ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৌভাত থেকে ফেরার পথে পদ্মায় নৌকাডুবি, ৬ লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ১১:২৪, ৮ মার্চ ২০২০

বৌভাত থেকে ফেরার পথে পদ্মায় নৌকাডুবি, ৬ লাশ উদ্ধার

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ অপেক্ষাকৃত স্রোতহীন রাজশাহীর পদ্মা নদীতে বিয়ের দুটি নৌকাডুবির ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় বর জীবিত উদ্ধার হলেও এখনও কনেসহ নিখোঁজ রয়েছে অন্তত তিনজন। নৌকা ডুবির ঘটনায় নিখোঁজদের খোঁজে উদ্ধার অভিযান চলছে। দমকল বাহিনী, বিজিবি, নৌ-পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র একটি ডুবুরি দল যৌথভাবে উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। সর্বশেষ শনিবার দুপুরে একলাস আলী ও পরে রতন আলী নামের দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। বিকেলে আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ছয়জনে। শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মা নদীর ওপারে বৌভাতের অনুষ্ঠান থেকে দুটি নৌকায় তারা পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট গ্রামে ফিরছিলেন। তবে নদীতেই দুই নৌকার ধাক্কা লেগে দুটি নৌকা পদ্মায় ডুবে যায়। এরপর থেকেই অভিযানে নামে সংশ্লিষ্টরা। নৌ-পুলিশের রাজশাহী থানার ওসি মেহেদী মাসুদ জানান, শনিবার দিনভর ছয়জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। দুপুর ১টার দিকে একলাস আলী (২২) ও আড়াইটার দিকে রতন আলী (৩০) নামের দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলের পাশেই তাদের লাশ ভেসে উঠে। এর আগে সকালে চারঘাট এলাকা থেকে মনি খাতুন নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ঘটনার পরপরই এক শিশুকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করে। তবে বিকেলে আরও দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এরা হলেন, কনের চাচা শামীম (৩৫), তার মেয়ে রশ্মি (৮)। কনেসহ তিনজন এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে জানিয়েছে তাদের পরিবারের সদস্যরা। তাদের সন্ধানে উদ্ধার অভিযান চলছে। এছাড়াও ডুবে যাওয়া নৌকাও উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান নৌ পুলিশের ওসি। এখনও যারা নিখোঁজ রয়েছেন তারা হলেন, কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা (২০), তারা খালা আখি খাতুন (২৫) ও কনের ফুফাতো বোন রুবাইয়া (১৩) । শনিবার সকালে কনের চাচা শামিমের স্ত্রী মনি খাতুনের (৩০) লাশ উদ্ধার করা হয়। দুপুরে পাওয়া যায় তাদের আত্মীয় একলাস আলীর লাশ। এরপর পাওয়া গেছে কনের ভগ্নিপতি রতন আলীসহ অপর তিনজনের লাশ। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেই রতনের মেয়ে মরিয়মের (৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। আর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন রতনের স্ত্রী বৃষ্টি খাতুনকে (২০)। রাজশাহী জেলা প্রশাসক মোঃ হামিদুল হক বলেন, নিখোঁজদের উদ্ধারে শুরু থেকেই দমকল বাহিনী, বিজিবি ও নৌ-পুলিশ রাত থেকেই উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছে। সকালে তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিআইডব্লিউটিএ’র একটি ডুবুরি দল। এই নৌকা ডুবির ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলামকে প্রধান করে পাঁচসদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি সকাল থেকে তদন্ত শুরু করেছে। এছাড়াও পদ্মাপাড়ে নিখোঁজ ও হতাহতের অনুসন্ধান উদ্ধার কার্যক্রম সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। নিহতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেন জেলা প্রশাসক। এছাড়াও আহতের চিকিৎসা ব্যয় বহন করবে সরকার বলেও জানান এই সরকারী কর্মকর্তা। রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিপুর এলাকায় শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে ৩৬ যাত্রী নিয়ে দুটি নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে এক শিশু মারা যায়। বিয়ের অনুষ্ঠানের যাত্রী নিয়ে পবা উপজেলার খানপুর থেকে ডাইঙ্গেরহাট যাচ্ছিল নৌকা দুটি। রাতেই দমকল বাহিনী ও বিজিবি উদ্ধার অভিযান চালায়। খবর পেয়ে সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও রাজশাহী-৩ আসনের এমপিসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। এদিকে নৌকাডুবির ঘটনায় এখনও নিখোঁজ রয়েছে। ঘটনার পর সাঁতরিয়ে ওপারে বর উদ্ধার হলেও কনের হদিস এখনও মেলেনি। কনের নাম সুইটি খাতুন পূর্ণিমা। তিনি পবা উপজেলার ডাইঙ্গেরহাট গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। আর বরের নাম আসাদুজ্জামান রুমন (২৫)। তিনি চরখানপুরের মৃত ইনছার আলীর ছেলে। পরিবারের সদস্যরা জানায়, দুই মাস আগে তাদের রেজিস্ট্রি বিয়ে হয়েছিল। বৃহস্পতিবার তাদের বিয়ের অনুষ্ঠান হয়। শুক্রবার বৌভাতের অনুষ্ঠান শেষে তারা ফিরছিল। পদ্মায় নববধূ হারিয়ে নির্বাক বর বৌভাত অনুষ্ঠানের পরের দিন। আনুষ্ঠানিকতা শেষে নৌকায় চেপে হৈ চৈ করে নববধূ নিয়ে বাড়ি ফেরা। পরপর দুটি শ্যালো ইঞ্জিন চালিত নৌকায় অন্তত ৩৬ যাত্রী। সবাই পরিবারের আত্মীয়-স্বজন। ছিল শিশুরাও। একদিন আগেই হয়ে গেল বৌ-ভাতের অনুষ্ঠান। কিন্তু ফেরার পথের আনন্দ যে চোখের সামনেই বিষাদে পরিণত হবে এমন কী হতে পারে। নদীতেই নববধূকে হারিয়ে নিঃসঙ্গ হতে হলো নতুন বরকে! তিনি অবশ্য নদী সাঁতরে কোনরকমে জীবন রক্ষা করেছেন তবে নতুন সঙ্গী? আত্মীয় স্বজন? হিসেব মিলাতে পারছেন না বর রুমন। নির্বাক সে এখন। এর চেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা কী আর হতে পারে? তাইতো বিয়ের আনন্দ মুহূর্তেই রূপ নিয়েছে বিষাদে। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতাকে ঘিরে স্বজন আর পাড়া-প্রতিবেশীর মনে যখন আনন্দ আর উৎসবের ঘনঘটা। বর-কনের স্বপ্নের বাসরে তখনই নেমে এলো অমানিশার অন্ধকার। বর্ণিল উৎসবের রেশ না কাটতে না কাটতেই শুরু হলো শোকের মাতম! নতুন জীবনের মানেটা হারিয়ে গেল ঠিকঠাক করে শুরুর আগেই। রাজশাহীর পদ্মায় নৌকাডুবির ঘটনার পর বিয়েকে ঘিরে দুই বাড়ির দৃশ্যপট এখন এমনই শোকাবহ। স্বজন হারানোর ব্যথায় স্তব্ধ হয়ে গেছে বিয়ের ধুমধাম। কান্নার রোল পড়ে গেছে দুই পরিবারেই। নৌকাডুবির পর ভাগ্যক্রমে কোনরকমে সাঁতরে পাড়ে উঠে প্রাণে বেঁচে আছেন বর আসাদুজ্জামান রুমন। কিন্তু এখনও সন্ধান মেলেনি তার নববধূর। তিনি বেঁচে আছেন না স্রোতস্বিনী পদ্মাতেই তার সলিল সমাধি হয়েছে সে কথা জানা নেই কারও। তাইতো নদীর পাড়ে বসে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন সবাই। পঁচিশ বছরের যুবক রুমন নদীর ওপারে থাকা চরখিদিরপুর গ্রামের মৃত ইনছার আলীর ছেলে। এখনও নিখোঁজ রয়েছেন কনে সুইটি খাতুন পূর্ণিমা। তার বাড়ি রাজশাহী শহর সংলগ্ন পবা উপজেলার ডাঙ্গেরহাট গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের শাহীন আলীর মেয়ে। বৃহস্পতিবার রুমন-সুইটির বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। হাতে মেহেদির টাটকা রং না শুকোতেই হারিয়ে গেলেন নববধূ সুইটি। অল্পের জন্য রক্ষা পেল ৫শ’ লঞ্চযাত্রী স্টাফ রিপোর্টার মুন্সীগঞ্জ থেকে জানান, ঢাকার সদরঘাট থেকে ৫ শতাধিক যাত্রী নিয়ে ভোলার উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া লঞ্চ এমভি ফারহান-৬ দুর্ঘটনায় পড়েছে। পথিমধ্যে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় থেমে থাকা একাধিক বালুবাহী বাল্কহেডের সঙ্গে মুখোমুখি ধাক্কা লাগে লঞ্চটির। এতে যাত্রীবাহী লঞ্চটির সামনের অংশ ছিদ্র হয়ে যায়। আতঙ্কিত যাত্রীরা লঞ্চটি নিরাপদ স্থানে থামানোর জন্য বললেও লঞ্চটি না থামিয়ে উল্টো লঞ্চের স্টাফরা যাত্রীদের মারধর করে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
×