ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনা নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সতর্ক থাকতে হবে ॥ কাদের

প্রকাশিত: ১০:৫৮, ১১ মার্চ ২০২০

করোনা নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সতর্ক থাকতে হবে ॥ কাদের

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্ক না ছড়িয়ে সতর্ক থাকতে হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে সরকার সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। আর করোনাভাইরাস নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। মানবতা ও জনস্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে মুজিব শতবর্ষের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। জাতির পিতার জন্মক্ষণ ১৭ মার্চের রাত ৮টায় সারাদেশে একসঙ্গে আতশবাজি ফুটানো হবে, দিনব্যাপী থাকবে দলীয় নানা কর্মসূচী। মঙ্গলবার রাজধানীর ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মুজিববর্ষের পুনর্বিন্যস্ত কর্মসূচী ঘোষণা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার কাছে মানবতা ও জনস্বার্থের চেয়ে অন্য কোন বিষয় এই মুহূর্তে প্রাধান্য পাওয়া উচিত না। যে কারণে বিপুল উৎসবের আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও জনস্বার্থের কথা বিবেচনা করে কর্মসূচীতে কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে। জনগণের মঙ্গলের কথা ও মানবিক বিষয় চিন্তা করেই কর্মসূচী নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর কিছু মুনাফালোভী মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করার চেষ্টা করছে। তাদের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযান শুরু হয়েছে, যা আরও জোরদার করা হবে। খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, পরিবার বা দলের নেতার কথায় দ-িত আসামি বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। তবে চিকিৎসকরা তাঁর চিকিৎসার্থে কোন সুপারিশ করলেই কেবল তা বিবেচনাযোগ্য। তিনি বলেন, যেহেতু মানবিক কারণে বা চিকিৎসার জন্য তাঁর জামিন আবেদন আদালত একাধিকবার নাকচ করে দিয়েছেন, তাই পরিবারের আবেদনে খালেদা জিয়াকে মানবিক কারণে মুক্তি দেয়ার সুযোগ নেই। কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দ-িত হয়ে কারাগারে। এখন পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবিক কারণে চিকিৎসার্থে খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছে তার কোন মূল্য নেই। খালেদা জিয়ার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা প্রয়োজন- এ কথা শুধু তাঁর দলের নেতা বা পরিবারের লোকজন বলছেন। খালেদা জিয়ার চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকরা যে কথা বলছেন না। স্বভাবতই দল বা পরিবারের কথায় তাঁর মুক্তির সুযোগ নেই। মুজিববর্ষের পুনর্বিন্যস্ত কর্মসূচী ঘোষণাকালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠান কাটছাঁট করা হলেও তাঁর জন্মক্ষণ ১৭ মার্চ রাত ৮টায় সারাদেশে একসঙ্গে আতশবাজি ফোটানো হবে। ১৭ মার্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আপাতত স্থগিত করে পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা চাই জনগণ যাতে কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। জনগণের মঙ্গলের কথা এবং মানবিক বিষয় চিন্তা করে কর্মসূচী নতুনভাবে সাজানো হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, ১৭ মার্চ সকাল সাড়ে ৬টায় আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে ও সারাদেশে সকল সহযোগী সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। সারাদেশের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী সমর্থক শুভানুধ্যায়ী সকলেই বিশেষ করে, আমাদের জেলা-মহানগর এমনকি উপজেলা পর্যন্ত কমিটিগুলো একইরকম কর্মসূচী পালন করবেন। সকল সহযোগী সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে সারাদেশের মসজিদ, মন্দির প্যাগোডাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করবে। তিনি জানান, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চে সারাদেশে দুস্থ এতিমদের মাঝে খাবার বিতরণ করা হবে। সারাদেশে দলীয় কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার এবং আলোকসজ্জা থাকবে। সন্ধ্যা ৬টার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে যে কর্মসূচী রয়েছে তা একসঙ্গে সকল গণমাধ্যম প্রচার করবে। দেশবাসীকে ঘরে বসে সেই আয়োজন দেখার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই। এটা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। এক জায়গায় অধিক লোক সমাগমে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে বলেই এ বিষয়ে সবাইকে সর্তক করে দিতে চাই। এজন্য বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের জনস্বার্থে অধিক লোক সমাগমের সকল কর্মসূচী আপাতত পরিহারের পরামর্শ দিয়েছেন। দলগতভাবে সরকারীভাবে দলের সকল আয়োজন পুনর্বিন্যাসে সীমিত আকারে নির্দেশ দিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের উন্নতি হলে বিশ্বনেতাদের উপস্থিতিতে পরে যেকোন সময় এই কর্মসূচী পুনরায় আয়োজন করা হবে। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিদেশী অতিথিদের আসার বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। এছাড়া, প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। সময়সুযোগ বুঝে এটি পরেও করা যাবে। তিনি বলেন, এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ইতিহাসের বিশেষ দিক। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী এমন দিনে হচ্ছে সেই মঙ্গলবার। যে মঙ্গলবারে বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল। ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত ৮টায় বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা মহানায়ক বঙ্গবন্ধু জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এবার বর্ণাঢ্য আয়োজন করতে পারলে ভালে লাগত। দেশের মানুষও এমন দিনের অপেক্ষা করছিল। কিন্তু পরিস্থিতির বাস্তবতা ভিন্ন বিষয়। বঙ্গবন্ধু কন্যারা বিষয়টি নিয়ে নতুনভাবে ভেবেছেন। তারা ভেবেছেন মানবতা ও জনস্বার্থের চেয়ে অন্য কোন বিষয় এই মুহূর্তে প্রাধান্য পাওয়া উচিত না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এটার সঙ্গে রাজনীতির কোন সংযোগ নেই। বিদেশী অতিথিরা কেউ প্রোগ্রাম স্থগিত করেননি। কাজেই বঙ্গবন্ধু কন্যা যে কর্মসূচী পুনর্বিন্যাস করেছেন তাঁকে অন্যভাবে উপস্থাপন করতে অনেকে চেষ্টা করছেন। এরমধ্যে রাজনীতি এনে তাদের চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী রাজনীতির অনুপ্রবেশ ঘটাতে চাইছেন। কিন্তু আমরা বাস্তবতা অনুসরণ করে চলছি। সারাবিশ্বে ডব্লিউএইচও (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) স্বাস্থ্যবিধি স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে সেটা যথাযথভাবে অনুসরণ করছি। আর করোনা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে করণীয় আছে। তা হলো সতর্ক থাকা, যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। আগামী ১২ মার্চ দেশের প্রতি এক্সপ্রেস হাইওয়ে উদ্বোধন করা হবে জানিয়ে সেতুমন্ত্রী বলেন, ১২ মার্চ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যাত্রাবাড়ী-ভাঙ্গা এক্সপ্রেস হাইওয়ে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মার্চের কোন একদিনে ওই সড়কপথে পরিবারের অন্য সদস্যদের নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় যাবেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিম-লীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, শাজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বি এম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, প্রচার সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, উপ দফতর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় সদস্য খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন, পারভীন জামান কল্পনা প্রমুখ।
×