ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কাঁচা চা পাতার দাম না পাওয়ায় নার্সারি ব্যবসাতেও ধস!

প্রকাশিত: ০৯:৪১, ১০ মার্চ ২০২০

কাঁচা চা পাতার দাম না পাওয়ায় নার্সারি ব্যবসাতেও ধস!

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ কাঁচা চা পাতার দর কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চায়ের নার্সারি ব্যবসাতেও ধস নেমেছে। উত্তরের পাঁচ জেলার কৃষক নতুন করে চা বাগান না করায় নার্সারিগুলোতে লাখ লাখ চারা অবিক্রীত পড়ে আছে। চা গাছ রোপণের ভর মৌসুমে চারা বিক্রি করতে না পেরে নার্সারি মালিকদের মাথায় হাত পড়েছে। শুধু পঞ্চগড় জেলাতেই রয়েছে ৩৫টির মতো ভিপি নার্সারি। এর মধ্যে ২০টির মতো নার্সারি পঞ্চগড় চা বোর্ডের নিবন্ধন রয়েছে। এসব নার্সারিতে বর্তমানে এক কোটিরও বেশি বিক্রয়যোগ্য চায়ের চারা রয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রমতে জেলায় বেসরকারী যেসব চায়ের নার্সারি রয়েছে তার প্রতিটিতেই প্রচলিত ভারতীয় টিভি-২৫ ও টিভি-২৬ জাতের চারা রয়েছে। এই জাতের চারা উৎপাদনে নার্সারি মালিকদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। কারণ এই দুটি জাত থেকে যে চা (মেড টি) উৎপাদন হচ্ছে তা অতি নি¤œমানের। অকশন মার্কেটেও এর মূল্য কম। তাই দেশীয় বিটি-২ জাতের চারা উৎপাদনে নার্সারি মালিকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানায়। তবে নার্সারি মালিকদের অভিযোগ, চা বোর্ড থেকে এ ধরনের কোন নির্দেশনা দেয়া হয়নি। প্রচলিত যে টিভি-২৫ ও টিভি-২৬ জাতের চারাই বিগত কয়েক বছর ধরে চা চাষীরা জমিতে লাগিয়ে আসছে। যখন কাঁচা চা পাতার মূল্য চাষীরা ভাল পান তখনই নতুন করে চা বাগান করেন। গতবছরই টিভি-২৫ ও টিভি-২৬ জাতের চারা প্রতি পিস ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। আর এবছর কাঁচা চা পাতার মূল্য গতবছরের চেয়ে অর্ধেকে নেমে আসায় চাষীরা চাষে উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। চাষীরা চা চাষের পরিবর্তে বিকল্প চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে চায়ের চারা দুই টাকাও কেউ কিনছেন না। নার্সারি মালিক রেজাউল করিম রেজা বলেন তিনি গতবছর সদর উপজেলার মধুপাড়া এলাকায় টিভি-২৫ ও টিভি-২৬ জাতের সাড়ে পাঁচ লাখ প্যাকেট কাটিং চারা করেছেন। এর মধ্যে মাত্র দেড় লাখ চারা প্রথমে প্রতি পিস ২০ টাকা এবং পরে ১৫ টাকা দরে বিক্রি করতে পেরেছেন। এখনও ৪ লাখ চারা নার্সারিতে অবিক্রীত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একই এলাকার আনোয়ার হোসেন বলেন, তিনিও ২ লাখ চারা উৎপাদন করেছেন। এখন পর্যন্ত তার কোন চারা বিক্রি করতে পারেননি। গতবছর মৌসুমের শেষ পর্যন্ত ২৪ টাকা কেজি দরে কাঁচা চা পাতা বিক্রি হলেও এবছর মৌসুমের শুরুতেই পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের তত্ত্বাবধানে সরকারীভাবে মূল্য নির্ধারণ কমিটি চাষীদের মতামতকে উপেক্ষা করে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার সমতল ভূমিতে উৎপাদিত প্রতি কেজি কাঁচা চা পাতার মূল্য ১৪ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। এর পাশাপাশি সাড়ে চার পাতার বেশি কাঁচা চা পাতা কারখানাগুলোতে সরবরাহ করা যাবে না মর্মেও শর্ত বেঁধে দেয়ার ফলে মূল্য নির্ধারণ কমিটিকে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও এ নিয়ে প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে। বাংলাদেশ চা বোর্ডের পঞ্চগড় আঞ্চলিক কার্যালয়ের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আল মামুন বলেন, বাংলাদেশ চা বোর্ড নর্দার্ন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় একটি নার্সারি স্থাপন করা হয়েছে। এই নার্সারিতে ১০ লাখ বিটি-২ জাতের চারা উৎপাদন করা হয়। এর মধ্যে ৭ লাখ চারা চাষীদের কাছে ভর্তুকি মূল্য ২ টাকা দরে প্রতিপিস বিক্রি করা হয়েছে। এই চারার চাহিদা ব্যাপক থাকায় অবশিষ্ট চারাও কয়েকদিনের মধ্যে বিক্রি হবে বলে তিনি জানান।
×