ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ইতালির ৬ কোটি নাগরিককে ঘরে থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ১০:৫৬, ১১ মার্চ ২০২০

ইতালির ৬ কোটি নাগরিককে ঘরে থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস ঠেকাতে ইতালির প্রায় ৬ কোটি নাগরিকই রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। আক্রান্তের সংখ্যা ও এ রোগে মৃত্যু দ্রুত বাড়ার জন্যই ইতালিজুড়ে ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও জনসমাবেশ নিষিদ্ধের মতো পদক্ষেপ নেয়া হলো। দেশটিতে সর্বশেষ মৃতের সংখা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬৩ জনে। এর মধ্যে ফ্রান্সের সংস্কৃতিমন্ত্রী আক্রান্ত হয়েছেন এই ভাইরাসে। বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৪০১৮ জন এবং আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার। তবে চীনের পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ও জার্মানির মতো বিশ্বের অন্যান্য অংশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। খবর বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, আলজাজিরা ও সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের। ইতালিতে আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখা বাড়ছে। ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে দেশটির প্রায় ৬ কোটি বাসিন্দাই রয়েছেন কোয়ারেন্টাইনে। সোমবার ইতালিতে নতুন করে ১ হাজার ৭৯৭ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ইতালিতে একদিনে ১৬৮ জনের মৃত্যু ॥ ইতালিতে করোনাভাইরাসে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ১৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩১ জনে। দেশটিতে একদিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড। রোমের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইতালিতে নতুন করে আরও প্রায় ১ হাজার করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াল। ইতালির প্রধানমন্ত্রী জিউসেপ্পে কোন্তে জনগণকে ঘরে অবস্থান করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং জরুরী প্রয়োজনে ভ্রমণ করতে হলে অনুমতি নিতে বলেছেন। এই মুহূর্তে গোটা ইতালি অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। ভ্রমণে বিধিনিষেধসহ গোটা দেশে জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সব পানশালা ও রেস্তরাঁ ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। সিনেমা হল, মঞ্চ এবং জাদুঘর বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে সব স্কি রিসোর্ট। ফুটবল ম্যাচসহ সব ধরনের খেলার অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ৩ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সব স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়। বিয়ে, শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানসহ সব ধরনের জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতালির ২০টি প্রদেশেই কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ করোনা আক্রান্ত ইরানে ॥ ইরানে করোনাভাইরাসে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ২৯১ জনের। দেশটিতে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৮ হাজার ৪২ জন। চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৩৯৪ জন। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি আক্রান্তের সংখ্যা এখন ইরানে। বিশ্বব্যাপী মৃতের সংখ্যা ৪০০০ ছাড়াল ॥ মৃতের সংখ্যা ৪০১৮ জনে দাঁড়িয়েছে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। মৃত ও আক্রান্তদের অধিকাংশই চীনের মূল ভূখণ্ডের বাসিন্দা। দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) করোনাভাইরাসে নতুন করে মাত্র ১৯ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এক কী দুই মাস আগে সেখানে প্রতিদিন নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২০০০ জনের মতো ছিল। ভাইরাসটির সংক্রমণজনিত রোগ কোভিড-১৯ এ এদিন ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর ঘটনাগুলো সব হুবেই প্রদেশে ঘটেছে। চীনে মৃতের মোট সংখ্যা ৩১৩৬ জনে ও মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার ৭৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে। চীনের বাইরে বিশ্বের অপরাপর দেশ ও অঞ্চলে মৃতের সংখ্যা ৮৮২ জনে এবং আক্রান্তের সংখ্যা ৩২ হাজার ২৫৫ জনে পৌঁছে গেছে। চীনসহ বিশ্বব্যাপী মোট মৃতের সংখ্যা ৪০১৮ জনে ও আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ১৩ হাজার ৯ জনে পৌঁছেছে। ফ্রান্স ॥ দেশটির সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ফ্রাংক রিয়েস্টার করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। সোমবার তার এক সহকর্মী এমন তথ্য জানিয়েছেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলিভিয়ার ভেরান বলেছেন, ফ্রাংক ভাল আছেন। তিনি বাসায় বিশ্রাম নিচ্ছেন। দেশটিতে ১৪১২ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৩০ জন। ফ্রাংক ছাড়াও দেশটির আরও পাঁচ এমপি প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জার্মানি ॥ করোনাভাইরাসে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২২৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। দেশটিতে প্রথমবারের মতো এতে আক্রান্ত দুজনের মৃত্যু হয়। এর আগে ৮ মার্চ মিসরে ছুটিতে থাকা এক জার্মান নাগরিকের মৃত্যু হয়। দেশটির স্যাক্সনি অ্যানহাল্ট প্রদেশে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সকাল ১০টায় ৪ জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়। ফলে দেশটির ১৬টি প্রদেশেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়া গেল বলে জানিয়েছে সংক্রামক রোগ নির্ণয়ক ও নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সরকারী প্রতিষ্ঠান রবার্ট কচ ইনস্টিটিউট। দক্ষিণ কোরিয়া ॥ দেশটিতে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩১ জন, এতে দেশটিতে আক্রান্তের মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১৩ জনে। আক্রান্তদের মধ্যে এদিন তিনজনের মৃত্যু হওয়ায় এখানে মৃতের সংখ্যা ৫৪ জনে দাঁড়িয়েছে বলে দক্ষিণ কোরিয়ার রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র জানিয়েছে। জাপান ॥ এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২১০ জনে, এদের মধ্যে ইয়োকোহামা বন্দরে কোয়ারেন্টাইনে থাকা ডায়মন্ড প্রিন্সেস প্রমোদতরীতে আক্রান্ত ৬৯৬ জনও রয়েছেন। কোয়ারেন্টাইনে দেশটি মৃতের সংখ্যা ১৬ জনে দাঁড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ॥ আক্রান্তের সংখ্যা ৭২৮ আর মারা গেছেন ২৬ জন। স্পেনে ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৪৭ জন আর মারা গেছেন ২৮ জন। যুক্তরাজ্যে আক্রান্ত ২৭৩ আর মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। এর বাইরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মধ্যে ইরাকে ৭, হংকংয়ে ৩, অস্ট্রেলিয়ায় ৩ ও ফিলিপিন্স, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আর্জেন্টিনা, মিসর, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড ও কানাডায় একজন করে মারা গেছেন। চেক প্রজাতন্ত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ॥ বিভিন্ন দেশসমূহকে অনুসরণ করে ইউরোপের সর্বশেষ দেশ হিসেবে স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে চেক প্রজাতন্ত্র। মূলত বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটি। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল খোলা থাকবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ভারত ॥ দেশটিতে দ্রুত ছড়াচ্ছে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। কর্নাটকে মঙ্গলবার চারজনের রক্তপরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। পুণেতে সোমবারই দুজন আক্রান্ত হয়েছেন। কেরলে আক্রান্ত হয়েছেন আরও ছয়জন। সব মিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়ছে ৫৬। কর্নাটকের স্বাস্থ্যমন্ত্রী বি শ্রীরামুলু বলেন, ‘কর্নাটকে চারজনের রক্তপরীক্ষায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মিলেছে। চারজনকেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে আইসোলেশন ওয়ার্ডে।’ উহানের সব করোনাভাইরাস হাসপাতাল বন্ধ ॥ নতুন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাওয়ায় করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের উৎসস্থল হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানের সব অস্থায়ী হাসপাতাল বন্ধ করে দিয়েছে চীন। সাংহাইয়ের স্থানীয় সরকারের নিউজ ওয়েবসাইট ‘পেপার’ তাদের দাফতরিক টুইটার পেইজে এ খবর দিয়েছে। মৃদু লক্ষণে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও তাদের সংক্রমণের উৎস থেকে দূরে রাখতে উহানের কর্তৃপক্ষ সরকারী জিমনেজিয়াম, প্রদর্শনী কেন্দ্র ও কয়েকটি ইনডোর স্টেডিয়ামকে অস্থায়ী হাসপাতালে পরিণত করেছিল। উহানের কোভিড-১৯ কন্ট্রোল হেডকোয়ার্টারের ভাষ্য অনুযায়ী, এমন ১৬টি অস্থায়ী হাসপাতালে প্রায় ১২ হাজার রোগীকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এদিকে হুবেই প্রদেশের উহান শহর মঙ্গলবার সফর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কোভিড-১৯ রোগের প্রাদুর্ভাবের পর এ প্রথম ভাইরাসটির উৎসস্থল উহানে গেলেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে উহানে পৌঁছান তিনি। পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই এ সফরে গেছেন তিনি। উ. কোরিয়ায় করোনায় মারা গেছে ১৮০ সৈনিক ॥ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে উত্তর কোরিয়ায় অন্তত ১৮০ সৈনিকের মৃত্যু হয়েছে। কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে ৩ হাজার ৭০০ জনকে। দক্ষিণ কোরিয়ার অনলাইন নিউজ পোর্টাল ডেইলি এনকের বরাত দিয়ে হংকংভিত্তিক পত্রিকা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট এক প্রতিবেদনে মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছে। তবে দেশটির সরকারী কর্মকর্তাদের দাবি, করোনার বৈশ্বিক মহামারী থেকে এখনও দূরে রয়েছে উত্তর কোরিয়া। উত্তর কোরিয়ায় বিভিন্ন সোর্সের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলোকে প্রাধান্য দিয়ে পরে তা সংবাদ আকারে প্রকাশ ডেইলি এনকে। সংবাদমাধ্যমটির তথ্যমতে, কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত উত্তর কোরিয়ায় জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতেই মারা গেছে ১৮০ সৈনিক। এছাড়া ৩ হাজার ৭০০ সৈন্যকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালিতে ভূমিকম্পের আঘাত ॥ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত ইতালির উত্তরাঞ্চলের তুসকানিতে মৃদু মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুরের দিকে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও ভূমিকম্পের সময় আতঙ্কিত লোকজন বাড়িঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসে। ইতালির ভূতত্ত্ব ও আগ্নেয়গিরিবিষয়ক ইনস্টিটিউট বলেছে, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে তুসকানি অঞ্চলে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৬ মাত্রা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যম আনসা ক্রোনিক্যাল বলছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল তুসকানির লুসা প্রদেশের পাঁচ মাইল ভূগর্ভে। প্রাথমিকভাবে ভূমিকম্পের আঘাতে কোন ক্ষয়ক্ষতি কিংবা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। তবে তুসকানির ক্যামাইওর ও পার্শ্ববর্তী ভায়ারেগিও অঞ্চলেও কম্পন অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
×