ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রান্তিক গ্রাহকের স্বার্থে সর্বনিম্ন বিদ্যুত লোড এক কিলো নির্ধারণ

প্রকাশিত: ১১:১৯, ৮ মার্চ ২০২০

প্রান্তিক গ্রাহকের স্বার্থে সর্বনিম্ন বিদ্যুত লোড এক কিলো নির্ধারণ

রশিদ মামুন ॥ প্রান্তিক গ্রাহকদের সুরক্ষায় সর্বনিম্ন বিদ্যুত সংযোগের লোড দুই কিলোওয়াট থেকে নামিয়ে এক কিলোওয়াট নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আবাসিক গ্রাহকদের দুই কিলোওয়াট ক্ষমতার কম বিদ্যুত সংযোগ দিত না বিতরণ প্রতিষ্ঠানগুলো। এখন প্রান্তিক গ্রাহকরা চাপিয়ে দেয়া ডিমান্ড চার্জের হাত থেকে মুক্তি পাবে। প্রতি কিলোওয়াটের ডিমান্ড চার্জ প্রতি মাসে ৩০ টাকা হিসেবে ধরে বিদ্যুত বিলের সঙ্গে যোগ করা হয়। কোন গ্রাহকের বিদ্যুত সংযোগের ক্ষমতা যদি এক কিলোওয়াট হয় সেক্ষেত্রে বিদ্যুত বিলের সঙ্গে তাকে প্রতিমাসে ৩০ টাকা দিতে হবে। আবার কোন গ্রাহকের বিদ্যুত সংযোগটির ক্ষমতা দুই কিলোওয়াট হলে তাকে বিলের সঙ্গে ৬০ টাকা ডিমান্ড চার্জ দিতে হবে। এখন দেশের মোট গ্রাহকের মধ্যে এক কোটি ৩৮ লাখ গ্রাহক রয়েছেন। যাদের প্রতিমাসে বিদ্যুত ব্যবহারের পরিমাণ ৫০ ইউনিটের নিচে। এর মধ্যে এক কোটি ২১ লাখ গ্রাহক রয়েছেন পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে আর ১৭ লাখ গ্রাহক রয়েছেন বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডিপিডিসি), ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) এবং নর্দার্ন ইলেক্ট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) এলাকায়। এদের কারও বিদ্যুতের চাহিদা এক কিলোওয়াটের উপরে নয়। কিন্তু প্রতি মাসেই বিতরণ কোম্পানিগুলো এসব গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এত দিন প্রয়োজন না হলেও গ্রাহককে দুই কিলোওয়াটের নিচে কোন লাইন দেয়া হতো না। মূলত বাড়তি ডিমান্ড চার্জ আদায় করার জন্যই বিতরণ কোম্পানিগুলো এই কৌশল বেছে নিয়েছিল। কিন্তু এখন সেই সুযোগ বন্ধ করে দিল বিইআরসি। কমিশন বলছে সব কোম্পানিই গ্রাহকের কাঁধে অতিরিক্ত লোডের বিদ্যুত সংযোগ চাপাতে চায়। গ্রাহকের তরফ থেকে দীর্ঘদিন এই অভিযোগ ছিল। মূলত বিদ্যুত ক্রয় বিক্রয়ের বাইরে ডিমার্ড চার্জের অর্থ বিতরণ কোম্পানির আয় হিসেবে যোগ হয়। আবার বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার ক্ষেত্রেও প্রতি কিলোওয়াটের জন্য নির্ধারিত পরিমাণ অর্থ দিতে হয়। যে অর্থও বিতরণ কোম্পানির কোষাগারে থাকে। ফলে বিদ্যুত সংযোগ নেয়ার সময় এককালীন এবং প্রতিমাসে গ্রাহককে অতিরিক্ত ডিমান্ড চার্জের জন্য বাড়তি অর্থ গুনতে হয়। বিইআরসি আদেশে বলছে, গ্রাহকের বিদ্যুত সংযোগের জন্য সঠিকভাবে লোড নির্ধারণ করতে হবে। কোন গ্রাহকের যদি এক কিলোওয়াটের সংযোগ প্রয়োজন হয় তাহলে এক কিলোওয়াটের লাইনই দিতে হবে। গ্রাহককের ওপর কোন অবস্থায় অতিরিক্ত লোড চাপানো যাবে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন নতুন করে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রতিপালন হলে পুরাতন যেসব গ্রাহক রয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হওয়া প্রয়োজন। বলা হচ্ছে প্রান্তিক এক কোটি ৩৮ লাখ গ্রাহকের সকলের লোডের সঠিক মাত্রা নির্ধারণ করা জরুরী। না হলে বিতরণ কোম্পানি এখনকার মতোই এসব গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করবে। কোন গ্রাহক বরাদ্দ লোডের বিপরীতে বাড়তি লোড ব্যবহার করলে বিতরণ কোম্পানিগুলো লোড পুনর্নির্ধারণ করে গ্রাহকের কাছ থেকে বাড়তি অর্থ আদায় করে। কিন্তু কোন গ্রাহকের লোড কমানোর দরকার হলে বিতরণ কোম্পানি তা কমায় না। এখন দেশের ৯৪ ভাগ মানুষের ঘরে বিদ্যুত সুবিধা রয়েছে। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সব মানুষের ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হবে। সরকার চাইছে প্রান্তিক মানুষকে বিদ্যুত সুবিধার আওতায় এনে তাদের জীবন মান উন্নয়ন করতে। সঙ্গত কারণে প্রান্তিক গ্রাহকের সুবিধায় তাদের প্রিপেইড মিটারের আওতামুক্ত রাখা হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে প্রান্তিক গ্রাহকদের বিষয়টি বিবেচনা করা হয়েছে। মাসে এই শ্রেণীর গ্রাহকের বিদ্যুত বিলে অতিরিক্ত মাত্র পাঁচ থেকে ছয় টাকার বেশি যোগ হবে না।
×