ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আকর্ষণীয় পাটপণ্য মেলা রাজধানীতে

পুরনো পাটে নতুন যুগের পণ্য, সফল নিরীক্ষা

প্রকাশিত: ১১:১৩, ৮ মার্চ ২০২০

পুরনো পাটে নতুন যুগের পণ্য, সফল নিরীক্ষা

মোরসালিন মিজান ॥ পাট আর আগের অবস্থায় নেই। সোনালি সেইসব দিন কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। কিন্তু শুধু তো আক্ষেপ করলে চলবে না। পাট নিয়ে নতুন যুগে প্রবেশের চ্যালেঞ্জটিও গ্রহণ করতে হবে। এবং আশার কথা যে, অনেক উদ্যোক্তাই ব্যক্তিগতভাবে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন। পাটের ব্যবহার বাড়াতে নানা নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তাদের সৃজনশীলতা উদ্ভাবনী ক্ষমতা সত্যি আশাবাদী করে। বহুমুখী পাটপণ্য মেলা ঘুরে আশাবাদ আরও বেড়েছে, বলতে হবে। পাট মন্ত্রণালয় আয়োজিত মেলা এখন চলছে রাজধানীর অফিসার্স ক্লাব প্রাঙ্গণে। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া মেলায় বেশ কিছু স্টল। সব স্টলে পাটপণ্য। ব্যক্তি উদ্যোক্তারা আধুনিক রুচি ও বহুবিধ ব্যবহারের বিষয় মাথায় রেখে পণ্য তৈরি করেছেন। যত যতœ তার তুলনায় দাম অনেক কম। সব মিলিয়ে আকর্ষণীয়। মেলায় পাটের তৈরি শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। নারীদের জন্য দারুণ সব শাড়ি ওড়না কামিজ। এমনকি সুন্দর জুতো। পুরুষের পাঞ্জাবি ফতুয়া। কোনটি শুধুই পাটে তৈরি। কোনটি তৈরি করা হয়েছে পাট ও সুতোর সংমিশ্রণে। আছে দরজা জানলার পর্দাও। বিভিন্ন ধরনের কার্পেট শতরঞ্জি, কুশন কাভার পাওয়া যাচ্ছে। ট্র্যাভেল ব্যাগ, হ্যান্ড ব্যাগ, ফ্লাওয়ার ভাসসহ ঘর সাজানোর নানা সামগ্রী আছে। যার যা পছন্দ কিনছেন। দেখছেন। আফনান জুটেক্স নামের একটি স্টলে গিয়ে পাওয়া গেল ছেলেদের পাঞ্জাবি ও ফতুয়া। স্টল মালিক মাসুদ জানান, বাংলাদেশে তিনিই প্রথম জুট ও কটনে তৈরি বিশেষ ফেব্রিক্স দিয়ে পাঞ্জাবি ফতুয়া তৈরি করেছেন। তার স্টলে সুন্দর কিছু পর্দাও দেখা গেল। যারা ব্যতিক্রম কিছু খুঁজে বেড়ান তাদের ভীষণ পছন্দ হবে। ‘ডিজাইন বাই রুবিনা’ নামের স্টলে মেয়েদের শাড়ি। সুতো ও পাট দিয়ে তৈরি করা শাড়ি শুধু হাতে নিয়ে দেখতেও ভাললাগে। শাড়িতে দেশীয় মোটিফ ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। সেইসঙ্গে ধারণ করেছে অদ্ভুত আভিজাত্য। পাটের তৈরি ওড়নাগুলোও চমৎকার। উদ্যোক্তা জানালেন, এত যতেœ গড়া শাড়ির দাম মাত্র ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা। এসব সাধারণ শাড়ির মতো ব্যবহার করা যাবে। ধোয়াও যাবে বলে জানান তিনি। আরেক নারী উদ্যোক্তা ইশরাত জাহান ‘কে টু কে ওয়্যারস ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়েছেন। এখান থেকে পাট ব্যবহার করে ট্রলিব্যাগ তৈরি করা হচ্ছে। ইশরাতই প্রথম এ নিরীক্ষা চালিয়েছেন। সে কথা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের তৈরি ট্রলিব্যাগ মজবুত। টেকসই। তেমনি কম দাম। মাত্র ২,২০০ থেকে ২,৯০০ টাকা। কিন্তু দুঃখ করে তিনি বলেন, অনেকে আমাদের সৃজনশীলতার মূল্য দিতে চান না। বুঝতে চান না। একটু বুঝলে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আরও ভাল করা সম্ভব বলে জানান তিনি। পাটপণ্য মেলায় পাওয়া গেল জুতোও। নারীদের পায়ের মাপ অনুযায়ী খুবই দৃষ্টিনন্দন স্যান্ডেল তৈরি করেছে সোনালি বয়ন শিল্প নামের একটি প্রতিষ্ঠান। তাদের তৈরি স্যান্ডেল দেখে মনেই হয় না, পাটের তৈরি। অথচ দাম মাত্র ৩০০ টাকা! স্টলের বিক্রয়কর্মী শান্ত জানান, ইংল্যান্ড ও জাপানসহ কয়েকটি দেশে জুতো রফতানিও করছেন তারা। পাট দিয়ে তৈরি হচ্ছে কম্পোজিটও। এটি পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের অবদান। সরকারী স্টলে থাকা সিনিয়র সাইন্টিফিক অফিসার মনিরুজ্জামান জানান, তাদের উদ্ভাবিত কম্পোজিট ঢেউ টিনের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তৈরি করা যাচ্ছে আসবাবও। তবে সবচেয়ে বেশি অবাক হতে হলো পাটের তৈরি পলিথিন ব্যাগ দেখে। বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের স্টলে রাখা পলিথিন হাত দিয়ে অনেকেই ছুঁয়ে দেখছিলেন। পাট দিয়ে এমন পচনশীল ব্যাগ তৈরি করা যায়, না দেখলে আসলেই অনুমান করা কঠিন। বিক্রয় প্রতিনিধি সাজাহান জানান, এ ব্যাগের কোনটি পাঁচ মিনিটের মধ্যে পঁচে যাবে। কোনটি টিকবে ছয় মাস। যার যেটি প্রয়োজন সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী দুই আড়াই মাস পর বাজারে ব্যাগগুলো পাওয়া যেতে পারে বলে জানান তিনি। মেলা ঘুরে পাট নিয়ে আজকের প্রজন্মের ভাবনাও জানা গেল এদিন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের শিক্ষার্থীরা সোনালি আঁশ নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। ‘ক্ষ’ নামের একটি স্টলে গিয়ে তাদের খোঁজ পাওয়া গেল। বিজিএমইএ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফাহমিদা জহির জানান, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশকে তুলে ধরতেই নিজেদের পাট নিয়ে কাজ করছেন তারা। বিভিন্ন থিম পোশাকে ফুটিয়ে তুলছেন তারা। আরেকজন ডিজাইনার কানন জানান, নতুন অনেক কিছু করতে চান তারা। কিন্তু কোয়ালিটি ফেব্রিকসের অভাব আছে। তার চেয়েও বেশি অভাব পৃষ্ঠপোষকতার। পৃষ্ঠপোষকতা পেলে, প্রচার পেলে বাংলাদেশের পাট দিয়ে বিশ্বকে এখনও মুগ্ধ করা সম্ভব বলে মনে করেন তিনি। পাঁচ দিনব্যাপী মেলা আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত চলবে।
×