ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

৩০ নতুন নারী ফুটবলারের সম্ভাবনা...

প্রকাশিত: ১২:০১, ১১ মার্চ ২০২০

৩০ নতুন নারী ফুটবলারের সম্ভাবনা...

ক্ষুদ্র থেকেই বৃহত্তের সৃষ্টি। বীজ থেকে চারাগাছ, চারাগাছ থেকেই হয় মহীরুহ। তবে এ জন্য প্রয়োজন নিবিড় পরিচর্যার, সঠিক পরিকল্পনার ও সদিচ্ছার। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মহিলা ফুটবল উইং ঠিক এই কাজটিই করার চেষ্টা করছে গত কয়েক বছর ধরে। মহিলা ফুটবলের পাইপলাইন সমৃদ্ধ করতে তারা ঘরোয়া ফুটবলে চার-পাঁচটি টুর্নামেন্ট আয়োজন করে। সেখান থেকে প্রতিভাময়ী ফুটবলারদের প্রাথমিকভাবে বাছাই করে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দিয়ে বাফুফের আবাসিক ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়। তারপর তাদের বিভিন্ন বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলার সুযোগ করে দেয়া হয়। ২০১৯ সালে ঢাকার কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ‘বাফুফে-ইউনিসেফ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের (ট্যালেন্ট হান্ট)’ চূড়ান্তপর্বের খেলা। দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে এতে অংশ নেয় আটটি দল। এর আগে এই আসরের প্রথমপর্বের খেলা দেশের ছয়টি ভেন্যুতে শুরু হয়েছিল। ৩৯টি জেলা দল ছয়টি গ্রুপে ভাগ হয়ে খেলেছিল। ৬ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন এবং সেরা দুই গ্রুপ রানার্সআপকে নিয়ে ঢাকায় হয় চূড়ান্তপর্বের লড়াই। এই আসর থেকে ক্যাটাগরি-১, ২ ও ৩-এর ভিত্তিতে ৮৩ বালিকা ও কিশোরী ফুটবলারকে বাছাই করেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। বাছাইকৃত খেলোয়াড়দের নিয়ে দুই মাসের একটি ট্রেনিং ক্যাম্প হয় যশোরে। সেখান থেকে চূড়ান্ত বাছাই করা হয় ৩০ জনকে। তাদেরই ঢাকায় বাফুফের ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয় গত মধ্য জানুয়ারিতে। এরাই হচ্ছে সেই ৩০ ক্ষুদ্র বীজ, যাদের ঠিকমতো পরিচর্যা করলে একসময় মহীরুহ হতে পারবে সাবিনা, আঁখি, মাসুরা, নীলা, তহুরা, শামসুন নাহারদের মতো। জনকণ্ঠের সঙ্গে একান্ত আলাপনে ছোটন বলেন, ‘আমরা আসলে ৩০ নয়, ৫০ জনকে বাছাই করেছিলাম ঢাকায় আনার জন্য। কিন্তু ক্যাম্পে জায়গা কম থাকায় বাধ্য হয়ে ৩০ জনকে ঢাকায় নিয়ে আসি।’ এই ৩০ ফুটবলারের মধ্যে লালমনিরহাটের ৭, মাগুরার ৬, ময়মনসিংহের ৩, রংপুর, নীলফামারী, খাগড়াছড়ি, টাঙ্গাইল, রাঙ্গামাটি ও সাতক্ষীরার ২ জন করে, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর এবং বরিশালের ১ জন করে ফুটবলার আছে। ছোটন জানান, এরাসহ ক্যাম্পের আগের সিনিয়র-জুনিয়র সবমিলিয়ে মোট ২৬ জেলার খেলোয়াড় আছে এই ক্যাম্পে। জানা গেছে, এই ৩০ ফুটবলারের বয়স ১০ থেকে ১৬’র মধ্যে। পড়ে পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণীর মধ্যে। গত ২ মার্চ বেলা ১২টার দিকে বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে গিয়ে দেখা গেল ছোটনের ‘ক্লাসে’ উপস্থিত সেই ৩০ জন। বাকিরা প্রথম ব্যাচে সকালে অনুশীলন করেছে। তাছাড়া কয়েকজন সেদিন অনুশীলন করেনি, তারা রিকভারির মধ্যে ছিল। কারণ তারা সদ্য সমাপ্ত বঙ্গমাতা অনুর্ধ-১৭ বালিকা ফুটবল টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিল। মজার ব্যাপারÑ বঙ্গমাতা ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলদাতা, প্লেয়ার অব দ্য ফাইনাল, প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট ... এই পুরস্কারগুলো যারা পেয়েছে তারা সবাই বাফুফে ক্যাম্পেরই ফুটবলার। তাদের ১৯ জন এই আসরের চূড়ান্তপর্বে খেলেছে। ঢাকা বিভাগের নীতি প্রথম ম্যাচেই ১ গোল, খুলনার অধিনায়ক, রংপুরের স্বপ্না, খুলনার পূর্ণিমা এরা চূড়ান্তপর্বে করেছে ২ গোল করে। আর খুলনার উন্নতি খাতুন করেছে সর্বোচ্চ ৩ গোল। মোট কথা বাফুফের ক্যাম্পের খেলোয়াড়রাই বেশিরভাগ গোল করে এই টুর্নামেন্টে। সেরা এই খেলোয়াড়রা সবাই যদি বাফুফে কাম্পেরই হয়ে থাকে তাহলে ছোটন কি নতুন কোন প্রতিভাময়ী ফুটবলার খুঁজে পাননি বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট থেকে? ‘কেন পাব না? অবশ্যই পেয়েছি। বাছাই কমিটি কয়জনকে পেয়েছে তা জানি না। তবে আমি ২১ জনকে পেয়েছি, যারা বাফুফের ক্যাম্পে আসার মতো যোগ্য।’ ছোটনের ত্বরিত জবাব। তিনি আরও যোগ করেন, ‘এই ২১ জনের বেশিরভাগই আবার বাফুফের ক্যাম্পে কয়েক বছর আগে ছিল। তারা মূলত অনুর্ধ-১৫ ও অনুর্ধ-১৬ দলের ক্যাম্পে ছিল। পরে তারা ফর্ম বা ফিটনেসের কারণে বাদ পড়েছিল। যাহোক, এখন আবার তারা সেই সমস্যাগুলো কাটিয়ে উঠেছে দেখলাম।’ গত ১৭ জানুয়ারি এই ৩০ ফুটবলার বাফুফের ক্যাম্পে এসে ওঠে। ওই সময় সিনিয়র দলের ফুটবলাররা এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা দিতে ছুটি নিয়ে বাফুফে ক্যাম্প ছেড়ে নিজেদের দেশের বাড়ি চলে যায়। পরে আবার তাদের অনেকেই মহিলা ফুটবল লীগে অংশ নিতে বিভিন্ন ক্লাবে যোগ দিয়ে ক্লাব ক্যাম্পে থাকার জন্য চলে যায়। ফলে বাফুফের মহিলা ফুটবলারদের আবাসিক ক্যাম্প ফাঁকা হয়ে যায়। এই সুযোগটা ছোটন কাজে লাগিয়েছে নতুনদের ক্যাম্পে উঠিয়ে। নতুন খেলোয়াড়দের স্কিল-ফিটনেস আগে কেমন ছিল, আর এখন কেমন আছে, সেটা একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন ছোটন, ‘যশোরে যখন ওদের প্রথমদিন অনুশীলন করাই তখন দেখেছি, দুই গোলপোস্টে দুই গোলরক্ষক দাঁড়িয়ে। আর বাকি ২০ জনই একটা বলের পেছনে একসঙ্গে দৌড়াচ্ছে। আজ অনুশীলনে এসে আপনি নিজেই দেখেছেন ওসব সমস্যা ওদের আর নেই, সব কেটে গেছে। এখন ওরা পজিশন নিয়ে খেলে। ওয়ান কিংবা টু টাচে ফুটবল খেলে। ওরা তো এখনও বয়সে ছোট। যখন সবকিছু রপ্ত করে ফেলবে তখন অবাক হয়ে দেখবেন আরও কত উন্নতি করেছে তারা। এখনই তাদের দম এবং দৌড় দুটোরই ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। আস্তে আস্তে ওদের ট্রেনিং আরও হার্ড করে দেব। সেগুলোর লোড নিতে নিতে ওরা অভ্যস্ত হয়ে গেলেই সবকিছুতেই আরও ইমপ্রুভ করবে তারা।’ বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে গিয়ে দেখা গেছে ছোটন মেয়েদের বলের ওপর এক্টিভিশন, পাসিং প্র্যাকটিস, পাস এ্যান্ড ম্যুভ, পাস এ্যান্ড স্পেস ক্রিয়েট, প্যাটার্ন পাসিং ... এগুলো করাতে। ছোটন জানান, ‘বল নিয়েই ওদের বেশি প্র্যাকটিস করাচ্ছি। এটাই বেশি জরুরী। এছাড়া ট্যাকটিক্যাল বিষয়গুলোও ওদের আত্মস্থ করানোর চেষ্টা করছি।’ এই ফুটবলারদের প্রায় সবাই দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা। ঠিকমতো খেতে পারতো না। কিন্তু গত কয়েক মাসের অনুশীলনের পর তাদের দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই। এ প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘এখানে এসে দিনে পাঁচ দফা প্র্যাকটিস করে ও পুষ্টিকর খাবার খেয়ে ওদের সবার চেহারাই বদলে গেছে। আরও বদলাবে।’ এই খেলোয়াড়দের আগামী সাফ অনুর্ধ-১৫ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপ আসরে খেলানোর পরিকল্পনা আছে ছোটনের। আসরটি হবে আগামী জুলাইয়ের পরেই (ভেন্যু এখনও নির্ধারিত হয়নি)। ছোটন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যেহেতু সিনিয়র প্লেয়াররা এখন আর ক্যাম্পে নেই, কাজেই আমার পরিকল্পনা হচ্ছে ওদের ক্যাম্পে রেখে ট্রেনিং করিয়ে সাফ অনুর্ধ-১৫ আসরে খেলাব। ভবিষ্যতে তো ওরাই সিনিয়র জাতীয় দলে খেলবে।’ কিছু কিছু খেলোয়াড়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন ছোটন, ‘এই যে দেখুন মুনকিকে। ও বঙ্গমাতা প্রাথমিক স্কুল ফুটবলে লালমনিরহাটের হয়ে খেলে সেরা খেলোয়াড় হয়েছিল। দলের অধিনায়কও ছিল সে। সে বাংলাদেশ দলের একটা রতœ হয়ে উঠতে পারে। একই দলের লিভাও আছে। ওদের বয়স মাত্র ১০-১১, পড়ে ক্লাস ফাইভে। এদের ঠিকমতো ঘষামাজা করতে পারলে দেশের ফুটবলের সম্পদ হতে পারবে।’ তবে বড় একটা সমস্যাও দেখছেন ছোটন, ‘এদের যে গড়ে তুলব, সমস্যা হচ্ছে আবাসন নিয়ে। কেননা সিনিয়র প্লেয়াররা ক্যাম্পে ফিরে এলে তো ওদের আর ক্যাম্পে রাখতে পারব না। কারণ এত জায়গা নেই। যেভাবেই হোক, ওদের রাখতেই হবে। কোনভাবেই ছাড়া যাবে না। একবার ছেড়ে দিলেই ফর্ম-স্কিল-ফিটনেস ... সব শেষ হয়ে যাবে। ওরা তো সব পরীক্ষিত কোয়ালিটি প্লেয়ার।’ ছোটন আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাফুফে ভবনটা যদি আরও একতলা বেশি থাকত, তাহলে অনায়াসেই কমপক্ষে ১০০ প্লেয়ারের আবাসন খুব সুন্দরভাবে করা যেত।’ লীগ খেলা শেষ হলে সিনিয়র প্লেয়াররা আবারও বাফুফের ক্যাম্পে ফিরে আসলে তখন যশোর ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে আগত এই ফুটবলারদের কী হবে? কোথায় যাবে তারা? কোন বিকল্প ব্যবস্থা করা যায় না? তাদের ঢাকার মধ্যেই কোন হোটেলে রাখার ব্যবস্থা করা যায় না? ছোটন বলেন, ‘যদি ওদের মহিলা কমপ্লেক্সে ও জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হোস্টেলে রাখার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে খুবই ভাল হতো। আমি শীঘ্রই এই বিষয়টি আমাদের মহিলা ফুটবল কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ আপার কাছে তুলে ধরব। দেখা যাক কি হয়।’ এবার শোনা যাক সেই ‘সুপার থার্টি’র মধ্যে কয়েকজনের ভাবনা-অনুভূতি। লালমনিরহাটের সুরভী আক্তার (আগে গোলরক্ষক ছিল, এখন তাকে রাইটব্যাক হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে) : ‘আমরা বাফুফের ক্যাম্পে যেসব নিয়ম-কানুন আছে, সেগুলো মেনে চলি। আমরা যেহেতু নতুন, তাই আমরা সবাই মিলেমিশে থাকি, কোন সমস্যা হলে একে-অপরকে সাহায্য করি। এখানে নিরাপত্তা নিয়ে কোন সমস্যা নেই।’ রংপুরের শাপলা আক্তার (রাইটব্যাক) : ‘বাফুফে এখানে আমাদের খুব ভালভাবে রেখেছে, দেখাশোনা করছে। আমাদের প্র্যাকটিস খুব ভালমতো চলছে। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে বাফুফে অনেক কঠোর।’ লালমনিরহাটের লিভা আক্তার (ফরোয়ার্ড) : এখানে এসে প্রথম প্রথম বাড়ির জন্য খুব মন খারাপ হতো। এখন আর হয় না। তাছাড়া যশোরে আমরা যে ৮০ জন ক্যাম্প করেছিলাম, তারাই কয়েকজন এখানে এসেছি। সবাই তো পরিচিত। প্রতি শুক্রবার আমরা মোবাইল ফোনে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলার অনুমতি পাই।’ টাঙ্গাইলের মীম (রাইটব্যাক) : আগে সেভাবে না চিনলেও পরে এখানে ক্যাম্পে এসে সাবিনা, কৃষ্ণা, মারিয়া আপুদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়। খুব ভাল লেগেছে এই ভেবে যে আপুদের মতো সুপারস্টারদের সঙ্গে আমরা একই ক্যাম্পে থাকব, খেলব। তারা আমাদের উপদেশ দিয়েছেন এই বলে, তোমরা ভালভাবে এখানে থাকবে ও ভালমতো প্র্যাকটিস করবে, তাহলে একদিন আমাদের চেয়েও ভাল প্লেয়ার হতে পারবে। কথাগুলো শুনে অনেক ভাল লেগেছে আমাদের। আমরা দেড়মাসের মতো এই ক্যাম্পে আছি। অনেক ইমপ্রুভ করেছি। আরও অনেকদিন থাকলে আরও অনেক উন্নতি হবে। মনের ভেতরে এই ইচ্ছেটা আছে আমরাও যেন এই আপুদের মতো বড় প্লেয়ার হতে পারি এবং বাফুফে ক্যাম্পে অনেক বছর থাকতে পারি। কিরণ ম্যাডাম মাঝে মধ্যে আমাদের ক্যাম্পে আসেন এবং আমাদের অনেক উৎসাহ দেন। বড় খেলোয়াড় হতে গেলে যতটা ত্যাগ স্বীকার ও কঠোর পরিশ্রম করতে হবে, সেগুলো করতে আমরা রাজি আছি।’ লালমনিরহাটের মুনকি আক্তার (সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার) : আমার দৃঢ়বিশ্বাস এই ক্যাম্পে দীর্ঘদিন থেকে অনুশীলন করতে পারলে নিজেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ের খেলোয়াড় হিসেবে প্রমাণ করতে পারব। মাগুরার ৫ ফুট ৫ ইঞ্চি উচ্চতার গোলরক্ষক সাথী বিশ্বাস। জাতীয় দলের গোলরক্ষক রূপনা চাকমার গুণমুগ্ধ সাথীর ভাষ্য, ‘সবকিছু মিলিয়ে এখানে আমরা অনেক নিরাপদে ও ভাল আছি। পরিবেশ অনেক সুন্দর।’ খাগড়াছড়ির মেয়ে কিটিং ত্রিপুরাকে (লেফট ফরোয়ার্ড) সবচেয়ে ‘মজার ক্যারেক্টার’ বলে অভিহিত করেন ছোটন। পুরো ক্যাম্পকে একাই নানা রকম কমেডি করে মাতিয়ে রাখে সে। ‘মাত্র’ ৯ ভাই-বোন তারা (কিটিং সবার ছোট)! আর দুজন হলেই তো আস্ত একটা ফুটবল টিম বানিয়ে ফেলা যেত, এটা শুনে খিলখিল করে হেসে ওঠে সে। ভবিষ্যতে মনিকা চাকমা, আনাই মগিনি ও আনুচিং মগিনির মতো ফুটবলার হবার স্বপ্ন দেখে কিটিং। ছোটন স্যার কি বেশি কড়া? ধমক-টমক দেয়? কোচ ছোটন সামনে উপস্থিত ছিলেন বলেই হয়তো কিটিংয়ের বুদ্ধিদীপ্ত জবাব, ‘না। স্যার আমাদের ভালভাবে প্রশিক্ষণ দেন, যাতে আমাদের ভাল হয়।’ আরেকটি তথ্য জানায় কিটিং, ‘এখানে অবসরে আমরা ক্যারম ও লুডু খেলি। আড্ডা দিই। তাছাড়া চোখ টিপ খেলি।’ এটা আবার কোন্ ধরনের খেলা? ‘এক ধরনের গ্রামীণ খেলা। খুব মজার।’ বাফুফে ক্যাম্পে মেয়েদের প্রতিদিনের রুটিনটা এরকম : ভোর ৫টায় শয্যাত্যাগ। সকালে অনুশীলনের আগে একবার নাস্তা। অনুশীলন শেষে সকাল ১১টায় আরেক দফা নাস্তা। তারপর একঘণ্টার বিশ্রাম। বেলা ১২টায় আবার মাঠে এসে অনুশীলন। অনুশীলন শেষে স্থানপর্ব, নামাজ। তারপর দুপুর ২টায় লাঞ্চ। ৩টায় স্ট্রেচিং। তারপর বিশ্রাম। তারপর সন্ধ্যায় প্রাইভেট পড়াতে শিক্ষক আসলে পড়ালেখা করা। পড়া শেষ হলে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে রাতের খাবার খেয়ে সাড়ে ৯টার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়া। যশোরেও মোটামুটি একই ধরনের সিডিউল ছিল মেয়েদের। তবে ঢাকায় ট্রেনিংয়ের মাত্রাটা বেশি। ছোটন অবশ্য এই মেয়েদের একটা সতর্কবার্তা দিয়ে রেখেছেন, ‘তোমরা যদি ফাঁকিবাজি কর বা পরিশ্রম না কর, তাহলে কিন্তু এই ক্যাম্পে আর থাকতে পারবে না। মারিয়া মান্দারা কিন্তু আজকে এত সহজেই এই অবস্থানে আসেনি। তাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে, ডিসিপ্লিন মানতে হয়েছে। তোমাদেরও তাই করতে হবে।’ কিটিং-মুনকি-লিভা-মীম-শাপলা-সুরভীদের আবাসন সমস্যার আদৌ কোন সমাধান কী হবে? তাদের চারাগাছ থেকে মহীরুহতে রূপান্তর করার ছোটনের প্রচেষ্টা আগামীতে সফল হবে কী?
×