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলে সহকারী প্রকৌশলী পদে ৩৬ জন, সহকারী বন সংরক্ষক পদে ২০ জন। সহকারী পোস্ট মাস্টার জেনারেল পদে দুই জন, বিসিএস মৎস্যে ১৫ জন, পশুসম্পদে ৭৬ জন, কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ১৮৩ জন ও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ৬ জন, বিসিএস বাণিজ্যে সহকারী নিয়ন্ত্রক চার জন। পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা চার জন, বিসিএস খাদ্যে সহকারী খাদ্য নিয়ন্ত্রক ছয় জন ও সহকারী রক্ষণ প্রকৌশলী দুই জন, বিসিএস গণপূর্তে সহকারী প্রকৌশলী (সিভিল) ৩৬ জন ও সহকারী প্রকৌশলী (ই/এম) ১৫ জনসহ মোট দুই হাজার ১৬৬ জন কর্মকর্তাকে এই বিসিএসে নিয়োগ করা হবে।
×