ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বিশ্বচাপ জরুরী

প্রকাশিত: ০৯:০০, ১০ মার্চ ২০২০

সিডনির মেলব্যাগ ॥ রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে বিশ্বচাপ জরুরী

যেসব আবেগপ্রবণ মিডিয়া মানবতার নামে কেঁদে-কেটে বুক ভাসিয়েছিল, যারা এদের আগমনকে সম্প্রদায়গত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখে আবেগে তাদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে আত্মীয় হতে চেয়েছিল তারা আজ কোথায়? শরণার্থী ক্যাম্পে জন্ম নেয়া শিশুকে নিয়ে যে ভাবাবেগ, যত মায়াকান্না সব ভেসে গেছে অতি উৎপাদনের জোয়ারে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কাজ করা এক আত্মীয়া আমাকে বলেছিল কিভাবে জন্ম দেয় আর কতটা বেপরোয়া নারীরা। বলা উচিত তাদের কোন চয়েস বা মতামতও নেই। তারা এখনও সভ্যতার সে স্তরে পৌঁছেনি, যেখানে নারী জানে স্বামী না থাকলে সন্তান ধারণ অবৈধ। এদের নারীরা অকপটে বলে দেয় স্বামী নাই তো কি হয়েছে? দেবর-আত্মীয়রা কি মরে গেছে? এ তো এক ধরনের সামাজিক অনাচার, যা সমাজকে কলুষিত করলেও নিরাপত্তাহীন হয়তো করে না। কিন্তু এখন যেসব খবর বেরুচ্ছে তাতে আতঙ্কিত না হওয়ার বিকল্প কোথায়? মিডিয়া লিখেছে-কক্সবাজারের টেকনাফে রোহিঙ্গা শিবিরের পার্শ্ববর্তী পাহাড়গুলো এখন মিয়ানমার থেকে আসা এই জনগোষ্ঠীর সন্ত্রাসীদের নিরাপদ ডেরায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এসব পাহাড় ঘিরে সক্রিয় রয়েছে অন্তত ১২টি রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ। তারা খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজি, ডাকাতিসহ নানা অপরাধে যুক্ত। রোহিঙ্গারাসহ টেকনাফের স্থানীয়রাও নির্যাতিত হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী গ্রুপের হাতে। গত সপ্তাহে টেকনাফে র‌্যাব-বিজিবির সঙ্গে পৃথক বন্দুকযুদ্ধে ৮ রোহিঙ্গা নিহত হয়। এর মধ্যে উপজেলার মোচনি ও জাদিমোরা রোহিঙ্গা ক্যাম্প সংলগ্ন পাহাড়ে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় ৭ জন। তারা সবাই রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপ জাকির বাহিনীর সদস্য বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে একই বাহিনীর ইলিয়াস নামে আরেক সদস্য মারা গেছে। খেয়াল করবেন, এরা এখন আমাদের র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধ করে। এই সাহস বা বেপরোয়া মনোভাব কি আকাশ থেকে পড়ল? না এর পেছনে আছে কোন ইন্ধন? আমরা যেন ভুলে না যাই দক্ষিণ চট্টগ্রাম জামায়াত-শিবিরের এক বিশাল ঘাঁটি। এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে প্রশাসন ও বাহিনীগুলো থাকায় তারা ঘাপটিমেরে আছে, কিন্তু ফণা তুলতে খুব বেশি সময় লাগবে না। আমাদের রাজনীতিতে জামায়াত-বিএনপির যে মেরুকরণ তা এখনও সুযোগের জন্য অপেক্ষা করে আছে। বিশ্বাস না হয়তো খবরে দেখুন শিবিরের ক্যাডাররা রোহিঙ্গাদের অপহরণ করছে। কেন? হিসাবে গরমিল বলে। ঐ সব এলাকায় সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আর মাদকের একচেটিয়া ডিলার যারা তাদের হাতের ঘুঁটি এসব ছিন্নমূল রোহিঙ্গা। বারবার একটা কথা বলেছি, এরা আমাদের মাটির কেউ না। তাই আমাদের গায়ে হাত তুলতে বা আমাদের বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করতেও তারা পিছপা হবে না। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশও বিষিয়ে তুলছে এরা। স্থানীয়রা কি এর দায় অস্বীকার করতে পারবে? ঢোকার সময় কোন ধরনের সাবধানতা কিংবা নিয়মের ধার ধারেনি তারা। বরং এমন সব প্রচার আর আকুতি করে যে, মনে হতো রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বলা মানেই সরকারের বিরোধিতা। ওপর মহল থেকে বলা হতো জাতি একবেলা খেয়ে হলেও এদের একবেলা আহারের ব্যবস্থা করবে। সেসব আবেগ এখন আর নেই। বরং তাদের এমন একটি জায়গায় নেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে, যাতে তাদের আলাদা করে রাখা যায়। সেটা আদৌ সম্ভব কি না এখন বলা মুশকিল। কারণ তাদের ভাষা আর চট্টগ্রামের ভাষায় মিল ব্যাপক। সুতরাং তারা অনায়াসে চাটগাঁর লোক বলে পার পেয়ে যেতে পারে। মনে হয় বিষয়টা এখন জটিল এবং তাদের বিচ্ছিন্ন করাও প্রায় অসম্ভব। সতর্ক হবার মতো আরও খবর আছে। এখন যারা শরণার্থীদের নিয়ে খেলছে তারাও কম শয়তান না। তারা এখন বাণিজ্যে নেমেছে। যেভাবেই দেখি না কেন এরা তো অসহায় আর উদ্বাস্তু। স্বভাব দোষে আর রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্যের শিকার হবার কারণে তারা বাংলাদেশে এসেছে। অথচ আবেগসর্বস্ব বাঙালী এখন আর তাদের সম্প্রদায়গত কিংবা ধর্মীয় পরিচয়ও মাথায় রাখছে না। রাখলে কি এসব ঘটত? টেকনাফের শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা আবুল কাশেম, ফরিদুল আলম ও মোঃ কাশেম জানান, ২৬ ও ২৭ নম্বর ক্যাম্পের পাশে যে পাহাড় আছে, সেখানে অনেক সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। এই সন্ত্রাসীরা মাঝে মাঝেই শিবিরে এসে রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে যায়। এরপর অসহায় রোহিঙ্গারা মুক্তিপণ দিয়ে তাদের কাছ থেকে ছাড়া পায়। লেদা ক্যাম্পে বসবাসরত রোহিঙ্গা আব্দুল মোতালেব জানান, গত এক মাসে এসব গ্রুপ তাদের ক্যাম্প থেকে অন্তত ২৫ জনকে অপহরণ করে। পরে তাদের মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনা হয়। এ ক্যাম্পেরই আরেক বাসিন্দা নুরুল করিম বলেন, এসব সন্ত্রাসী আমাদের জাতির কলঙ্ক। আমরা চাই এদের বাংলাদেশ সরকার শাস্তির আওতায় নিয়ে আসুক। বিষয়টি নিয়ে নিরাপত্তা বিশ্লেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব) ফোরকান আহমেদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্য মারা যাওয়ার ঘটনাকে তারা স্বাভাবিকভাবে মেনে নেবে না। প্রতিশোধ নিতে তারা আরও হিংস্র হয়ে উঠতে পারে। তাই এ ব্যাপারে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে কৌশল অবলম্বন করে ব্যবস্থা নিতে হবে।’ মোদ্দা কথায় পরিবেশ এখন খুব খারাপ। এটা কি অস্বাভাবিক কিছু? লেখাপড়া না জানা সভ্যতাহীন একটি জনগোষ্ঠীকে আপনি কতদিন জামাই আদরে রাখবেন? তারা কি আমাদের মতো কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে দেশ ছেড়েছে? না আছে কোন নেতৃত্ব? এখন আমাদের বিষফোঁড়া এই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে মিনমিনে কথায় কাজ হবে না। চাই বলিষ্ঠ আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। বলাবাহুল্য, দুনিয়ার হাতে সে সময় নেই। দুনিয়া করোনাভাইরাসসহ নানা যন্ত্রণায় অস্থির। ফলে কি যে হবে কেউ জানে না। এরা ছড়িয়ে পড়েছে দেশের প্রায় সর্বত্র। ভয় সেখানে। সমাজকে কলুষিত করা মাদক ইয়াবা এবং যৌনতায় শেষ করার জন্য এমনিতেই কত ফাঁদ! তারপর এই বিষফোঁড়া! রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান রাজনৈতিক। আবার এখন নৈতিকও বটে। দেশ বাঁচাতে, মানুষ বাঁচাতে তাদের প্রত্যাবর্তনের বিকল্প নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কি এসব অবহিত আছেন? সরকারের মন্ত্রীরা কি বিষয়টা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন? মানুষ কিন্তু এখন আর আবেগে নেই। যারা স্বার্থপর তারা ছাড়া সবাই জানে রোহিঙ্গা এখন একটি সমস্যার নাম। এর সমাধান কোথায়? কত দূরে? জিজ্ঞাসা একটাই, রোহিঙ্গারা কবে যাবে, কখন যাবে? [email protected]
×