ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংক্রমণ প্রতিরোধ প্রস্তুতিতে বড় ঘাটতি ॥ হাইকোর্ট

করোনা ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়

প্রকাশিত: ১১:১৭, ১০ মার্চ ২০২০

করোনা ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পরপরই বাজারে স্যানিটাইজার ও মাস্ক সঙ্কট দেখা দেয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এ ভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি। এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে প্রস্তুতিতে বড় ধরনের ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করছে হাইকোর্ট। তবে নতুন এই ভাইরাস ঠেকাতে সরকারের নেয়া উদ্যোগ প্রসংশনীয় বলেও মন্তব্য করেছে আদালত। সেই সঙ্গে করোনাভাইরাস ছড়ানোর প্রেক্ষাপটে মাস্ক, সেনিটাইজার নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে সিন্ডিকেট, কালোবাজারি করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার কথা বলেছে আদালত। অন্যদিকে এ ভাইরাস প্রতিরোধে দেশের জনগণকে মাস্ক বিনামূল্যে সরবরাহ করার জন্য আদালতকে নির্দেশনা দিতে পরামর্শ দিয়েছেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। নোভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নেয়া ব্যবস্থা সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের মহাপরিচালকের দেয়া প্রতিবেদন সোমবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চে উপস্থাপন করার সময় এ বিষয় উঠে এসেছে। মাস্ক নিয়ে কোন মহল ব্যবসা করছে কি না, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে এবং তদারকি করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। আদালত মাস্ক ব্যবহারে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেছে। আদালত বলেছে, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিষয়টি তদারকি করা দরকার, কেউ যাতে বেশি দাম না নিতে পারে এবং মাস্ক মজুত করতে না পারেন। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নেয়া পদক্ষেপ সম্পর্কিত প্রতিবেদনের ওপর শুনানিতে আদালত রবিবার এক পর্যবেক্ষণে এসব কথা বলেন। বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি নিয়ে রবিবার শুনানি হয়। ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কিত স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করেন। এর আগে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক ডাঃ মোঃ আমিনুল হাসান এ প্রতিবেদন দাখিল করেন। শুনানি শেষে আদালত কার্যক্রমের অগ্রগতি জানাতে আগামী ৫ এপ্রিল পরবর্তী দিন ধার্য করে। প্রতিবেদনটি দেখে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারক কে এম কামরুল কাদের বলেন, আমরা গণমাধ্যমের খবরে দেখলাম মাস্কের জন্য মানুষ দোকানে দোকানে লাইন দিচ্ছেন। একটা মাস্ক কিনতে যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা লাগে সেটা দুঃখজনক। চীনের সঙ্গে তুলনা করে এ বিচারক বলেন, সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয় কিন্তু যথেষ্ট নয়। সরকার যেসব প্রিপারেশন নিয়েছে, সেখানে আমরা পিছিয়ে আছি। তবে প্যানিকের কিছু নেই। প্রিপারেশনে সিরিয়াস ঘাটতি আছে। আরও ব্যাপক আকার ধারণ করার আগেই প্রিভেন্টিভ মেজারগুলো নিতে হবে। এ নিয়ে অবহেলা, ঘাটতি থাকার কোন সুযোগ নেই। এর আগে ৫ মার্চ করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সংশ্লিষ্টরা কি কি পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চায় হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালককে এই তথ্য জানানোর জন্য বলা হয়েছিল। আদালত তিনটি মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছিল। প্রথমত: স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর, বিশেষ করে বিমানবন্দরে যখন বিদেশীরা বাংলাদেশে আসছেন, তখন তাদের কি ধরনের পরীক্ষা করা হচ্ছে, যারা পরীক্ষা করছেন, তারা প্রশিক্ষিত কি না এবং যে যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেগুলোর সক্ষমতা রয়েছে কি না, তা জানাতে বলেছে। দ্বিতীয়ত: সারা বাংলাদেশের সরকারী হাসপাতালগুলোয় করোনাভাইরাসের জন্য পৃথক ক্যাবিনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে, কিন্তু বেসরকারী হাসপাতালগুলোয় এখন পর্যন্ত প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আদালত সরকারী হাসপাতালের পাশাপাশি সব বেসরকারী হাসপাতালেও করোনাভাইরাসের জন্য প্রাক প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে। তৃতীয়ত, প্রতিটি হাসপাতালে বা বন্দরে যেখানে শনাক্তের জন্য করোনাভাইরাস পরীক্ষার প্রয়োজন হবে, সেখানে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম রয়েছে কি না, যদি না থাকে, জরুরী ভিত্তিতে আমদানি করার জন্য সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছে আদালত। উল্লেখ্য, চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাস বিশ্বের ১০০ দেশে এখন ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশেও তিন জন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর জানা গেছে। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর প্রকাশের পরপরই বাজারে স্যানিটাইজার ও মাস্ক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন। এ ভাইরাস প্রতিরোধে সবাইকে সতর্ক হয়ে চলার পরামর্শ দেন তিনি। এছাড়া আদালতে ভিড় ঠেকাতে কি করা প্রয়োজন সে বিষয়ে সিনিয়র আইনজীবীদের পরামর্শ চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। সোমবার আপীল বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা এ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ করে এসব কথা বলেন। পরে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, প্রধান বিচারপতি সমস্ত আইনজীবীদের উদ্দেশে বলেছেন, আপীল বিভাগের এজলাসসহ চেয়ার টেবিল প্রতিদিন সকাল বেলা ডেটল দিয়ে সাফ করা হবে। সবাই হুঁশিয়ার থাকবেন। তিনি বলেছেন, আমাদের বেশি উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নাই। কিন্তু সরকার এবং চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে যে সব নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, তা স্ট্রিকলি ফলো করা। যেমন হ্যান্ডশেক না করা, যতখানি সম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা। তখন একজন আইনজীবী বলেছিলেন আদালত ছুটি দিয়ে দেয়া হোক। তখন প্রধান বিচারপতি বললেন না, সেটার প্রয়োজন নেই। এ সময় একজন বললেন স্কুলগুলো ছুটি দিয়ে দেয়া হোক। প্রধান বিচারপতি বললেন না সেটারও দরকার নেই। সরকারের নির্দেশ মোতাবেক পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। খাওয়ার আগে পরে হাত ধোয়া, হাঁচি কাশি থেকে দূরে থাকা। যথা সম্ভব বেশি জনসমাগমের ভিতর না থাকা।
×